কলকাতা, 19 এপ্রিল: ফ্যাটি লিভার এই রোগটার সঙ্গে আমরা বেশ পরিচিত। তবে পরিচিত হলেও ঠিকমত চিকিৎসা করে কতজন? কিন্তু এই রোগই ডেকে বড় বিপদ ৷ যার নাম সিরোসিস অফ লিভার। যার চিকিৎসা অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ । তাই বিশ্ব লিভার দিবসে নিজেকে সুস্থ রাখতে ইটিভি ভারত যোগাযোগ করল গ্যাসট্রোএন্টারোলজিস্ট চিকিৎসক দেবাশিস দত্তের সঙ্গে। সিরোসিস অফ লিভার কী। কীভাবে সেই রোগ থেকে নিজেকে সুস্থ রাখা যায় সেই পরামর্শ দিলেন চিকিৎসক।
সিরোসিস অফ লিভার কী ( What Is Cirrhosis of Liver)?
চিকিৎসক জানান, "সিরোসিস অফ লিভার হল লিভার রোগের শেষ পর্যায়। এখানে থেকে ফিরে আসার কোনও উপায় নেই । এর মানে হল লিভার সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । আসলে প্রথমে ফ্যাটি লিভার হল, অর্থাৎ লিভারটি বড় হয়। তারপর লিভার শক্ত হয়ে যায় । তখনও যদি আমরা সতর্ক না-হই তাহলে লিভারটি ফেটে যায় ৷ একেই বলে সিরোসিস অফ লিভার । অতএব ফ্যাটি লিভার হল সিরোসিস অফ লিভারের প্রথম ধাপ ।
বর্তমানে কেন বাড়ছে এই রোগের সংখ্যা ?
চিকিৎসকের মতে, বর্তমানে আমাদের লাইফ স্টাইল বদল হয়েছে সেই কারণে ফ্যাটি লিভারের একটি প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে । বহু মানুষ ইউএসজি করিয়ে ফ্যাটি লিভার ধরা পড়লেও তারা যথাযথ চিকিৎসা করান না । চিকিৎসক বলেন, "মানুষের কোনও ধারণা নেই এই ফ্যাটি লিভার থেকে ঠিক কী হতে পারে । এই ফ্যাটি লিভার থেকেই মানুষের লিভার সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে ।
কীভাবে বুঝবেন ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত আপনি ?
চিকিৎসক জানান, লিভারের সমস্যা খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে না । একদম শেষ মুহূর্তে বোঝা যায় । লিভারের অসুখের প্রথম লক্ষণ হচ্ছে বমি পাওয়া এবং মুখটা টক হয়ে যাওয়া । অন্যদিকে সিরোসিস অফ লিভারের লক্ষণ হিসেবে চিকিৎসক জানান হাত পা ফুলে যাওয়া। চোখের চারপাশ ফুলে যায় । মল-মূত্রের সমস্যা হবে, রঙ পরিবর্তন হতে পারে । পেটের উপর শিরা-উপশিরা ফুলে যায়। শরীর চুলকানি হতে পারে । তবে এই গুলি প্রাথমিক লক্ষণ। বিষয়টা গুরুতর হলে, আচকাই রক্তক্ষরণ হয় শরীরে । হিমগ্লোবিন কমে যায় । আরেকটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হল লিভার মূলত আমাদের শরীরের কোনটা ভালো এবং কোনটা খারাপ সেটি বিবেচনা করে । এই রোগ হলে সেই বিবেচনাটা বন্ধ হয়ে যায় । তখন শরীরে দুষিত পদার্থ জমতে থাকে । এর ফলে পোর্টাল ভেনটাকে চেপে ধরে লিভার । সেই জায়গাটা যখন তখন বাস্ট করতে পারে । তাই যাতে সেরকম না হয় তাই আমরা ওই জায়গাটা বেঁধে দিয়ে থাকি । এই বাস্ট হলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না ।
কাদের বেশি দেখা যাচ্ছে এই রোগে আক্রান্ত ?
চিকিৎসকের কথায়, অনেক ছোটোরা ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হচ্ছে । 10-14 বছরের মধ্যে এই ফ্যাটি লিভার দেখতে পাওয়া যাচ্ছে বেশি। তবে সিরোসিস অফ লিভারে আক্রান্ত হচ্ছে মহিলাদের থেকেও বেশি পুরুষরা । চিকিৎসকের মতে, বর্তমানে আবার পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে ব্যায়াম করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু তার থেকেও বেশি তাদের মধ্যে দেখা যায় নেশা করার পরিমাণ। ফলে সেখানেই লিভারটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
লিভার ভালো রাখার উপায় কী ?
চিকিৎসক বলেন, ফ্যাট জাতীয় খাওয়ার যতটা কম খাওয়ার যায় তত ভালো। তার সঙ্গে টাটকা শাক-সবজি ও ফল খেতে হবে। ফাইবার জাতীয় খাওয়ার মানে আটা, ওটস, কনফ্লেক্স বেশি খেতে হবে । অতিরিক্ত মাত্রায় জল খেতে হবে। আর সব থেকে বেশি দরকার হল শারীরিক ব্যায়াম । মানুষের শারীরিক কাজকর্ম কমে যাওয়ার ফলে শরীরে ফ্যাট জমছে ৷ যার ফলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সর্বশেষ সেটি তার নাম হচ্ছে নেশা। এখন আমরা রোগীর ইতিহাস নিতে মাঝেমধ্যে লজ্জা পাই । মানুষের মধ্যে এত পরিমাণ মদ্যপানের আসক্তি বেড়েছে যা লিভার নষ্ট করা অন্যতম।
সিরোসিস অফ লিভারের চিকিৎসা কী ?
চিকিৎসকের কথায়, সিরোসিস অফ লিভার থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ সুস্থ করার একমাত্র লিভার প্রতিস্থাপন । কিন্তু এই লিভার প্রতিস্থাপন করে খুব কম কেস সদর্থক হয়েছে । আর অন্যতম বিষয় হল এই লিভার প্রতিস্থাপন অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ । ফলে খুব কম সংখ্যক মানুষ এই চিকিৎসা করাতে পারেন । তাই ওষুধ দিয়েই এর চিকিৎসা করে থাকি। তবে সিরোসেস অফ লিভার থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই ফ্যাটি লিভার হওয়ার সময় থেকে নিজেকে সতর্ক করুন ৷ অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন ।
আরও পড়ুন: