কলকাতা, 11 ডিসেম্বর: উৎসবের শেষ বেলায় কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক তপন সিনহার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানানো হল তাঁকে। স্বনামধন্য পরিচালককে নিয়ে 'আপনজন' শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন শিলাদিত্য সেন, রাজা সেন, অশোক বিশ্বনাথন, শঙ্করলাল ভট্টাচার্য, অমিতাভ নাগ।
পরিচালক অশোক বিশ্বনাথন বলেন, "আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সম্বন্ধে জানতেন তপন সিনহা। উচ্চ মনের মানুষ ছিলেন। কিন্তু সেভাবে মূল্যায়ণ হয়নি তাঁর। খেলার ভাষায় বলতে গেলে, তপন সিনহা সেহবাগ অফ দ্য বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি।"
তিনি আরও বলেন, "অনেকে তপন সিনহার নানান সমালোচনা করতেন। আসলে তাঁকে ছোঁয়া সহজ ছিল। সত্যজিৎ, মৃণাল, ঋত্বিককে ধরা সহজ ছিল না। আবার সত্যজিতের বিরুদ্ধাচরণ করতে ঋত্বিককে খাঁড়া করা হত বা আজও হয়।"
শঙ্করলাল ভট্টাচার্য বলেন, "মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে যেতেন তপন সিনহা। অদ্ভুত সেন্স অফ হিউমার ছিল। উনি মানুষকে বেশি গুরুত্ব দিতেন।" অমিতাভ নাগ বলেন, "তপন সিনহাকে সত্যজিৎ, মৃণালের সঙ্গে এক পাতে বসার মতো পরিচালক ভাবা হত না তখন। আসল কারণটা হল, বাঙালি যে ভাবে দর্শনকে আত্মস্ত করেছিল তিনি তার পরিপন্থী ছিলেন। তপন তখন ইজি টার্গেট ছিলেন।"
তিনি আরও বলেন, " তপনের কাজের মূল্যায়ণ হয়নি কখনও। তাঁর ছবি দেখার জন্য রেস্টোরেশন দরকার। অনেক ছবিই তো রেস্টোরেশন হয়নি। 'আতঙ্ক', 'সাগিনা মাহাতো', 'আদালতে একটি মেয়ে', 'অন্তর্ধান'-এর সময়ে রাজনীতির শিকার হয়েছেন তিনি। শাসকের বিপক্ষে যেত তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ।" শিলাদিত্য সেন বলেন, "কোনও বিশেষ মানুষের জন্মশতবর্ষ এলে বাঙালি জেগে ওঠে। এর আগে পরে তাঁকে আর কেউ মনে রাখে না। একক লড়াইতে বিশ্বাসী ছিলেন তপন সিনহা। রাজ রোষের বিরুদ্ধে লড়তেন তপন সিনহা।"
এই অনুষ্ঠানে তপন সিনহার সঙ্গে নানা সময়ে কাজ করেছেন এমন 24জন শিল্পী এবং কলাকুশলী সম্বর্ধিত হন। সম্বর্ধনা জানান নন্দনের সিইও তথা ফেস্টিভ্যালের ডিরেক্টর শর্মিষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ফেস্টিভ্যালের চেয়ারম্যান গৌতম ঘোষ। হাজির ছিলেন দীপঙ্কর দে, দুলাল লাহিড়ী, দেবিকা মুখোপাধ্যায়, লাবণী সরকার, তপন সিনহার পুত্র ড: অনিন্দ্য সিনহা, মুনমুন সেন, রজতাভ দত্ত, শকুন্তলা বড়ুয়া, কৌশিক সেন, বাসবী বন্দ্যোপাধ্যায়, সোনালী গুপ্ত, সুমন্ত মুখোপাধ্যায়, সনৎ মোহান্ত, রূপচাঁদ কুণ্ডু, শমিক হালদার, জয় চন্দ্র চন্দ, অর্জুন চক্রবর্তী, রবি চৌধুরী, মন্দিরা চৌধুরী, রোমি চৌধুরী,
সোনালী গুপ্ত, সুমন্ত মুখোপাধ্যায়, সনৎ মোহান্ত, গৌর কর্মকার, রূপচাঁদ কুন্ডু, শমিক হালদার, মাধবী মুখোপাধ্যায়।
দীপঙ্কর দে বলেন, "তপন দা সাধারণ মানুষদের নিয়ে গল্প করতেন। সাহিত্য নিয়ে ছবি করতেন। 'বাঞ্ছারামের বাগান' ছবিতে যে চরিত্র উত্তম কুমারের করার কথা ছিল সেটা উনি অসুস্থতার জন্য পারেননি। সেটা আমাকে দিয়ে করান। উত্তম দা তখন বেলভিউতে ভর্তি। একজনকে গিয়ে স্ক্রিপ্ট নিয়ে আসেন। আমাকে দেন। উত্তম দা'কে ফোন করতেও বারণ করেছিলেন উনি। এরপরে তপন দা'র বিরুদ্ধে উত্তম দা, বেণু দি কেস করেন। সে এক ইতিহাস। "
মুনমুন সেন, "কলকাতায় আর বাংলা ছবি হয় না। যদি হত তা হলে আজ তপন দা'র অনুষ্ঠানে এই হলটা ভরে যেত ৷ বিরাট বড় ডিরেক্টর ছিলেন। পারফেক্ট জেন্টলম্যান ছিলেন তপন দা।" মাধবী মুখোপাধ্যায় বলেন, "ভালো গান গাইতেন, বাঁশি বাজাতেন। সুর, তাল, লয় না জানলে ছবি বানাতে পারবে না কেউ। তাই ওঁর ছবি বানানোতে ছন্দ কাটেনি কখনও...।"
ইটিভি ভারতকে কৌশিক সেন বলেন, "তপন সিনহা পরিচালক না হলে ভালো অভিনেতা হতেন।" এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দেবিকা মুখোপাধ্যায়, রজতাভ দত্ত, লাবণী সরকার, কৌশিক সেন।