মুম্বই, 28 নভেম্বর: মুক্তির সময় যত এগিয়ে আসছে ততই 'পুষ্পা 2: দ্য রুল' নিয়ে দর্শকমহলে আগ্রহ বাড়ছে ৷ সম্প্রতি সামনে এসেছে ছবির আইটেম গান কিসিক ৷ আল্লু অর্জুন ও শ্রীলীলার কেমিস্ট্রি মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে নেটপাড়ায় ৷ মিউজিক দিয়েছেন শিল্পী দেবী শ্রী প্রসাদ ৷ গানের কথা লিখেছেন অস্কারজয়ী চন্দ্রবোস ৷ এই গানের কোরিয়োগ্রাফ করেছেন গণেশ আচারিয়া ৷ কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা, ইটিভি ভারতের সঙ্গে কথা বললেন গণেশ আচারিয়া ৷
'কিসিক' গানের সঙ্গে প্রথমেই তুলনা এসেছে 'পুষ্পা:দ্য রাইজ' ছবির ও আন্তাভা গান ৷ এই বিষয়ে গণেশ বলেন, " ও আন্তাভা যেমন দর্শক মহলে জনপ্রিয় হয়েছিল, তেমনই এই গান জনপ্রিয় হে উঠবে ৷ আমরা সবেমাত্র একটা ঝলক দেখিয়েছি ৷ যখন গানটা মুক্তি পাবে তখন দর্শক ও শ্রোতারা বুঝতে পারবেন কোন লেভেলে গিয়ে এই গান তৈরি হয়েছে ৷ আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই কথা বলতে পারি ৷"
এর আগে সামান্থার সঙ্গে ও আন্তাভা কোরিয়াগ্রাফ করেছেন গণেশ ৷ সেখানে হুক স্টেপ ভাইরাল হয়েছিল ৷ এই গানেও কি তেমন কিছু আছে? প্রশ্ন শুনে কোরিয়াগ্রাফারের জবাব, "আমার প্রত্যেক গানে একটা হুক স্টেপ থাকবেই ৷" গণেশ জানান, আসলে এখন 'কিসিক' গানের সঙ্গে যখন আল্লু ও শ্রীলীলার মুভ সামনে আসবে তখন তা আরও ঝড় তুলবে ৷ তিনি বলেন, "আমি কখনও এত প্রেসার নিয়ে কাজ করিনি ৷ আমি সবসময় নিজের সেরাটা দিতে চেয়েছি ৷ আমি যখন পুষ্পা ফার্স্ট পার্ট করেছিলাম, নিজের সেরাটা দিয়েছিলাম ৷ আমার কাছে নতুন কোনও গান কোরিয়োগ্রাফ করা মানে সেটা প্রথম কাজ হিসাবেই ট্রিট করি ৷ ফলে ও আন্তাভা হিটের প্রেসার এই গানের সময়ও নিইনি ৷"
পাশাপাশি, শ্রীলীলার নাচের প্রশংসা করেছেন গণেশ ৷ তিনি বলেন, "শ্রীলীলা অসাধারণ ডান্সার ৷ সেনসুয়ালিটি দেখানোর নানা ধরন হয় ৷ আমি অভিনেত্রীদের বেশি এক্সপোজ করায় বিশ্বাস করি না ৷ অ্যাটিটিউডও কাজ করে ৷ চিকনি চামেলি, ছম্মা ছম্মা, বিড়ি জ্বলাইলে-র মতো গান সেই কারণে সেনসেশন তৈরি করতে পেরেছে ৷ আমি জানি নাচের মাধ্যমে কীভাবে একজন অভিনেতাকে সামনে রাখা যায় ৷"
প্রায় 200টির মতো ছবিতে 500টির মতো গান কোরিয়োগ্রাফ করেছেন গণেশ আচারিয়া ৷ 30 বছর ধরে তিনি বলিউডে কাজ করে চলেছেন ৷ এখন তিনি সকলের কাছে মাস্টারজি হিসাবে পরিচিত ৷ বলিউডের পর এবার তিনি দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নাচের মুভমেন্ট দিয়ে নজর কাড়ছেন ৷
শুধু আল্লু অর্জুন নয়, কিছুদিন আগেই দেবারা ছবিতে জুনিয়র এনটিআর ও গেমচেঞ্জার ছবিতে রামচরণের সঙ্গে কাজ করেছেন গণেশ ৷ দক্ষিণী বিনোদন জগতে কাজ করা নিয়ে তিনি বলেন, "এদের প্রত্যেকের সঙ্গে কাজ করে ভালো লেগেছে ৷ প্রত্যেকের জন্য একটা আলাদা ডান্স মুভ মাথায় রেখে কাজ করেছি ৷ আসলে আমি রাস্তায় মানুষের হাঁটাচলা লক্ষ্য করি ৷ সেখান থেকে নাচের মুভমেন্ট নিয়ে ভাবি ৷ আমি এই কারণে পুষ্পা ছবির পরিচালককে জানিয়েছিলাম, আল্লু যদি হাতটা উঁচু করে চিনটা ডাউন করে তাহলে অন্যরকম লাগবে ৷ এখন সেই মুভ আইকনিক হয়ে গিয়েছে ৷"
