কলকাতা, 9 অগস্ট: কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আপাদমস্তক সংস্কৃতিমনস্ক একজন মানু্ষ। তাঁকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেছেন, "বাংলার বিনোদন দুনিয়া বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর কাছে ঋণী।" তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা বাংলা। অদ্ভুত নিস্তব্ধতা নন্দন চত্বরেও।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর বন্ধুপ্রতীম তথা তাঁর মুখ্যমন্ত্রীত্ব কালে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক অংশু সুরের কাছ থেকে ইটিভি ভারত শুনে নিল নানা কথা। অংশু সুর বলেন, "বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পড়তে এবং লিখতে ভালোবাতেন। যেমন ভালো কবি ছিলেন, তেমনই ভালো প্রাবন্ধিক। গভীর পড়াশুনা ছিল ওঁর সব ব্যাপারে। আমি মুগ্ধ ওঁর পাণ্ডিত্যে। তাঁর সঙ্গে সুদীর্ঘ সময় কাটিয়েছি। স্মৃতির ভাণ্ডার তাই পরিপূর্ণ। কাজের সম্পর্কের বাইরেও ওঁর সঙ্গে আমার সখ্যতা, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা ছিল।"
তিনি আরও বলেন, "বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সিনেমা দেখতেন শুধু একজন দর্শকের চোখ দিয়ে নয়। একজন বোদ্ধার চোখ দিয়ে। যেখানে বিচার বুদ্ধি মাথার ভিতরে কাজ করত।" প্রসঙ্গত, 1993 সালের মাঝামাঝি সময়ে জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর মহাকরণ তো নয়ই, আলিমুদ্দিনেও যেতেন না বুদ্ধদেব বাবু। কিন্তু সন্ধের দিকে নন্দনের তিনতলায় সত্যজিৎ রায় আর্কাইভের 300 বর্গফুটের একটা ঘরে তাঁর দেখা মিলতই। একটা বড় কাঠের টেবিল আর তাকে ঘিরে চামড়ায় মোড়া ছয়টি চেয়ার। চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে এই ঘরেই বুদ্ধদেবের সন্ধ্যা কাটত কখনও সিনেমা দেখে, কখনও বইয়ের প্রুফ দেখে, আবার কখনও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে নির্ভেজাল আড্ডায়।
এই রুম নম্বর 205 আজ অফিস ঘরে পরিণত হয়েছে ৷ সকলের প্রবেশ অবাধ নয়। আর সত্যজিৎ রায়ের আর্কাইভ চলে গিয়েছে চলচ্চিত্র শতবর্ষ ভবনে (রাধা স্টুডিও)। তবে, নন্দনের তিনতলায় 205 নম্বর ঘরের বাইরের করিডোরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর আমলের কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের নানান মুহূর্তের ছবি সাজানো রয়েছে। যেগুলি দেখে বোঝা যায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কতখানি সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ ছিলেন।