বর্তমান সময়ে শিশুদের স্বাস্থ্যকর ও নিয়মিত খাবার খাওয়ানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে । সেইসঙ্গে শিশুদের মধ্যে ফাস্টফুড, জাঙ্ক ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের আকর্ষণ এতটাই বেশি দেখা যায় আজকাল ঘরে তৈরি ডাল, ভাত, রুটি, সবজি খেতে চায় না । চিকিৎসকদের মতে, শিশুদের মধ্যে বাজে খাদ্যাভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ৷ বর্তমান সময়ে ভীষণভাবে জরুরি শিশুদের ভালো খাদ্যাভাস গড়ে তোলা ৷
ছোটবেলা থেকে চেষ্টা করা প্রয়োজন: উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্ণৌ-এর একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সৃষ্টি চতুর্বেদী বলেন, "আজকের সময়ে, শিশুদের স্থূলতা এবং অন্যান্য সমস্যাগুলি কেবল বড় শহরগুলিতেই নয়, ছোট শহরগুলিতেও বাড়তে শুরু করেছে ৷ শুধু তাই নয়, শিশুদের মধ্যে ঘন ঘন অসুস্থ হওয়া, শারীরিক দুর্বলতা এবং দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ার মতো সাধারণ সমস্যার ঘটনাও বাড়তে শুরু করেছে । যার বেশির ভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভুল খাদ্যাভ্যাস এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের জন্য দায়ী ৷ শিশুদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান রোগ ও সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব যদি আমরা সঠিক সময়ে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলি ।
কারণ: প্রকৃতপক্ষে, ছোট বাচ্চাদের খাদ্যাভ্যাস তাদের প্রাথমিক বছরগুলিতে গঠিত হয় । এইসময়ে যদি তারা জাঙ্ক ফুড খাওয়া বা অনিয়মিত সময়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে ৷ তবে ভবিষ্যতে তাদের অভ্যাসের উন্নতি করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে । ভবিষ্যতে এসব অভ্যাসের প্রভাব তাদের স্বাস্থ্যের ওপর নানা ধরনের রোগের আকারে দেখা যেতে পারে ।
মুম্বইয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ রুশেল জর্জ বলেন, "শিশুদের মধ্যে ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসের প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করার আগে, শিশুরা কেন এই ধরণের ডায়েটের দিকে ঝুঁকছে তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ ৷ শিশুদের জাঙ্ক ফুড আসক্তির অনেক কারণ থাকতে পারে ৷"
টিভি এবং বিজ্ঞাপনের প্রভাব: ফাস্ট ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের চটকদার বিজ্ঞাপন শিশুদের আকৃষ্ট করে ।
ব্যস্ত জীবনযাপন: বাবা-মা যদি খুব ব্যস্ত থাকেন এবং সময়ের অভাবে তাদের সন্তানদের খাবারের প্রতি খুব একটা মনোযোগ দিতে না পারেন তাদের ঘরে রান্না করা খাবার কম এবং বাইরের খাবার বেশি দেওয়া হয়, তাহলে বাচ্চাদেরও বাইরে খাবার খাওয়ার ইচ্ছা বেশি দেখা যায় ।
স্বাদ এবং সুবিধা: জাঙ্ক ফুড সুস্বাদু এবং সহজলভ্য, যা শিশুরা দ্রুত পছন্দ করে ।
অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস: শিশুদের নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ার অভ্যাস না করালে তারা স্ন্যাক্স ও ফাস্টফুডের প্রতি আকৃষ্ট হয় ।
রুশেল জর্জ বলেন, "শিশুদের খাদ্যতালিকায় শুধু তাজা ফলমূল, শাকসবজি, ডাল এবং গোটা শস্য অন্তর্ভুক্ত করাই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বড় শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং তাদের স্বাস্থ্যকর খাবারের উপকারিতা বোঝানোও খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এসবের পাশাপাশি এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে বাড়ির বড়রা নিজেরাই ভালো অভ্যাসের উদাহরণ হয়ে ওঠে কারণ শিশুরা যা দেখে তাই শেখে । এছাড়া ছোটবেলা থেকেই শিশুদের দৈনন্দিন রুটিনে কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখুন ।"
- নিয়মিত সময়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন । বাচ্চাদের খাওয়ার সময় নির্ধারণ করুন এবং কঠোরভাবে অনুসরণ করুন ।
- শিশুদের জন্য প্রতিদিনের মেনু আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করুন । এছাড়াও, রঙিন এবং মজাদার উপায়ে সাজিয়ে তাদের কাছে পুষ্টিকর বাড়িতে তৈরি খাবার পরিবেশন করুন ।
- ফল, শুকনো ফল, চিনাবাদাম লাড্ডু ইত্যাদির মতো স্ন্যাকসের জন্য তাদের স্বাস্থ্যকর বিকল্প দিন ।
- খাওয়ার সময় শিশুদের টিভি বা মোবাইল দেখা থেকে বিরত রাখুন ।
- যতদূর সম্ভব পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে খাবার খেতে হবে । পরিবারের সাঙ্গে খাবার খাওয়া শিশুদের ভালো অভ্যাস শেখাতে সাহায্য করে ।
- শিশুদের পছন্দ-অপছন্দের কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্যকর বিকল্প প্রস্তুত করুন ।
- শিশুদের স্কুলের জন্য এমন একটি টিফিন তৈরি করুন যা স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু উভয়ই ।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য শুধুমাত্র ধারণা আর সাধারণ জ্ঞানের জন্যই লেখা হয়েছে ৷ এখানে উল্লেখিত কোনও পরামর্শ অনুসরণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ৷ যদি আগে থেকেই কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে থাকে, তা আগেই চিকিৎসককে জানাতে হবে ৷)