ETV Bharat / entertainment

Exclusive: যাঁর হাতের জন্য সারা বিশ্ব পাগল, সেই হাত আমার কাঁধে- জাকির হুসেনের স্মৃতিতে সৌমিত্র রায় - SOUMITRA RAY ON ZAKIR HUSSAIN

"সারাজীবন ওঁর যে কথা আমার মনে থাকবে তা হল, উনি আমাকে বলেছিলেন, যত কম বাজাবে তত ভালো বাজবে।..." ইটিভি ভারতে স্মৃতি চারণে সৌমিত্র রায় ৷

Etv Bharat
জাকির হুসেনের স্মৃতিতে সৌমিত্র রায় (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Entertainment Team

Published : 3 hours ago

কলকাতা, 16 ডিসেম্বর: "যত কম বাজাবে তত ভালো বাজবে"- মায়েস্ত্রো তবলা বাদকের থেকে এমনই উপদেশ পেয়েছিলেন ভূমি ব্যান্ডের প্রধান সৌমিত্র রায় ৷ সেই স্মৃতি আজও উজ্জ্বল তাঁর কাছে ৷ বরেণ্য তবলা বাদক জাকির হুসেনের প্রয়াণে সেই কথা আজ ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে সৌমিত্রর ৷ সেই স্মৃতিতে উঁকি দিল ইটিভি ভারত।

সৌমিত্র এদিন জাকির হুসেনের স্মৃতিতে ডুব দিয়ে বলেন, "অপর্ণা সেন আমার মামি হন ৷ মুকুল শর্মা আমার মামা। আমাকে ফোন করে ছোট মা (অপর্ণা সেন) বম্বেতে ডাকেন। আমি তো প্রথমে ভয় পেয়ে যাই। এরপর ছোট মা (অপর্ণা সেন) জাকির হুসেনের সঙ্গে কথা বলতে বলে ফোনটা ধরিয়ে দেন হাতে। আমি তো ঘাবড়ে যাই এ কোন জাকির! ওপার থেকে একজন বলেন, সৌমিত্র জি আপ কাল আ সকেঙ্গে? কথাটা এমন ভাবে বললেন যেন কতদিন চেনেন আমাকে! আমি তো অবাক! পরদিন গেলাম। বাকিটা স্বপ্নের মতো।..."

সৌমিত্র বলেন, "সারাজীবন ওঁর যে কথাগুলো আমার মনে থাকবে তার মধ্যে একটা হল, উনি আমাকে বলেছিলেন, যত কম বাজাবে তত ভালো বাজবে। তত সুন্দর শুনতে লাগবে। অনেকে মুন্সিয়ানা দেখাতে গিয়ে বেশি বাজনা বাজিয়ে ফেলে।..."

আরেকটা কথা বলেন যে , "আমি এখনও পারফেক্ট 'ধা' (তবলায়) খুঁজে পাইনি। কতটা বিনয়ী হলে অত বড় মাপের একজন মানুষ ওরকম কথা বলতে পারেন। এত বছরের সাধনা, এত বড় মানুষ, এত গুণী মানুষ তিনি নিজে বলছেন যে তিনি নাকি এখনও নিজের পারফেক্ট 'ধা' খুঁজে পাননি। খুব হেসে হেসেই বলেছিলেন কথাটা।"

