কলকাতা: চা এবং কফি বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়গুলির মধ্যে একটি । সারা বিশ্বের মানুষ বিশেষ করে ভারতে, চা বা কফি ছাড়া যেন সকাল শুরু হয় না ৷ ঘুম থেকে ওঠার পর চা বা কফি পান না-করলে অলসতা কাটে না ৷ এমনকী অনেকে সারাদিনে কয়েক কাপ চা বা কফি পান করে থাকেন ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কম-বেশি উভয় পানীয়েই ক্যাফিন থাকে, যা শুধু শরীর ও মস্তিষ্ককে সতেজ রাখতেই সাহায্য করে না, অনেক সময় অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করলে তা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর । এগুলি ছাড়াও এই দুই পানীয়তে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য বা ক্ষতিকারক উপাদান রয়েছে যা স্বাস্থ্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে । এমতাবস্থায় প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে, চা-কফির মধ্যে কোনটি পান করা কম ক্ষতিকর এবং স্বাস্থ্যের জন্য কোনটি ভালো ।
নয়াদিল্লির খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডাঃ দিব্যা শর্মা বলেন, "চা এবং কফি উভয়েরই স্বাস্থ্যের জন্য নিজস্ব সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে । যদি ক্যাফিনের মৃদু প্রভাবের সঙ্গে একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প চান তবে চা একটি ভালো বিকল্প হতে পারে । গ্রিন টি বিশেষ করে ভেষজ চা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং কম ক্যাফিন থাকে । অন্যদিকে যদি দ্রুত শক্তির উৎস খুঁজছেন ও আপনার বিপাক ক্রিয়া দ্রুত করতে চান, তাহলে কফি আপনার জন্য উপকারী হতে পারে ।"
তিনি জানান, চা এবং কফি উভয়েই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং পলিফেনল রয়েছে ৷ যা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে । যদিও দুটিরই কিছু অসুবিধাও রয়েছে ।
চা এবং কফির সুবিধা ও অসুবিধা (Advantages and disadvantages of tea and coffee):
ডাঃ দিব্যা শর্মা জানান, বিভিন্ন ধরণের চা এবং কফির বিভিন্ন সুবিধা ও অসুবিধা থাকতে পারে যার মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ ।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর: চায়ে ক্যাটেচিন এবং ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে ৷ যা শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিক্যাল কমাতে সাহায্য করে । এছাড়াও ক্যানসার ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে ।
কম ক্যাফেইন: চায়ে কফির চেয়ে কম ক্যাফিন থাকে ৷ যার কারণে এটি শরীরে হালকা প্রভাব ফেলে এবং ঘুমের ক্ষতি না করেই সতেজতা প্রদান করে ।
ওজন কমাতে সহায়ক: কিছু ধরণের চা যেমন গ্রিন-টি মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে ।
মস্তিষ্ককে শিথিল করে: চায়ে এল-থেনাইন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা মস্তিষ্ককে শান্ত করে এবং মানসিক চাপ কমায় ।
চায়ের অসুবিধা (Disadvantages of Tea):
অ্যাসিডিটি: অতিরিক্ত পরিমাণে চা পান করলে অ্যাসিডিটি ও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে ।
দাঁতে দাগ: একটানা চা পান করলে দাঁতে হলুদ দাগ পড়তে পারে ।
কফির উপকারিতা (Benefits Of Coffee):
শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক: কফিতে উচ্চ পরিমাণে ক্যাফিন থাকে ৷ যা মস্তিষ্ককে সজাগ থাকতে এবং শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে । এটি অলসতা দূর করে ও কাজে মনোনিবেশ করতেও বড় ভূমিকা রাখে ৷
ভালো বিপাক: কফি বিপাককে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে ৷ যা ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে ।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়: নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে নিয়মিত কফি পান টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে ৷ কারণ এটি শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় ।
পারকিনসন্স রোগে উপকারী: কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কফি পান করলে পারকিনসন্স রোগের ঝুঁকি কমে যায় ।
কফির অসুবিধা
ঘুমের ব্যাঘাত: কফিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফিন থাকে ৷ যা রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় এবং অনিদ্রার কারণ হতে পারে ।
উদ্বেগ: অতিরিক্ত পরিমাণে কফি পান করলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় যা উদ্বেগ ও নার্ভাসনেস সৃষ্টি করতে পারে ।
অ্যাসিডিটির সমস্যা: অতিরিক্ত কফি পান করলে পেটে অ্যাসিডিটি এবং অম্বলের সমস্যা বাড়তে পারে ।
ডাঃ দিব্যা শর্মা বলেন, "চা হোক বা কফি, উভয়েরই নিজস্ব সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে । আপনার পছন্দ অনুযায়ী এগুলি বেছে নিতে পারেন তবে এটি শুধুমাত্র সুষম পরিমাণে খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ । যে কোনও কিছুর অতিরিক্ত সেবন ক্ষতিকর হতে পারে । বিশেষ করে যদি একটানা বা দিনে কয়েকবার চা এবং কফি পান করার অভ্যাস করে ফেলেন, তাহলে তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতি করতে পারে । অতএব আপনার শরীরের প্রয়োজন অনুসারে এই পানীয়গুলি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । যতদূর সম্ভব, দিনে দুই থেকে তিন কাপের বেশি চা বা কফি পান করা এড়িয়ে চলা উচিত । যারা অতিরিক্ত পরিমাণে চা বা কফি পান করেন এবং ক্রমাগত অ্যাসিডিটি, মাথাব্যথা বা অন্য যেকোনও ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত ।"
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য শুধুমাত্র ধারণা আর সাধারণ জ্ঞানের জন্যই লেখা হয়েছে ৷ এখানে উল্লেখিত কোনও পরামর্শ অনুসরণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ৷ যদি আগে থেকেই কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে থাকে, তা আগেই চিকিৎসককে জানাতে হবে ৷)