হায়দরাবাদ, 24 মার্চ: দুবছর আগেও অতিমারি করোনা মানব জীবনে যতটা আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল ততটাই আতঙ্ক তৈরি করেছিল যক্ষ্মা রোগ ৷ করোনার মতোই যক্ষ্মা সংক্রামক রোগ ৷ অনেকের মনে এই ধারনা তৈরি হয়েছিল, করোনার কারনেই যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে ৷ আবার অনেকের মনে হয়েছিল, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সুস্থ হওয়ার পরেও শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশি দেখা গিয়েছে ৷ তবে করোনার সঙ্গে যক্ষ্মার রোগের কি আদৌ কোনও যোগসাজশ রয়েছে, বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসে পথ দেখালেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের পালমোনোলজিস্ট কৌশিক চৌধুরী ৷
কোভিড ভাইরাস ও যক্ষ্মা রোগের মধ্যে কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, "না, সরাসরি কোভিডের সঙ্গে টিবি বা যক্ষ্মা রোগের কোনও সম্পর্ক নেই ৷ তবে যাদের লাং ফাইব্রোসিস (ফুসফুসের রোগ) বা ফুসফুসে সমস্যা দেখা দিয়েছিল কোভিডের কারণে, তাঁদের যদি টিবি বা যক্ষ্মা হয় তাহলে সেটা বিপদজনক ৷ আর এর উল্টোটাও সত্য ৷"
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে আসে যক্ষ্মা বা টিবি এবং করোনা এই দুই রোগই সংক্রমণের কারণে হয়। সংক্রামক ব্যাধি হিসেবে এই দুই রোগ নির্ণয় কীভাবে করা যায় ? চিকিৎসক বলেন, "কোভিড আরএনএ ভাইরাসের কারণে এবং টিবি হয় মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিবি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে ৷ ফলে কোনও ব্যক্তি কোভিডে আক্রান্ত হলে রোগীর গলা এবং নাকের সোয়াব নিয়ে আরটিপিসিআর সার্স কভ 2 পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয় ৷ অন্যদিকে, যক্ষ্মা বা টিবি রোগ নির্ণয় করা হয় ব্যক্তির থুতু পরীক্ষা, এক্স-রে এবং অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে ৷"
বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ভারতের এখনও পর্যন্ত যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে না কমেছে? চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরী জানান, যক্ষ্মা বা টিবি রোগীর সংখ্যা আগের থেকে কমেছে ৷ 2023 সালে ভারতে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ছিল 2.23 মিলিয়ন ৷ 2022 সালে সেই সংখ্যাটা ছিল 2.42 মিলিয়ন ছিল ৷ সচেতনতা ও সরকারি সহায়তায় এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আরও কমবে ৷ পাশাপাশি তিনি এও জানিয়েছেন, টিবি বা যক্ষ্মা রোগ যে শুধুমাত্র ফুসফুস বা শ্বাসযন্ত্রে হয়, এই ধারণা ভুল ৷ যক্ষ্মা শরীরের যে কোনও অঙ্গে হতে পারে একমাত্র চুল ও নখ ছাড়া ৷ সবশেষে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসে চিকিৎসকের বার্তা একটাই, এই রোগ নির্মূল করা সম্ভব ৷ সামাজিক ট্যাবু বা কুসংস্কার সরিয়ে সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতা বাড়লে সমাজ হবে যক্ষ্মা মুক্ত ৷
আরও পড়ুন
1. ঘনঘন জ্বর-কাশি থেকেও হতে পারে যক্ষা রোগ, সুস্থ থাকার পথ দেখালেন বিশিষ্ট চিকিৎসক