কলকাতা, 6 জুলাই: ওপার বাংলার পর 'তুফান' আছড়ে পড়ল কলকাতাতেও। শাকিব খান-মিমি চক্রবর্তীর কেমিষ্ট্রি, দুর্ধর্ষ অ্যাকশন ও চোখাচোখা সংলাপে এপার বাংলার মন জয় করে নিচ্ছে ওপার বাংলার ছবি ৷ শুক্রবার এদেশে মুক্তি পেয়েছে রায়হান রফি পরিচালিত 'তুফান' ৷ উইকএন্ডে এই ছবি দেখতে যাওয়ার আগে চোখ বুলিয়ে নিন ইটিভি ভারতের রিভিউয়ে ৷
গল্প এগিয়েছে নয়ের দশকের এক শান্ত এবং আরেকজন অশান্ত যুবককে কেন্দ্রে রেখে। ‘তুফান’ মূলত অশান্ত যুবকেরই গল্প। শাকিব খানকে এই শান্ত এবং অশান্ত দু'ভাবেই পাওয়া গিয়েছে ছবিতে। শান্ত শাকিবের নামও ছবিতে শান্ত। তিনি অভিনেতা হতে চান, কিন্তু কপাল মন্দ। জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবেই কাজ জোটে তাঁর। আরেকজন মানে গালিব বিন গনি বা 'তুফান' সহজ কথায় একজন ডন। দয়া মায়াহীন রক্ত মাংসের তাল। মনুষ্যত্বের লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া যায় না তাঁর মধ্যে। মাঝে মাঝে দেখলে রাগ ওঠে। আর এখানেই জয় শাকিবের।
হঠাৎ-ই শান্তর ভাগ্যে জোটে গ্যাংস্টারের লাইফটাইম চরিত্র। যে ছবির মাস্টারমাইন্ড গ্যাংস্টার 'তুফান'। তার নিজের সঙ্গে চেহারার সাদৃশ্য আছে এমন কাউকে নিজের ফায়দার জন্য কাজে লাগাতে চান তিনি ৷ তারপরেই জমে ওঠে খেলা ৷ প্রেক্ষাগৃহে বসেই যার আনন্দ তুলতে পারবেন দর্শকরা ৷
তবে ছবি দেখতে দেখতে আপনার মনে হতে পারে 1978 সালে মুক্তি পাওয়া অমিতাভ বচ্চনের 'ডন' ও 2023 সালে মুক্তি পাওয়া সন্দীপ ভাঙ্গা রেড্ডির 'অ্যানিম্যাল'-এর সংমিশ্রণ দেখছেন ৷ শাকিব খানের লুক দেখলে এক লহমায় আপনার রণবীর কাপুরকে মনে পড়বে। গোলাগুলি এই ছবির প্রথম ও শেষ কথা। সিটির চোটে সংলাপ শোনা দায়। আর এটাতেই সার্থক পরিচালক রায়হান রফি ৷ শাকিব সাংবাদিক সম্মেলনে এসে অকপটে বলেছিলেন আমরা যদি 'বাহুবলী', 'অ্যানিম্যাল টু'র জন্য অপেক্ষা করে থাকি তা হলে 'তুফান' কেন দেখব না? অক্ষরে অক্ষরে মিলেছে সেই কথা।
এপারে বসে ওপারের টানে বাংলা সংলাপ বেশ অন্যরকম এবং উপভোগ্য। উল্লেখ্য, 'ডন' আর ' অ্যানিম্যাল'-এর মতো নায়ক এবং খলনায়কের এখানে ডাবল রোল। ছবিতে শান্তর প্রেমিকা কস্টিউম ডিজাইনার জুলি (মাসুমা রহমান নাবিলা)। ওদিকে সুপারস্টার নায়িকা সূচনার চরিত্রে (মিমি চক্রবর্তী)। সূচনা তুফানের সঙ্গী। ছবির শুরু ধীর গতির হলেও তুফানের এন্ট্রিতে পর্দায় শুরু হয় আসল 'ম্যাজিক'।
ছবিতে চঞ্চল চৌধুরী অসামান্য। তিনি এখানে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার তথা ধূর্ত আক্রমের ভূমিকায়। শাকিব আর চঞ্চলের কন্ট্রাস্ট বাংলা ছবির দর্শককে ভাবাবে। পুরুষকেন্দ্রিক এই ছবিতে মিমি এবং নাবিলা নিজেদের জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছেন। 'উড়া ধুরা' আর 'দুষ্টু কোকিল' ইমেজ নিয়ে মিমি এখানে বাড়তি কিছু। যদিও সোশাল মিডিয়ায় এই দুটো গান ভাইরাল ৷ যা ফিরছে অনুরাগীদের মুখেমুখে ৷ অন্যদিকে অভিনেত্রী নাবিলা স্নিগ্ধ। এই মুহূর্তের ব্যস্ত অভিনেতা লোকনাথ দে এই ছবিতেও অনবদ্য।
এছাড়াও মিশা সওদাগর, গাজী রাকায়েত, সুমন আনোয়ার ও ফজলুর রহমান বাবু নিজেদের জায়গায় চমকপ্রদ। এদের উপস্থিতি আরেকটু পাওয়া গেলে ছবিটা যেটুকু একঘেয়ে মনে হয়েছে, তা হয়তে হত না। এই ছবিরও দৈর্ঘ্য আরেকটু কম হলে মন্দ হত না। বরং রেশ থেকে যেত। তুফানকে বেশি প্রাধান্য দিতে গিয়ে কোথাও যেন শান্ত সেই সাইড রোলই থেকে গেল। 'তুফান'-এর এন্ট্রির পর গল্পের প্রেক্ষাপটে 'শান্ত'-র কী হল, তা যেন ঝাপসা রয়ে গেল ৷