কলকাতা: মা এবং শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য স্তন্যপান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । জন্মের পর থেকে অন্তত ছয় মাস পর্যন্ত শিশুর শরীরের বিকাশ ও প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য স্তন্যপান করানো একান্ত জরুরি । কিন্তু কোনও কারণে মা যদি শিশুকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে স্তন্যপান করাতে না-পারেন, তাহলে তা শুধু শিশুর স্বাস্থ্যেই নয়, মায়ের স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে । আজ থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহের প্রথম দিনে আলোকপাত করব সেই সমস্যা ও তার সমাধানের দিকে ৷
উত্তরাখণ্ডের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. লতিকা যোশী বলেন, "শিশুর স্তন্যপানের সমস্যা বা সঠিকভাবে স্তন্যপান করাতে অক্ষমতা শুধুমাত্র তার পুষ্টি এবং বিকাশকে প্রভাবিত করে তাই নয়, তার থেকে মায়েরও কিছু শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে । মায়ের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অবস্থার পাশাপাশি অনেক সময় অন্য কিছু কারণও স্তন্যপান করানোর সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে । যার কয়েকটি নিম্নরূপ ।"
পর্যাপ্ত মাতৃদুগ্ধের অভাব: অনেক সময় মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাতৃদুগ্ধ তৈরি হয় না, যার কারণে শিশু পরিপূর্ণ পুষ্টি পায় না । মায়ের শরীরে পুষ্টির অভাব বা মানসিক চাপের কারণে এই সমস্যা হতে পারে । যা অনেক সময় স্তন্যপান করানোর ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে ।
স্তনে সংক্রমণ (মাস্টাইটিস): মাস্টাইটিস একটি সাধারণ সমস্যা ৷ যার ফলে স্তন ফুলে গিয়ে ব্যথা হয় । ফলে স্তন্যপান করানোর সময় সমস্যা হয় ৷ এধরনের গুরুতর সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা স্তন্যপান না-করানোর পরামর্শ দেন ৷ এগুলি ছাড়াও কিছু রোগ, সংক্রমণ বা সমস্যা থাকতে পারে যা স্তন্যপান করানোর ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করে ৷
মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব (Effects on maternal and child health):
চিকিৎসক লতিকা যোশী বলেন, "একজন মা যদি তাঁর সন্তানকে সঠিক উপায়ে এবং সঠিক পরিমাণে স্তন্যপান করাতে না-পারেন, তাহলে তা শুধু শিশুর নয়, মায়ের স্বাস্থ্যের উপরও তা প্রভাব ফেলে । এমন পরিস্থিতিতে অনেক সমস্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে ।"
মাতৃদুগ্ধ শিশুর জন্য সর্বোত্তম, এতে শিশুর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে । স্তন্যপান করতে সমস্যা হলে শিশু পরিপূর্ণ পুষ্টি পায় না, যা তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে । মাতৃদুগ্ধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ।
শিশুকে স্তন্যপান করাতে অসুবিধা হলে মা মানসিক চাপ ও উদ্বিগ্ন বোধ করতে পারেন । এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং মায়ের বিষণ্ণতার কারণও হতে পারে ।
সমাধান
তিনি বলেন, "শিশুকে অন্তত ছয় মাস স্তন্যপান করানো প্রয়োজন ৷ এটি শুধুমাত্র শিশুর জন্যই নয়, মায়ের সুস্থ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও তা গুরুত্বপূর্ণ । স্তন্যপান করানোর ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা বা অসুবিধাকে কখনও উপেক্ষা করা উচিত নয় ৷ যদি কোনও সমস্যা হয়, অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন ৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organization) তথ্য অনুসারে জানা যায়, স্তন্যপান করলে শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়ে, তাদের ওজন কম বা স্থূল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং পরবর্তী জীবনে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমে ৷
https://www.who.int/health-topics/breastfeeding#tab=tab_1
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য শুধুমাত্র ধারণা আর সাধারণ জ্ঞানের জন্যই লেখা হয়েছে ৷ এখানে উল্লেখিত কোনও পরামর্শ অনুসরণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ৷ যদি আগে থেকেই কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে থাকে, তা আগেই চিকিৎসককে জানাতে হবে ৷