ঢাকা, 28 নভেম্বর: ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণা কনসাসনেস-এর (ইসকন) বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে কোনও পদক্ষেপ করল না বাংলাদেশের হাইকোর্ট ৷ এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক, আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন একদল আইনজীবী ৷
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকালে সোশাল মিডিয়ায় আওয়ামী লীগ-এর তরফে একটি বিবৃতি পোস্ট করা হয় ৷ সেখানে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারিতে অন্যায্য বলে উল্লেখ করেছেন ৷ তাঁর মুক্তির দাবিতে সরব হয়েছেন ৷
আওয়ামী লীগ নেত্রী জানান, "সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের একজন শীর্ষ নেতাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, অবিলম্বে তাঁকে মুক্তি দিতে হবে ৷ চট্টগ্রামে মন্দির পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে মসজিদ, মাজার, গির্জা, মঠ এবং আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি আক্রমণ করে ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সকল সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ৷" |
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিবৃতিঃ
— Awami League (@albd1971) November 28, 2024
চট্টগ্রামে একজন আইনজীবীকে হত্যা করা হয়েছে, এই হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করে দ্রুত শাস্তি দিতে হবে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। একজন… pic.twitter.com/b7yjlyj9Et
দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকালে সেই আবেদন খারিজ করেছে হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মেহবুব এবং বিচারপতি দেবাশিস রায়চৌধুরীর বেঞ্চ ৷ সরকার ইসকন-এর বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করেছে, তা জানতে চেয়েছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ ৷
সোমবার, 25 নভেম্বর ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ৷ তিনি সম্মিলত সনাতনী জাগরণ জোট-এর মুখপাত্র ৷ আগে বাংলাদেশের ইসকন-এর সদস্য ছিলেন চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ৷ হিন্দু ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ ওঠে ৷ চট্টগ্রামের একটি আদালতে তিনি জামিনের আবেদন করলে তা খারিজ হয়ে যায় ৷
এরপরই পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে ৷ চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের অনুগামীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ৷ এর মধ্যে মৃত্যু হয় সহকারী সরকারি আইনজীবী সইফুল ইসলাম আলিফের ৷
ইসকন-এর বিরুদ্ধে পিটিশন দাখিল
এই অবস্থায় বুধবার সুপ্রিম কোর্টের 10 জন আইনজীবীর তরফে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ইসকন-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার আবেদন জানিয়ে নোটিশ পাঠান আইনজীবী আল মামুন রাসেল ৷ তাঁরা ইসকন-কে 'মৌলবাদী সংগঠন' বলে দাবি করেন ৷ পাশাপাশি আইনজীবী সইফুল ইসলামের হত্যার ঘটনায় যুক্তদের সাজার দাবিও তোলেন তাঁরা ৷
দ্য ঢাকা ট্রিবিউন সংবাদপত্রে এই নোটিশ প্রকাশিত হয়েছে ৷ সংবাদপত্রে নোটিশ থেকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, "বাংলাদেশে ইসকন একটি মৌলবাদী সংগঠন ৷ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করতে তারা প্ররোচনামূলক কাজকর্ম করে চলেছে ৷" এর সঙ্গে প্রাক্তন বাংলাদেশি গোয়ান্দা আধিকারিকের লেখা বইয়ের অংশও তুলে ধরা হয়েছে ওই নোটিশে ৷ তাতে ইসকন-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নানারকম ধর্মীয় অনুষ্ঠান করে ৷ এইভাবে ভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সংঘাত বাধানো তাদের উদ্দেশ্য ৷ ইসকন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের উপর তাদের বিশ্বাস চাপিয়ে দেয় ৷
রাসেলের নোটিশটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, আইন ও বিচার মন্ত্রক এবং পুলিশের আইজি-র কাছে পাঠানো হয় ৷ এরপরই 2009 সালের অ্যান্টি-টেরোরিজম অ্যাক্টের আওতায় ইসকন-কে সঙ্গে সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু হয় ৷
বুধবার ইসকন-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবিতে আইনজীবীরা বাংলাদেশ হাইকোর্টের কাছে আবেদন জানায় ৷ এই মর্মে তাঁরা কয়েকটি সংবাদপত্রের প্রকাশিত রিপোর্ট আদালতে পেশ করে ৷ এদিন আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জানতে চায়, ইসকন-এর সাম্প্রতিক কাজকর্মের প্রেক্ষিতে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে ৷
এদিন দিনের শুরুতে বিচারপতি ফারাহ মেহবুব এবং বিচারপতি দেবাশিস রায়চৌধুরীর বেঞ্চে মামলার শুনানি শুরু হয় ৷ দুই বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে মামলার সমর্থনে তথ্য চান, জানিয়েছে দ্য ডেইলি স্টার ৷
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদউদ্দিন বেঞ্চকে জানায়, আইনজীবী সইফুল ইসলাম আলিফের মৃত্যুতে এবং ইসকন-এর বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে ৷ 33 জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ এই সময় বেঞ্চ আশা প্রকাশ করে যে, সরকার নিশ্চয় দেশের আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সজাগ রয়েছে ৷
সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি এবং তাঁকে জামিন না দেওয়ার ঘটনায় ভারত কড়া সমালোচনা করে ৷ এর উত্তরে বাংলাদেশ বুঝিয়ে দেয়, ভারত যেন প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলায় ৷ এটা দু'দেশের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ নয় ৷ এছাড়া চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের বিষয়টি এখন আদালতের বিচার্য ৷ এক্ষেত্রে সরকারের কিছু করার নেই ৷
বাংলাদেশের ইসকন-ও এই ঘটনার কড়া সমালোচনা করে ৷ তারা কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি জানায়, হিন্দুরা যেন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে পারে ৷ চিন্ময়কৃষ্ণ দাস সনাতনী নেতা হলেও তাঁর বিচার যেন নিরপেক্ষ হয় ৷ একটি বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, "আমরা এই ঘটনায় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ৷ চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করছি ৷ এর পরবর্তী বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের উপর যে হিংসা, হামলার ঘটনা ঘটছে, তারও সমালোচনা করছি ৷"