কলকাতা: প্রতিদিন সকালে মলত্যাগ আমাদের শরীরের একটি অপরিহার্য কাজ । কিন্তু কখনও কখনও হজম বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা, ঘুমের ব্যাঘাতের কারণে নিয়মিত মলত্যাগ প্রভাবিত হতে পারে । চিকিৎসকরা বলছেন, যদি দীর্ঘ সময় ধরে মলত্যাগ না হয় বা খুব কম মল হয় তাহলে এই সমস্যা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে বা বারবার দেখা দেয় তাহলে অনেক সমস্যা হতে পারে ।
মুম্বইয়ের আরোগ্যধাম আয়ুর্বেদিক হাসপাতালের চিকিত্সক ডাঃ মনীষা কালে বলেন, "প্রতিদিনের মলত্যাগ শরীরের স্বাভাবিক কাজগুলির মধ্যে একটি ৷ যা পরিপাকতন্ত্রকে মসৃণভাবে চালানোর জন্য এবং শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় । যখন আমরা নিয়মিত মলত্যাগ করি, তখন আমাদের শরীর বর্জ্য পদার্থ ও টক্সিন থেকে মুক্ত হয় ৷ আমাদের অন্ত্রগুলিকে পরিষ্কার এবং সুস্থ রাখে । কিন্তু কোনও কারণে যদি দৈনিক মলত্যাগ করা সম্ভব না হয়, তাহলে অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে । খাদ্যাভ্যাসের উন্নতি, পর্যাপ্ত জল খাওয়া এবং আপনার দৈনন্দিন রুটিনে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ-সহ এই সমস্যাটি এড়ানো যেতে পারে । কিন্তু মলত্যাগের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন ।"
কেন দৈনিক মলত্যাগ গুরুত্বপূর্ণ ?
ডাঃ মনীষা কালে জানান, সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য দৈনিক মলত্যাগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ । জেনে নিন এটি শরীরের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ ?
শরীরকে বিষাক্ত উপাদান থেকে মুক্ত করা: খাবার হজমের পর আমাদের শরীরে যে বর্জ্য পদার্থ থাকে তা মল আকারে বের করে দেওয়া প্রয়োজন । এই বর্জ্য পদার্থ শরীরে জমতে থাকলে তা টক্সিনে পরিণত হয় ৷ যা শরীরের ক্ষতি করতে পারে । নিয়মিত মলত্যাগের মাধ্যমে এই টক্সিন শরীর থেকে বের হয়ে যায়, যা শরীরকে সুস্থ রাখে ।
পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখা: নিয়মিত মলত্যাগের সঙ্গে পাচনতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করে । পরিপাকতন্ত্র ঠিকমতো কাজ না করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে । এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পেট ফাঁপা, গ্যাস এবং পেট ব্যথার মতো সমস্যাও হতে পারে । নিয়মিত মলত্যাগ পাচনতন্ত্রকে মসৃণ রাখে এবং অন্ত্র পরিষ্কার করতে সাহায্য করে ।
অন্ত্রকে সুস্থ রাখে: দৈনিক মলত্যাগ অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে । মল যদি অন্ত্রে জমে থাকে তবে এটি অন্ত্রে ফোলা, ব্যথা এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে । শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য সুস্থ অন্ত্র অপরিহার্য ।
মলত্যাগ না করার কারণে সমস্যা: তিনি জানান, মলত্যাগের নিয়মিত প্রক্রিয়ায় বাধার কারণে অনেক ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে ৷ যার মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ ।
কোষ্ঠকাঠিন্য: নিয়মিত মলত্যাগ না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে । এতে, মল শক্ত হয়ে যায়, যা এটিকে বের করা কঠিন করে তোলে । দীর্ঘায়িত কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে পাইলস এবং ফিসারের মতো সমস্যা হতে পারে ।
পেটে ব্যথা ও গ্যাস: শরীরে মল জমে পেটে ব্যথা, ফুলে যাওয়া ও গ্যাস তৈরি হয় । গ্যাসের অত্যধিক গঠন পেট ফাঁপা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করে, যা দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে ।
অন্ত্রের সমস্যা: অন্ত্রে দীর্ঘ সময় ধরে মল জমা থাকলে তা অন্ত্রের সংক্রমণ হতে পারে । এটি অন্ত্রে প্রদাহ, আলসার এবং অন্যান্য গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে । এছাড়া অন্ত্রে দীর্ঘক্ষণ মল ধরে রাখাও অন্ত্রের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে ।
ত্বকের সমস্যা: শরীর যখন মলের মাধ্যমে টক্সিন বের করতে অক্ষম হয়, তখন এই টক্সিন ত্বকে প্রভাব ফেলতে পারে । এটি ব্রণ, ব্রণ এবং অন্যান্য ত্বক সম্পর্কিত সমস্যা তৈরি করতে পারে ।
মলত্যাগ না হওয়ার কারণ: ডাঃ মনীষা কালে জানান, এই সমস্যার জন্য অনেক কারণ দায়ী হতে পারে, যার মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ ।
খাদ্যে ঘাটতি: খাদ্যে ফাইবারের অভাব মলত্যাগের সমস্যার প্রধান কারণ হতে পারে । ফলমূল, শাকসবজি এবং গোটা শস্যের মতো ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া হজম প্রক্রিয়াকে আরও ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এবং মলত্যাগ মসৃণ হয় ।
জলের অভাব: পর্যাপ্ত pল পান না করলে শরীরে জলশূন্যতা হতে পারে ৷ যার ফলে মল শক্ত হয়ে যায় । এই অবস্থায় মলত্যাগ করা কঠিন হয়ে পড়ে । তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করা জরুরি ।
শারীরিক পরিশ্রমের অভাব: যারা বেশিক্ষণ বসে থাকেন বা শারীরিক কার্যকলাপ করেন না তাদের মলত্যাগে সমস্যা হতে পারে । শারীরিক কার্যকলাপ পরিপাকতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে এবং মলত্যাগ সহজ হয় ।
মানসিক চাপ: স্ট্রেস এবং উদ্বেগও মলত্যাগকে প্রভাবিত করে । অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যেতে পারে ৷ যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়ায় ।
ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন: তিনি বলেন, "শিশু বা বয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। কিন্তু আজকাল খাওয়ার অরুচি বা অন্যান্য কারণে তরুণদের মধ্যেও এই সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, যখন এটি ঘটে, মানুষ সাধারণত ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমে বা নিজেরাই ওষুধ খেয়ে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করে । তবে আয়ুর্বেদ হোক বা অ্যালোপ্যাথি, মলত্যাগ করতে না পারার সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে । প্রকৃতপক্ষে, আলগা মলের জন্য দেওয়া ওষুধগুলি যদি সঠিক পরিমাণে না নেওয়া হয় তবে সেগুলিও ডায়রিয়া বা অন্য কিছু সমস্যা তৈরি করতে পারে । এছাড়াও, কখনও কখনও এটি কোনও স্বাস্থ্যগত কারণেও হতে পারে । তাই সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ওষুধ সেবন করা উচিত ।"
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK513291/
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য শুধুমাত্র ধারণা আর সাধারণ জ্ঞানের জন্যই লেখা হয়েছে ৷ এখানে উল্লেখিত কোনও পরামর্শ অনুসরণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ৷ যদি আগে থেকেই কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে থাকে, তা আগেই চিকিৎসককে জানাতে হবে ৷)