হায়দরাবাদ: মাতৃদুগ্ধ শিশুদের জন্য অমৃত হিসাবে বিবেচিত হয় । শিশুর জন্মের পর অন্তত ছয় মাস স্তন্যপান করানো শিশু এবং মা উভয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু কখনও কখনও মায়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কিছু সমস্যা বা পরিস্থিতি এমন হয়ে যায় যে, ডাক্তাররা তাকে কম বা বেশি সময়ের জন্য শিশুকে স্তন্যপান করানোর পরামর্শ দেন (Reasons to stop breastfeeding early) ।
দেরাদুন, উত্তরাখণ্ডের একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. লতিকা যোশী বলেন যে, শিশুর জন্মের পর থেকে অন্তত ছয় মাস পর্যন্ত স্তন্যপান করানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু মা যদি এমন কোনও রোগ, সংক্রমণ বা ব্যাধিতে আক্রান্ত হন, যার প্রভাব দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে পৌঁছতে পারে এবং তার স্বাস্থ্য বা বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে, তাহলে যতক্ষণ না মা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা স্তন্যপান করাতে পারবেন না । যদি করান তা তাঁদের সন্তানের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে ৷ প্রয়োজনে কম বা বেশি সময়ের জন্য স্তন্যপান করানো নিষিদ্ধ করা হয় ।
স্তন্যপান করানোর নিয়ম: ডা. যোশী ব্যাখ্যা করেছেন যে সাধারণভাবে, হালকা সংক্রমণ বা রোগের ক্ষেত্রে যেখানে স্তন্যপান করানোর মাধ্যমে মায়ের অসুস্থতা শিশুর কাছে পৌঁছনোর খুব কম ঝুঁকি থাকে, সেক্ষেত্রে মাকে স্তন্যপান করাতে নিষেধ করা হয় না । মায়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কিছু কারণ যা তাঁকে স্তন্যপান করনো থেকে বিরত থাকতে বলে, তা নিম্নরূপ ।
যদি স্তন্যদানকারী মা সেপসিস, স্তন হারপিস বা সক্রিয় হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস সংক্রমণ, চিকেন পক্স, ভেরিসেলা সংক্রমণ বা ইবোলা ভাইরাস এই জাতীয় অন্য কোনও মারাত্মক ভাইরাস বা সংক্রমণে আক্রান্ত হন ।
স্তনের মাস্টাইটিস বা অন্য কোনও সংক্রমণের কারণে মায়ের স্তনে ফোলা বা অন্য কোনও কারণে পুঁজ ভর্তি ফোঁড়া হলে ।
মায়ের যদি টিবি-র গুরুতর সমস্যা থাকে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না করা হয় ।
মা এইচআইভি বা এইডস সংক্রমণের গুরুতর পর্যায়ে ভুগলে ।
যেসব মায়েরা ক্যানসার বা অন্য কোনও গুরুতর রোগে ভুগছেন এবং এর চিকিৎসার জন্য কিছু বিশেষ ওষুধ, রাসায়নিক বা অন্য কোনও জটিল থেরাপি গ্রহণ করছেন ।
মা বিশেষ গর্ভনিরোধক ওষুধ খাচ্ছেন ।
যদি মা অ্যান্টি-মৃগীরোগ বা অন্য কিছু ওষুধ খান যা খিঁচুনি কমায়, হরমোনকে প্রভাবিত করে বা সাইকোথেরাপিতে দেওয়া হয় ।
মা যদি কোনও বিশেষ অ্যান্টি-বায়োটিক বা ওষুধ গ্রহণ করেন যা শিশুর স্বাস্থ্য ও বিকাশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে ।
মা যদি মাদক বা অন্যান্য নেশায় আসক্ত হন ।
স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ
চিকিৎসক ব্যাখ্যা করেছেন যে, এই অবস্থার অনেকগুলি রোগ বা সমস্যা নিরাময়ের পরে, মাকে অল্প সময়ের মধ্যে স্তন্যপান করানোর অনুমতি দেওয়া হয় । কিন্তু অনেক সময়, কিছু গুরুতর রোগের ক্ষেত্রে বা মায়েরা এমন ওষুধ সেবন করেন যা শিশুর শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে, সেই ক্ষেত্রে মাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য স্তন্যপান না করানোর কথা বলা হয় । তিনি বলেন যে, রোগ, সংক্রমণ বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে সময়মতো চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু যদি একজন স্তন্যদানকারী মায়ের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তার প্রভাব সন্তানের স্বাস্থ্যের উপরও পড়তে পারে । অতএব যদি একজন স্তন্যদানকারী মা তাঁর স্বাস্থ্যে কোনও ধরনের সমস্যার কম-বেশি উপসর্গ দেখতে পান, তাহলে তাঁর ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত । এছাড়াও কোনও সমস্যা হলে ডাক্তারের দেওয়া নির্দেশাবলী সাবধানে অনুসরণ করা উচিত ।
আরও পড়ুন: