কলকাতা, 8 ডিসেম্বর: 30 তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এশিয়ান প্রিমিয়ারে দেখানো হল গৌতম ঘোষ পরিচালিত 'পরিক্রমা'। ছবিতে গ্রামীণ কিশোর লালার সঙ্গে ইতালিয়ান কিশোরের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে একটি মানবিক বার্তা দিয়েছেন গৌতম ঘোষ। ভারত-ইতালির যুগ্ম প্রযোজনায় এই প্রথম তৈরি হয়েছে কোনও ছবি।
ইংরেজি, হিন্দি, ইতালিয়ান ভাষায় নির্মিত এই ছবিটি 114 মিনিটে বন্দি। পরিচালকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ছবিটি কি বাংলাতে ডাবিং হবে? তিনি বলেন, "সিনেমার ভাষাই আসল ভাষা। সবথেকে শক্তিশালী ভাষা।" ছবির সিনেমাটোগ্রাফিতে গৌতম ঘোষের সঙ্গে এই কাজে শামিল হয়েছেন তাঁর পুত্র ঈশান ঘোষ। সম্পাদনায় নীলাদ্রি রায়। সঙ্গীত পরিচালক গৌতম ঘোষ নিজেই। অভিনয়ে- মার্কো লিওনার্দি (অ্যালেক্স), চিত্রাঙ্গদা সিং (রূপা), আরিয়ান বরকুল (লালা) প্রমুখ।
ছবি নিয়ে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এসে গৌতম ঘোষ বলেন, "প্রযোজকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে আমার হোমটাউনে ছবিটা তিনি প্রিমিয়ার করতে দিয়েছেন। 20 বছর আগে থেকে এই আইডিয়া মাথায় ঘুরছিল। অবশেষে কাজটা হল।" ‘নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন’-এর সঙ্গে মা-হারা কিশোর লালার জীবন জুড়ে গিয়েছে। গৌতম ঘোষ বলেন, "পরিক্রমা কোনও স্লোগানধর্মী ছবি নয়। এখানে বাস্তব, অবাস্তব এবং পরাবাস্তব সবই আছে। কারোর কোনও প্রশ্ন থাকলে করতে পারে। আমি সমালোচনার জন্য প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, "এই ছবি ঘিরে আমার অনেক স্মৃতি। 20 বছর আগে আমার লেখক বন্ধুর মাথায় প্রথম বিষয়টি আসে। তিনি তাঁর ভাবনাকে দুই মলাটে বন্দি করে পাঠান আমার কাছে। উপন্যাস পড়েই ছবি করার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু প্রস্তুতি শুরু হয় 2019 সাল থেকে। প্রথম ভাগের শুটিং হয় ইতালিতে। সেই পর্ব শেষ হতেই বিশ্ব জুড়ে তাণ্ডব চালাতে শুরু করে অতিমারি। ঘটনাচক্রে অতিমারির প্রথম ঢেউও আছড়ে পড়ে ইতালিতে। আমরা দ্রুত সেই দেশ ছেড়ে ফিরে আসি। তারপর দীর্ঘ বিরতি। পৃথিবী সুস্থ হল। ফের শুটিং। এ বার ইতালি ছেড়ে ভারতে পা মার্কো লিওনার্দির। মধ্যপ্রদেশ-সহ নানা জায়গায় টানা শুটিং করেছি আমরা।"
লালার চরিত্রে আরিয়ান বেশ লাজুক। গৌতম ঘোষের কথায়, "আমি ওকে বলেছিলাম, আমি তোমার বন্ধু। গৌতম বলে ডেকো। কিন্তু ও আমাকে গৌতম স্যার বলতে চায়।" এদিন মার্কোর প্রশংসাতেও পঞ্চমুখ হন পরিচালক। মার্কোও তাই। মৃত নর্মদাকে দেখে কষ্ট পেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, সাংবাদিক সম্মেলনে ছবিকে ঘিরে উঠে আসে আরও দুটি ঘটনার কথা ৷ জানা যায়, কিশোর ‘লালা’ ওরফে আরিয়ান চিত্রনাট্য অনুযায়ী জিনিস বিক্রি করেন ৷ সেই সময় দুই পর্যটক তাঁকে সত্যিকারের বিক্রেতা ভেবে জিনিস কিনে 500 টাকা দিয়েছিলেন! পাশাপাশি, ছবিতে হনুমানদের নিয়ে শুটিং আর তাদের সঙ্গে সকালের জলখাবার খাওয়ার ঘটনা 'পরিক্রমা' টিম ভুলবে না বলে জানিয়েছে ।
ছবির গল্পে উঠে এসেছে, ইতালির চলচ্চিত্র পরিচালক আলেকজান্দ্রো পরিবেশ নিয়ে ছবি করেন। তিনি ভারতে এসেছেন নর্মদা আন্দোলনের খবর শুনে। এখানে এসেই তাঁর আলাপ হয় লালা নামের একজন রাস্তার কিশোরের সঙ্গে। গ্রামের ছেলে। শহরে এসেছে কাজের জন্য। নদীতে বাঁধ দেওয়ার জন্য তাঁর পরিবার তখন উদ্বাস্তু। আলেকজান্দ্রো ও লালার সম্পর্ক কোন সুতোয়, কীভাবে বাঁধা পড়ে তাই নিয়েই 'পরিক্রমা' ৷