কলকাতা, 21 জুন: মানুষের সুখ-দুঃখ, মান-অভিমানে কেউ থাকুক বা না থাকুক, একটা করে গান যেন ঠিক থেকেই যায় ৷ মনের অভিব্যক্তি সুরকার ও গীতিকারের বন্ধনী কীভাবে ধরা দিত, বোঝাটা কঠিন ৷ বিশ্ব সঙ্গীত দিবস তাই একদিন নয়, প্রতিদিন ৷ তবে মজার বিষয় সঙ্গীত পরিচালক বা সঙ্গীতশিল্পী নন, বাংলা গানের জগতে এমন অনেক তারকা আছেন, যাঁরা একবার হলেও গান গেয়েছেন ৷ উত্তম কুমারের পাশাপাশি সেই তালিকায় রয়েছেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন, পাহাড়ি স্যান্যাল, অসিত বরণ, মালা সিনহা বা হেমা মালিনীর মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ৷
বিশ্ব সঙ্গীত দিবসের আবহে 'সুরের ঝর্ণা' নামে প্রদর্শনীর আয়োজন করেন সংগ্রাহক সুদীপ্ত চন্দ ৷ তিনি বলেন, "অতীতে যে সকল শিল্পীরা গান করতেন তা পাথেয় করেই আজ এত শো হচ্ছে ৷ সেই গান কারা গেয়েছেন, তা তৈরির নেপথ্যের গল্প অনেকেই জানেন না ৷ সেই তথ্য যাতে বর্তমান প্রজন্মের কাছে আসে, তাই এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় ৷"
তিনি জানান, উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনের গানের রেকর্ডিং করেছিল দুই বিখ্যাত কোম্পানি। তবে, একসঙ্গে জুটিতে কখনও রেকর্ড করেননি তাঁরা। সুচিত্রা সেন একটি মাত্র গান রেকর্ড করলেও উত্তম কুমারের কণ্ঠে গানের সংখ্যা ছিল একাধিক। 'নবজন্ম' ছবিতে ছ'টি গান ছিল তাঁরই কণ্ঠে। এ ছাড়াও বিখ্যাত বাংলা আধুনিক গান 'এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে এসো না গল্প করি...' গানটিও রেকর্ড করেন মহানায়ক। নচিকেতা ঘোষের সুরে ও গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় গানটি পরবর্তীকালে আসে আরতি মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে।
জানা যায়, সুচিত্রা সেন সারাজীবনে একটিই মাত্র গান রেকর্ড করেছিলেন। সেটিও ছিল গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায়। যার সুর দিয়েছিলেন রবিন চট্টোপাধ্যায়। জানা যায়, রমা সেনকে প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন তাঁর স্বামী দিবানাথ সেন । কিন্তু রমার গলা পছন্দ হয়নি রেকর্ডিং স্টেশনের কর্তাব্যক্তিদের। কারণ তাঁর উচ্চারণে ছিল পূর্ববঙ্গীয় টান। তবে, একটি গান এসেছিল মহানায়িকার কণ্ঠে।
আবার অনেকেই জানেন না, পাহাড়ি স্যান্যাল ও অসিত বরণের মতো অভিনেতা সেই সময়ে গান গেয়ে দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়ছিলেন ৷ এমনকী, মালা সিনহাও বাংলা গান গেয়েছেন ৷ হেমা মালিনী পুজোর গান গেয়েছিলেন কিশোর কুমারের সুরে ৷ আবার নিত্যানন্দ পরিচালিত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও অপর্ণা সেন অভিনীত বাক্সবদল ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন বিশ্ববরেণ্য পরিচালক সত্যজিৎ রায় ৷
সেই সময়কার সেই অরজিনাল পোস্টার, ডকুমেন্টস তুলে আনা হয় সকলের সামনে ৷ আসলে ছোটবেলা থেকেই পোস্টার সংগ্রহের কাজ করতে পছন্দ করতেন সুদীপ্ত ৷ সেই ঝোঁকেই বারবার তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে পুরনো গান-সিনেমার অতীত, ইতিহাস তুলে ধরতে পছন্দ করেন ৷ এবার তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়বেন সুরকার সলীল চৌধুরীকে নিয়ে ৷ কারণ এই বছর সলীল চৌধুরী জন্মশতবর্ষ পালন করবেন তিনি তাঁর সৃষ্টি শিল্প দিয়েই ৷