ফোনের ওপারে তখন সৌমিত্র কথা বলতে বলতে যেন ভেসে গিয়েছেন সেই সুমধুর স্মৃতিতে ৷ তিনি বলতে থাকেন, "একটা সময়ে তো আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাজাতাম আর গাইতাম। একটা ডায়েরিতে গান লেখা থাকত। সেই ডায়েরিতে একটা ছবি লাগানো ছিল আমার সেই দাঁড়িয়ে বাজানো আর গান গাওয়ার মুহূর্তের। ওই ডায়েরিটা সেদিন আমার সঙ্গে ছিল। উনি অনেক্ষণ ধরে ডায়েরিটা দেখছিলেন। পরে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি দাঁড়িয়ে গাও? আমি বললাম, হ্যাঁ। উনি বলেন, কীভাবে গাও? তুমি শিখেছ? বলি, না। উনি আমার প্রশংসা করেছিলেন সেদিন। সারাদিন কাটিয়েছিলাম ওঁর সঙ্গে। গানটা করার পর অন্তত কুড়ি বার লুপ-এ চালিয়ে দিয়েছিলেন। তখন সেলিম মার্চেন্ট, তওফিক কুরেশিরা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করছিলেন। রেকর্ডিং-এ আমার মাইক ঠিক করে দেন মানুষটা। আমার ভয়েসটা বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন। যেটা এখানে কেউ করে না।"

আরেকটি ঘটনার কথা তুলে ধরেন শিল্পী। সৌমিত্র বলেন, "নিজের জুতো খুলে স্টুডিয়োতে ঢুকেছিলাম আমি। আমাদের অভ্যাস এটা। ওখানে সবাই জুতো পরেই ঢোকে। জাকির জি'কে দেখলাম উনিও জুতো খুলে এলেন। ওঁর নাগরাইটা আমার জুতোর পশে রেখে এলেন। বললেন, এটাই বাংলার কালচার। ওয়ান টেক এ সেদিন হয়ে গিয়েছিল গানটা আমার। সেলিমরা মন দিয়ে শুনছিলেন আমার গান।

ছোট মা জানত যে আমি ওয়েস্টার্ন গানটা ভালোই গাই। তাই বড় মুখ করে আমার নাম সাজেস্ট করেন। খুব টেনশনে ছিলাম সেদিন। উনি সোফায় আর আমি মাটিতে বসে আছি। গান শুনে হঠাৎ আমার কাঁধে মাসাজ করতে শুরু করেন। যে হাতের জন্য সারা বিশ্ব পাগল। সেই হাত কিনা আমার কাঁধে। ওটাই আমার পরিশ্রমিক।

আরেকবার উনি নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান করতে এসেছেন। আমি ফোন করে অনুমতি চাই যে একবার আসতে পারব কি না ৷ সঙ্গে সঙ্গে বললেন, এসো এসো। পাশে বসে গল্প করেছিলাম সেদিন। অনেক বড় মাপের মানুষ। জ্ঞানের সাগর জাকির হুসেন।"

কলকাতা, 16 ডিসেম্বর: "যত কম বাজাবে তত ভালো বাজবে"- মায়েস্ত্রো তবলা বাদকের থেকে এমনই উপদেশ পেয়েছিলেন ভূমি ব্যান্ডের প্রধান সৌমিত্র রায় ৷ সেই স্মৃতি আজও উজ্জ্বল তাঁর কাছে ৷ বরেণ্য তবলা বাদক জাকির হুসেনের প্রয়াণে সেই কথা আজ ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে সৌমিত্রর ৷ সেই স্মৃতিতে উঁকি দিল ইটিভি ভারত।

সৌমিত্র এদিন জাকির হুসেনের স্মৃতিতে ডুব দিয়ে বলেন, "অপর্ণা সেন আমার মামি হন ৷ মুকুল শর্মা আমার মামা। আমাকে ফোন করে ছোট মা (অপর্ণা সেন) বম্বেতে ডাকেন। আমি তো প্রথমে ভয় পেয়ে যাই। এরপর ছোট মা (অপর্ণা সেন) জাকির হুসেনের সঙ্গে কথা বলতে বলে ফোনটা ধরিয়ে দেন হাতে। আমি তো ঘাবড়ে যাই এ কোন জাকির! ওপার থেকে একজন বলেন, সৌমিত্র জি আপ কাল আ সকেঙ্গে? কথাটা এমন ভাবে বললেন যেন কতদিন চেনেন আমাকে! আমি তো অবাক! পরদিন গেলাম। বাকিটা স্বপ্নের মতো।..."

সৌমিত্র বলেন, "সারাজীবন ওঁর যে কথাগুলো আমার মনে থাকবে তার মধ্যে একটা হল, উনি আমাকে বলেছিলেন, যত কম বাজাবে তত ভালো বাজবে। তত সুন্দর শুনতে লাগবে। অনেকে মুন্সিয়ানা দেখাতে গিয়ে বেশি বাজনা বাজিয়ে ফেলে।..."

আরেকটা কথা বলেন যে , "আমি এখনও পারফেক্ট 'ধা' (তবলায়) খুঁজে পাইনি। কতটা বিনয়ী হলে অত বড় মাপের একজন মানুষ ওরকম কথা বলতে পারেন। এত বছরের সাধনা, এত বড় মানুষ, এত গুণী মানুষ তিনি নিজে বলছেন যে তিনি নাকি এখনও নিজের পারফেক্ট 'ধা' খুঁজে পাননি। খুব হেসে হেসেই বলেছিলেন কথাটা।"

ফোনের ওপারে তখন সৌমিত্র কথা বলতে বলতে যেন ভেসে গিয়েছেন সেই সুমধুর স্মৃতিতে ৷ তিনি বলতে থাকেন, "একটা সময়ে তো আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাজাতাম আর গাইতাম। একটা ডায়েরিতে গান লেখা থাকত। সেই ডায়েরিতে একটা ছবি লাগানো ছিল আমার সেই দাঁড়িয়ে বাজানো আর গান গাওয়ার মুহূর্তের। ওই ডায়েরিটা সেদিন আমার সঙ্গে ছিল। উনি অনেক্ষণ ধরে ডায়েরিটা দেখছিলেন। পরে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি দাঁড়িয়ে গাও? আমি বললাম, হ্যাঁ। উনি বলেন, কীভাবে গাও? তুমি শিখেছ? বলি, না। উনি আমার প্রশংসা করেছিলেন সেদিন। সারাদিন কাটিয়েছিলাম ওঁর সঙ্গে। গানটা করার পর অন্তত কুড়ি বার লুপ-এ চালিয়ে দিয়েছিলেন। তখন সেলিম মার্চেন্ট, তওফিক কুরেশিরা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করছিলেন। রেকর্ডিং-এ আমার মাইক ঠিক করে দেন মানুষটা। আমার ভয়েসটা বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন। যেটা এখানে কেউ করে না।"

আরেকটি ঘটনার কথা তুলে ধরেন শিল্পী। সৌমিত্র বলেন, "নিজের জুতো খুলে স্টুডিয়োতে ঢুকেছিলাম আমি। আমাদের অভ্যাস এটা। ওখানে সবাই জুতো পরেই ঢোকে। জাকির জি'কে দেখলাম উনিও জুতো খুলে এলেন। ওঁর নাগরাইটা আমার জুতোর পশে রেখে এলেন। বললেন, এটাই বাংলার কালচার। ওয়ান টেক এ সেদিন হয়ে গিয়েছিল গানটা আমার। সেলিমরা মন দিয়ে শুনছিলেন আমার গান।

ছোট মা জানত যে আমি ওয়েস্টার্ন গানটা ভালোই গাই। তাই বড় মুখ করে আমার নাম সাজেস্ট করেন। খুব টেনশনে ছিলাম সেদিন। উনি সোফায় আর আমি মাটিতে বসে আছি। গান শুনে হঠাৎ আমার কাঁধে মাসাজ করতে শুরু করেন। যে হাতের জন্য সারা বিশ্ব পাগল। সেই হাত কিনা আমার কাঁধে। ওটাই আমার পরিশ্রমিক।

আরেকবার উনি নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান করতে এসেছেন। আমি ফোন করে অনুমতি চাই যে একবার আসতে পারব কি না ৷ সঙ্গে সঙ্গে বললেন, এসো এসো। পাশে বসে গল্প করেছিলাম সেদিন। অনেক বড় মাপের মানুষ। জ্ঞানের সাগর জাকির হুসেন।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.