হায়দরাবাদ: সুস্বাস্থ্য় সকলেই পেতে চায় ৷ কিন্তু অসুস্থ হওয়া বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা হওয়াটাও খুব সাধারণ ব্যাপার ৷ ক্রমবর্ধমান বয়স, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, আবহাওয়ার পরিবর্তন বা কোনও বিশেষ অঙ্গ বা সিস্টেমে সমস্যা বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে রোগের আকারে দেখা যায় । আমরা সকলেই জানি যে কোনও রোগ শরীরে বাসা বাঁধলে তার লক্ষণগুলি কমবেশি দেখা যায় । কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু রোগ হলেই নয়, শরীরের কোনও গোলযোগ হলে, দুর্বলতা বা রোগের প্রতি শরীর বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়লে শরীরে এর লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে । এমতাবস্থায় সেই লক্ষণগুলি বোঝা এবং সেগুলি থেকে পরিত্রাণের প্রচেষ্টা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ যাতে সময়মতো রোগ বা সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কমানো যায় ৷ প্রাথমিক পর্যায়ে যদি চিকিৎসা করা হয় তবেই এটি নিরাময় করার চেষ্টা করা যেতে পারে।
নয়াদিল্লির প্রীতমপুরার জেনারেল ফিজিশিয়ান ডাঃ কুমুদ সেনগুপ্ত বলেন, "কোনও রোগ হোক বা শরীরে যে কোনও ধরনের অস্বস্তি, এর লক্ষণ শরীরে প্রকাশ পেতে শুরু করে । যা হতে পারে কোনও অনিয়ম ৷ কিন্তু কখনও তথ্যের অভাবে আবার কখনও অলসতার কারণে উপসর্গগুলি অনুভব করলেও অনেকে উপেক্ষা করে থাকেন ।"
সময়মতো লক্ষণগুলি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ: চিকিৎসক বলেন, "যদি রোগটি তাড়াতাড়ি সনাক্ত করা যায় এবং সময়মতো ওষুধ ও চিকিৎসা শুরু করা হয়, তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগ যত গুরুতরই হোক না কেন, এটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হয় । এছাড়া শরীরে রোগ বা সমস্যার কারণে অস্বস্তি ও সমস্যাও এড়ানো যায় । কিন্তু যদি রোগের লক্ষণগুলি উপেক্ষা করা হয় এবং চিকিৎসা দেরি হয়, তবে কখনও কখনও রোগটি গুরুতর প্রভাব বা এমনকী মারাত্মক অবস্থার কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।"
তিনি আরও বলেন, "স্বাস্থ্যের সমস্যা নির্দেশ করে এমন লক্ষণগুলি সনাক্ত করা এবং ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পরে সময়মত ব্যবস্থা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।"
মনোযোগের লক্ষণ: ডাঃ কুমুদ সেনগুপ্তের মতে, সুস্থ না-থাকার কিছু লক্ষণ নিম্নরূপ ।
ক্রমাগত ক্লান্তি: ক্রমাগত ক্লান্তি একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে । পর্যাপ্ত ঘুম হওয়া সত্ত্বেও আপনি যদি সবসময় ক্লান্ত থাকেন, তবে এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে । এই সমস্যা রক্তস্বল্পতা, থাইরয়েড ডিসঅর্ডার, ডায়াবেটিস বা বিষণ্ণতার মতো রোগের সমস্য়া হতে পারে ৷
ত্বকের পরিবর্তন: ত্বকে হঠাৎ দাগ, চুলকানি, ফুসকুড়ি বা রঙের পরিবর্তনও স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে । এটি অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিতে অ্যালার্জি, সংক্রমণ বা ব্যাঘাতের লক্ষণ হতে পারে । ত্বকের সমস্যা উপেক্ষা করা উচিত নয় তারজন্য একজন ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত ।
দ্রুত ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস: কোনও নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই দ্রুত ওজন বৃদ্ধি বা কমে যাওয়াও স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে । এটি থাইরয়েড, ডায়াবেটিস, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা অন্যান্য গুরুতর রোগের ফলাফল হতে পারে । কোনও কারণ ছাড়াই যদি আপনার ওজন পরিবর্তন হয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।
ঘন ঘন সর্দি বা কাশি: যদি ঘন ঘন সর্দি বা কাশিতে বিরক্ত হন তবে এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার লক্ষণ হতে পারে । দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের কারণে আপনি সহজেই সংক্রমণের শিকার হতে পারেন । এটিকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ।
ঘুমের সমস্যা: আপনি যদি ঘুমাতে না-পারেন বা ঘুমের সময় বারবার জেগে যান তবে এটিও স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে । ভালো ঘুমের অভাবে আপনার শরীর ও মস্তিষ্ক ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, যা অন্যান্য সমস্যারও কারণ হতে পারে । ফলত আপনার ঘুমের ধরন উন্নত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ।
পেটের সমস্যা: বারবার পেটে ব্যথা, গ্যাস, বদহজম বা পেটের যে কোনও ধরনের সমস্যা আপনার পরিপাকতন্ত্রের ব্যাঘাতের লক্ষণ হতে পারে । এই সমস্যাটিও গুরুতর হতে পারে, যেমন ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) বা পেটের আলসার ইত্যাদি । আপনার যদি ক্রমাগত পেটের সমস্যা হয় তবে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন ।
মানসিক চাপ: ক্রমাগত মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা হতাশাও আপনার স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে । মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ । আপনি যদি মানসিক চাপ অনুভব করেন তবে আপনার সময়মতো একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত ।