কলকাতা: অনিয়মিত জীবনধারা ও খাদ্যাভাসের ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা যায় ৷ এর মধ্যে কিডনির সংক্রান্ত সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে ৷ কিডনির পাথর ওষুধের মাধ্যমে না-কমলে একমাত্র উপায় হল অপারেশন ৷
তবে অনেকের ধারণা বিয়ার পান করলে কিডনিতে পাথরের সমস্যা কমে যায় ৷ কিন্তু এই ধারনা কি আদৌও সত্য ? কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, বিয়ারে পাওয়া মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্যগুলি প্রস্রাবের আউটপুট বাড়াতে পারে ৷ যা ছোট পাথর বের হতে সাহায্য় করতেও পারে ৷ তবে কিডনির পাথরের সমস্যা সমাধানে বিয়ার পান যুক্তিসঙ্গত নয় ৷ কারণ বিয়ার পান করলে কোনও উপকার হয় না বরং এতে উপস্থিত অ্যালকোহল শরীরের নানাভাবে ক্ষতি করতে পারে।
কিডনিতে পাথরের সমস্যা কী (What is the problem of kidney stones) ?
মুম্বইয়ের ইউরোলজিস্ট ডাঃ সাকেত নাভানি বলেন, কিডনিতে পাথর একটা সাধারণ সমস্যা ৷ এটি পুরুষ বা মহিলা যে কারও হতে পারে ৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে 30 থেকে 40 বছর বয়সিদের মধ্যে এমনটা দেখা যায় । আসলে এই সমস্যায় কিডনির ভিতরে খনিজ ও লবণ দিয়ে তৈরি ছোট ছোট কণা শক্ত হয়ে ছোট পাথরের মতো হয়ে যায় ।
লক্ষণ: পাথরের আকার এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে কিডনিতে পাথরের উপসর্গ ৷ ফলে ভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি আলাদা হতে পারে। যেমন, কোমর ও পিঠের নীচে বা তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে । এই ব্যথা হঠাৎ শুরু হতে পারে ও কয়েক মিনিট থেকে কয়েকঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে । প্রস্রাবে রক্ত যাকে বলা হয় হেমাটুরিয়া যা কিডনিতে পাথরের একটি প্রধান লক্ষণ ৷ এই সমস্যায় প্রস্রাবের রং গোলাপি, লাল বা বাদামি হতে পারে । কিডনিতে পাথরের সমস্যা হলে, প্রস্রাব করার সময় মূত্রনালীতে জ্বালাপোড়া বা তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে ৷
এই সমস্যায়, ঘন ঘন প্রস্রাব করার মতো সমস্যা কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খুব অল্প পরিমাণে প্রস্রাবও হতে শুরু করে ৷ কিডনিতে পাথরের কারণে পেটে ব্যথা, অস্বস্তির কারণে বমি বমি ভাব এবং বমির মতো সমস্যা হতে পারে ৷ পাথরের কারণে মূত্রনালীর সংক্রমণ হলে জ্বরও হতে পারে।
রোগ নির্ণয়: তিনি ব্যাখ্যা করেন, কিডনিতে পাথর যদি খুব ছোট আকারের হয়, তবে সাধারণত ডাক্তার রোগীকে কিছু সময়ের জন্য ব্যথানাশক এবং মূত্রবর্ধক ওষুধের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়ার পরামর্শ দেন ৷ যাতে প্রস্রাবের সঙ্গে পাথর বেরিয়ে যায় । এটি 70 শতাংশের বেশি কিডনি পাথরের ক্ষেত্রে উপশম প্রদান করে । কিন্তু পাথরের আকার খুব বড় হলে সেক্ষেত্রে লিথোট্রিপসি, ইউরেটেরোস্কোপি, পারকিউটেনিয়াস নেফ্রোলিথোটমি এবং পারকিউটেনিয়াস নেফ্রোলিথোটমি ইত্যাদি চিকিৎসার সাহায্য নিতে হয় ৷
বিয়ার কি উপকারী ?
ডাঃ সাকেত নাভানি বলেন, "এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে থাকেন । সাধারণ কিডনিতে পাথরের ক্ষেত্রেও ডাক্তাররা সাধারণত প্রচুর পরিমাণে তরল খাওয়ার পরামর্শ দেন ৷ বিশেষ করে মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্যযুক্ত তরল ৷ এই গুণটি বিয়ারেও পাওয়া যায় । তাই অনেক সময় চিকিৎসকরা খুব নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে বার্লি ওয়াটার বা বিয়ার পান করার পরামর্শ দেন, কারণ এটি প্রস্রাব বাড়ায় । আর এতে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে পাথর বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় । কিন্তু বিয়ার পানকে কিডনিতে পাথরের সমস্যা নিরাময় হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক নয় ।"
যে মাধ্যমই হোক না কেন, অ্যালকোহল বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা হলে শরীরে অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে । অত্যধিক অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে কিডনির ক্ষতি, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ইত্যাদির মতো গুরুতর সমস্যা হতে পারে । বিয়ারও একটি অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এবং এটি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে শরীরের বহু ধরনের ক্ষতি হতে পারে ।
অতিরিক্ত পরিমাণে বিয়ার পান করলে শরীরে জলশূন্যতা হতে পারে ৷ যা কিডনিতে পাথরের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে । এছাড়া বিয়ার পান করলেও ওজন বাড়তে পারে এবং শরীরে আরও অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ৷ তিনি ব্যাখ্যা করেন, নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে বিয়ার পান করা কিডনি পাথরের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাব্য সমাধানগুলির মধ্যে একটি হতে পারে ৷ তবে এটিকে একমাত্র চিকিৎসা হিসাবে দেখা উচিত নয় । কিডনিতে পাথরের চিকিৎসার জন্য কিডনিতে পাথরের লক্ষণগুলি বোঝা এবং সময়মত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করা খুবই জরুরি ৷ এছাড়া স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করাও কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে খুবই উপকারী।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য শুধুমাত্র ধারণা আর সাধারণ জ্ঞানের জন্যই লেখা হয়েছে ৷ এখানে উল্লেখিত কোনও পরামর্শ অনুসরণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ৷ যদি আগে থেকেই কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে থাকে, তা আগেই চিকিৎসককে জানাতে হবে ৷