হায়দারাবাদ: তীব্র গরমে স্বস্তি দিয়েছে কয়েক পশলা বৃষ্টি ৷ আর কয়েকদিন পরেই শুরু হবে বর্ষা ৷ আর বর্ষা মানেই রাজ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়বে ডেঙ্গির প্রকোপ ৷ প্রায় প্রতি বছরই ডেঙ্গি অন্যতম মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়ায় ৷ চলতি অর্থবর্ষেও ডেঙ্গি মোকাবিলায় একাধিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে রাজ্য সরকার ৷ যদিও ডাক্তাররা বলছেন, শুধু সরকারের মুখাপেক্ষী হলেই চলবে না, সতর্কও হতে হবে ৷
সাধারণত জুন থেকে অগস্টেই এই রোগের প্রকোপ বাড়ে ৷ ইডিস ইজিপ্টি মশা থেকে এই রোগের প্রাদুর্ভাব, যা বেশি কামড়ায় দিনেরবেলা ৷ সূর্য ওঠার 2 ঘণ্টা পর এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে এই মশা কামড়ায় ৷ ডেঙ্গি হলে সাধারণত 7 দিন পর্যন্ত জ্বর থাকে ৷ মশা কামড়ানোর 4 থেকে 10 দিন পর এই রোগের লক্ষণ দেখা যায় ৷ সাধারণ চিকিৎসাতেই ডেঙ্গি সেরে যায় ৷ কিন্তু গর্ভবতীরা এই রোগে আক্রান্ত হলে কী করবেন ? কারণ গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কমে যায় ৷
এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ব্রাজিলের মিনাস গেরাইসে গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গি আক্রান্ত মায়েদের থেকে জন্ম নেওয়া শিশুদের প্রথম তিন বছরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি 27 শতাংশ বেশি দেখা গিয়েছে ৷ তারমধ্যে জন্মের দ্বিতীয় বছরে 76 শতাংশ বেশি শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ৷ বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক লিভিয়া মেনেজেস বলেন, গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গি আক্রান্ত হলে তা বাচ্চার উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে ৷
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের সন্তান জন্মের ঝুঁকি বেড়েছে 67 শতাংশ ৷ শুধু তাই নয়, স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের মহিলারা ডেঙ্গি আক্রান্ত হলে, তাঁদের প্রসবকালে সন্তান জন্মের ঝুঁকি বেড়েছে 133 শতাংশ ৷ এই সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলকে মান্যতা দিয়ে মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায় সুস্থ থাকার পথ দেখালেন ৷
গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গি হলে কী করণীয় ?
প্রথম তিনমাসে ডেঙ্গি আক্রান্ত হলে তা সবচেয়ে ভয়ের ৷ কারণ, ওই সময় বাচ্চার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি হয় ৷ ফলে গর্ভাবস্থার প্রথম তিনমাসে মায়ের সংক্রমণ হলে তা বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করে অঙ্গ-গঠনে সমস্য়া হয় ৷ বাচ্চার মস্তিষ্ক তৈরিতেও বাধা সৃষ্টি করে ৷ ফলে বাচ্চা জন্মানোর সময় মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে জন্মাতে পারে ৷ যেমন মেনিংলোসিল, ইন ক্যাফালোসিল ইত্যাদি ৷
গর্ভাবস্থার প্রথম 2 মাসে ডেঙ্গি হয়, সেক্ষেত্রে গর্ভাপাতের সম্ভাবনা থাকে ৷ 20% মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৷ মিসক্যারেজ না-হলেও বাচ্চার বৃদ্ধি হয় না ৷ অনেকসময় প্রি-ম্যাচিওর ডেলিভারি হয়ে যায় ৷ সেক্ষেত্রে বাচ্চার ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়, এমনকী মৃত্যুও হতে পারে ৷
রোগের লক্ষণগুলি হল জ্বর, মাথা ব্যথা, চোখের পিছনে ব্য়থা, বমিবমি ভাব এছাড়াও ত্বকে ব়্যাশ দেখা যায় ৷ এই ব়্যাশ বেরোয় 4 থেকে 6 দিনের মাথায় ৷ জ্বর থাকে 2 থেকে 7 দিন পর্যন্ত ৷ এই জ্বরের কতগুলি আলাদা ফেজ রয়েছে ৷ প্রথমটি হল রাইন ফেজ, মানে যখন জ্বর থাকে ৷ দ্বিতীয়টি হল ক্রিটিক্যাল ফেজ ৷ 4 দিন পর থেকে এই ফেজ শুরু হয় ৷ তখন প্লেটলেট কাউন্ট কমে যেতে থাকে ৷ এই ফেজ 4 থেকে 7 দিন পর্যন্ত থাকে ৷
তবে সাধারণ লক্ষণ দেখা গেলে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করা যায় ৷ তবে এক্ষেত্রে বিশ্রাম খুব জরুরি ৷ বেশি করে জল খাওয়া, নিয়মিত প্লেটলেট কাউন্ট দেখতে হবে ৷ এবং তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে ৷
ডেঙ্গিতে পেট ব্যথা, হাত-পা ফুলে যাওয়া, পেট ফুলে যাওয়া, বুকে জল জমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে তা মারাত্মক পরিণামের ইঙ্গিত করে ৷ ফলে যেকোনও লক্ষণ দেখা গেলেই সবার প্রথম ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে ৷ বাচ্চাদের লিভার বড় হয়ে যাওয়া এই রোগের একটা বড় সমস্যা ৷
আরও পড়ুন: