কলকাতা, 29 অগস্ট: আরজি কর কাণ্ডে নির্যাতিতা যতদিন না বিচার পাচ্ছে ততদিন কলকাতার রাজপথে আন্দোলন চলবে ৷ তবে শুধু আরজি করের ঘটনা নয়, মেয়েদের নারী সুরক্ষা, অধিকার-সহ একাধিক দাবি বুধবার ফেসবুক লাইভে সামনে আনেন অভিনেত্রী সোহিনী সরকার ৷ পয়লা সেপ্টেম্বর কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা অবধি মহামিছিলের ডাক দিয়েছেন সোহিনী-সহ আরও অনেকে ৷ নাম দেওয়া হয়েছে 'আমরা তিলোত্তমা'। এদিন লাইভে সোহিনীর সঙ্গে ছিলেন আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার দেবনীলও।
দেবনীল বলেন, "দুর্নীতির অনেকগুলো দিন পেরিয়ে এসেছে। প্রথমে শোনার পর অবাক হয়েছিলাম। যে জায়গায় ঘটনাটা ঘটেছে সেটা আমাদের জন্য সবথেকে নিরাপদ আশ্রয় ছিল। হাসপাতালে ঢুকে বাড়িতে বলতাম 'ঢুকে গিয়েছি'। আমরা এই রুমে ডিউটিও করেছি। দোষী যতদিন না ধরা পড়ছে লড়াই চলবে। রাতের পর রাত জাগতে হলেও রাজি। নাগরিকের অধিকার নিয়ে 1 সেপ্টেম্বর পথে নামব আমরা।"
সোহিনী বলেন, "ভোটার কার্ড, আধার কার্ডের অধিকার নিয়ে রাস্তায় নামব আমরা। রাজনৈতিক পতাকা কাঁধ থেকে নামিয়ে সবাই আসুন মহা মিছিলে।" এদিন ফেসবুক লাইভে সোহিনী আরও বলেন, "আমার মনে হয় যে, কোন শিল্পীর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা উচিত নয় ৷ 2024-এ দাঁড়িয়ে সে তাঁর নিজের ভাষা প্রকাশ করতে পারবে না ৷ যিনি শাসক দলে আসার পর পদ পেয়ে গেলে আর ঠিক থাকেন না ৷ তার আগে সবাই বড় বড় কথা বলেন ৷ ক্ষমতা পাওয়ার পর, গদির উপর এমন মোহ-মায়া এমন কিছু রয়েছে যা মানুষকে আর মানুষ থাকতে দেয় না ৷ ফলে আমার মনে হয় একজন শিল্পীর নিজস্ব রাজনৈতিক চৈতনা-মতাদর্শ থাকতে পারে কিন্তু আলাদা করে শাসকদলের কোনও পদে যাওয়াতে এই সময় দাঁড়িয়ে আমি বিশ্বাস করি না ৷ কেউ গেলেও তার বিরোধিতা করছি আমি ৷"
এই মহা মিছিলে 'আমরা তিলোত্তমা' বেশ কিছু দাবি রেখেছে।
1) সিবিআইকে আরজি কর-এর স্বৈরাচার ও দুর্নীতির মূল ধারক ও বাহক এবং তাদের বাকি সঙ্গীদের গ্রেফতার করতে হবে। ঘটনার সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের দায়িত্বহীনতা এবং সেই সময়ে ঘটনাস্থলে এভিডেন্স ট্যাম্পারিং (evidence tampering)- এর জন্য তাঁকে ও বাকি দোষীদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ধর্ষণ ও খুনের নিরপেক্ষ ও দ্রুত বিচার করতে হবে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
2) শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, সমস্ত সরকারি দফতরের সিন্ডিকেট রাজ সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে।
3) দিনে ও রাতে যে কোনও সময়ে গণ পরিসরে নারী ও প্রান্তিক লিঙ্গ যৌনতার মানুষদের চলাচলের সুরক্ষা ও সমান অধিকার চাই।
4) নিয়ন্ত্রণ নয়, নজরদারি নয়, কর্মক্ষেত্র ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারী ও প্রান্তিক লিঙ্গ যৌনতার মানুষদের সমমর্যাদা চাই।
5) স্কুল পাঠ্যে লিঙ্গ সাম্য এবং মানবাধিকার বিষয়গুলিকে আবশ্যক করতে হবে।
6) প্রত্যেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আই.সি. সি ও স্থানীয় এলাকায় এল.সি. সি করতে হবে এবং তা নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ রাখতে হবে।
7) রাজ্য সর্বত্র সুলভ শৌচাগারও সুরক্ষিত গণ পরিবহণ ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে 24 ঘণ্টা।
8) রাতে হাসপাতাল থেকে শুরু করে সমস্ত কর্মক্ষেত্রে নারী ও প্রান্তিক লিঙ্গ যৌনতার মানুষদের জন্য সুরক্ষিত বিশ্রামাগার চাই৷
9) ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টের মাধ্যমে অমীমাংসিত ধর্ষণ ও যৌন হেনস্থার কেসগুলির অতি দ্রুত মীমাংসা করতে হবে।
10) ভিকটিম ব্লেমিং কাকে বলে, স্পষ্ট করে জানাতে হবে এবং সেটিকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
11) সর্বোপরি জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি নিঃশর্তভাবে মানতে হবে। এরই সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় বিশেষভাবে সক্ষমদের বিচার পাওয়ার কথাও।