কলকাতা: চক্ষুদানকে বলা হয় মহান দান ৷ কারণ এই দান অন্ধদের বিশ্ব দেখার সুযোগ দেয় । কিন্তু সামাজিক ও ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে কিংবা ভয় ও বিভ্রান্তির কারণে বহু মানুষ চক্ষুদান করতে চান না । এমনকী যারা দান করতে চান, তাদের অধিকাংশও চক্ষু প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে তা করতে পারেন না । ভারতে চক্ষুদান সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি বছর 25 অগস্ট থেকে 8 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতীয় চক্ষুদান পাক্ষিক উদযাপিত হয় ৷ এর উদ্দেশ্য, ভুল ধারণার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা এবং মৃত্যুর পরে চক্ষুদানের জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা ।
এই অনুষ্ঠানটি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি এবং তাঁর পরিবারের সম্মানে পালিত হয় ৷ এই কর্মসূচি সামাজিক বাধা ভাঙতে, সচেতনতা বাড়াতে এবং চক্ষুদানের প্রয়োজনীয়তার প্রচারে সাহায্য করে ।
চক্ষুদান কী (What Is Eye Donation)?
চক্ষুদান একটি নিঃস্বার্থ কাজ যা সমাজের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে । চোখের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য মৃত্যুর পর আপনার কর্নিয়া দান করাকে চক্ষুদান বলা হয় । কর্নিয়া হল চোখের স্বচ্ছ বাইরের স্তর যা আলোকে প্রবেশ করতে দেয় ৷ যার ফলে দৃষ্টি আসে । চোখের রোগ, আঘাত বা জন্মগত ত্রুটিতে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের দৃষ্টি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করার জন্য প্রতিস্থাপন পদ্ধতিতে কর্নিয়া ব্যবহার করা যেতে পারে । মৃত্যুর 24 ঘণ্টা পর্যন্ত চক্ষুদান করা যায় ।
চোখের রোগ থাকলে কী হবে ?
চোখের বিভিন্ন অবস্থা অনেক অংশকে সরাসরি প্রভাবিত করে না । বয়সজনিত বা অন্যান্য রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনির রোগে চক্ষুদানে কোনও সমস্যা নেই । অতীতে যাঁদের চোখের অপারেশন হয়েছে, তাঁরাও চক্ষুদান করতে পারেন । তাঁদের চোখের কর্নিয়াও অন্যদের চোখে প্রতিস্থাপন করা যায় । যেকোনও ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও তাঁদের চোখ দান করতে পারেন । কর্নিয়ায় রক্তনালী না-থাকায় যেকোনও ধরনের ক্যানসারে এতে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে যায় ।
কারা চোখ দান করতে পারেন না ?
এইডস, হেপাটাইটিস বি এবং সি, জলাতঙ্ক, সেপ্টিসেমিয়া, তীব্র লিউকেমিয়া, টিটেনাস, কলেরা, এনসেফালাইটিস এবং মেনিনজাইটিসের মতো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাঁদের চোখ দান করতে পারবেন না ।
চক্ষুদানের গুরুত্ব: চোখ মানবদেহের একটি অতি মূল্যবান অঙ্গ । মৃত্যুর পর চোখ পুড়িয়ে নষ্ট করা উচিত নয় । একজন ব্যক্তি চোখ দান করলে দু’জন অন্ধ দৃষ্টিশক্তি পান । চক্ষুদান কর্নিয়ার অন্ধত্বে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের তাঁদের দৃষ্টি ফিরে পেতে সাহায্য করতে পারে ।
দেখার ক্ষমতা ফিরে পাওয়া: চক্ষুদান সম্পর্কে মানুষের মধ্যে এখনও তেমন সচেতনতা নেই । মানুষ মনে করেন, এই পদ্ধতিতে পুরো চোখ প্রতিস্থাপন করা হয়, তা নয় । শুধুমাত্র দান করা চোখের কর্নিয়া অন্ধদের মধ্যে প্রতিস্থাপন করা হয় । যদিও ব্যক্তির মৃত্যুর পরে চক্ষু প্রতিস্থাপন করা হয়, তবে যে কোনও ব্যক্তি তার বয়স, লিঙ্গ এবং রক্তের গ্রুপ নির্বিশেষে জীবিত অবস্থায় চক্ষুদান করার জন্য নিজেকে নিবন্ধন করতে পারেন ।
এই পদ্ধতিতে মৃত্যুর এক ঘণ্টার মধ্যে কর্নিয়া অপসারণ করতে হবে । এটি অপসারণ করতে মাত্র 10-15 মিনিট সময় লাগে ৷ একজন দান করা ব্যক্তির চোখ দু'জন কর্নিয়াল অন্ধ ব্যক্তির দৃষ্টি বাঁচাতে পারে । চক্ষুদানের সূত্রপাত ডা. এডুয়ার্ড কনরাড জির্মকে 1905 সালে প্রথম সফল কর্নিয়াল ট্রান্সপ্লান্ট করার কৃতিত্ব দেওয়া হয় ৷
ভারতে প্রথম চক্ষুদান হয়েছিল 1948 সালে, ডাঃ আর.ই.এস মুথিয়া ভারতে প্রথম কর্নিয়া ট্রান্সপ্লান্ট করেন এবং দেশে প্রথম চক্ষুব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন । এরপর থেকে চক্ষুদানের প্রচলন শুরু হয় । আই ব্যাঙ্ক অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (ইবিএআই) এখন ভারতে চক্ষুদানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করে ৷ ভারতের প্রথম চক্ষুব্যাঙ্ক 1945 সালে তৈরি হয় ৷ ডাঃ আর.ই.এস চেন্নাইয়ের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অফথালমোলজি তৈরি করেন ।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য শুধুমাত্র ধারণা আর সাধারণ জ্ঞানের জন্যই লেখা হয়েছে ৷ এখানে উল্লেখিত কোনও পরামর্শ অনুসরণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ৷ যদি আগে থেকেই কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে থাকে, তা আগেই চিকিৎসককে জানাতে হবে ৷)