বলিউডের সঙ্গে দক্ষিণী বিনোদন জগতের পার্থক্য সম্পর্কে গণেশ জানান, তেমন কোনও পার্থক্য নেই ৷ তবে এখন দক্ষিণী বিনোদন জগৎ অনেক ভালো করছে ৷ তবে, দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে একে অপরকে গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয় ৷ একজন অভিনেতা বা সিনেমা জগতের ব্যক্তি যেমনই হোক না কেন, তাঁর প্রতি সমান নজর থাকে ৷ কিন্তু বলিউডে সকলে স্টারডমের দিকে দৌঁড়ান ৷ বলিউডে স্টারেদের কথা শুনে চলেন পরিচালক ৷ তাঁদের কথা মতো চিত্রনাট্যে পরিবর্তন করেন, নিজেরা রাজি না থাকলেও ৷ তবে প্রত্যেকে নিয়ম মেনে চলেন ৷ সেখানে সেটে সময় মতো আসা থেকে শুরু করে তারকারা মেনে চলেন পরিচালকের সব কথা ৷
আচারিয়া তাঁর কোরিওগ্রাফির জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, জাতীয় পুরস্কার এবং আইফা পুরস্কার-সহ একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। 'ভাগ মিলখা ভাগ' [2013]-এর 'হাওয়ান কুন্দ' এবং 'টয়লেট: এক প্রেম কথা' (2017)-এর 'গরি তু লাঠ মার' গানগুলির জন্য শ্রেষ্ঠ কোরিওগ্রাফির হিসাবে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। 61তম ফিল্মফেয়ার অনুষ্ঠানে তিনি 'বাজিরাও মস্তানি' (2015) এর 'মালহারী' গানের জন্য সেরা কোরিওগ্রাফার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। ওমকারা (2006) এর 'বিড়ি জ্বলাইলে' গানে 2007 সালে সেরা কোরিওগ্রাফির জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছিলেন।
নয়ের দশকে গোবিন্দা ও গণেশের জুটি আজও জনপ্রিয় দর্শক মহলে ৷ গণেশ বলেন, "গোবিন্দা আমার অল-টাইম ফেভারিট ৷ কিসি ডিসকো মে জায়ে, হোয়াট ইস ইয়োর মোবাইল নম্বর, রাম নারায়ন-এর মতো গান হিউজ হিট দিয়েছে ৷ নয়ের দশককে গোল্ডেন পিরিয়ড বলা যায় ৷" তিনি আরও বলেন, "তবে নাচের বিষয়ে সানি দেওলকে শেখানো সহজ কিন্তু গোবিন্দাকে নয় ৷ আমি সানিকে যেমন বলতাম ও শিখে নিতে পারত ৷ কিন্তু গোবিন্দার সঙ্গে আমাকে সবসময় নতুন স্টেপ নিয়ে কাজ করতে হত ৷ কারণ সেম স্টেপস একদম পছন্দ ছিল না গোবিন্দার ৷" তিনি জানিয়েছেন, এখনকার তারকা রণবীর কাপুর, রণবীর সিং ও টাইগার শ্রফের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা দারুণ ৷ এমনকী, তিনি ডাঙ্কি ছবিতে শাহরুখ খানকেও কোরিয়োগ্রাফ করেছেন ৷
কেরিয়ারে সাফল্যের রহস্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে গণেশ বলেন, "একমাত্র তোমার কাজই কথা বলবে ৷ আর অন্য কোনও কিছু নয় ৷ বলিউড, হলিউড কিংবা টলিউড যেখানেই কাজ হোক না কেন সবার আগে তা নিজেকে জানতে হবে ৷ আমি সবসময় পরিশ্রম করেছি ৷ তারই প্রতিফলন ধরা পড়েছে বিভিন্ন গানে ৷ আমি একজন তামিলিয়ান হয়েও বলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করতে পেরেছি ৷ আমি বিনোদনের প্রতিটা ইন্ডাস্ট্রিকে সম্মান করি ৷ আমি কোনও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে পার্থক্য খুঁজি না ৷ আমি ইন্ডাস্ট্রিতে 42 বছর ধরে রয়েছি শুধুমাত্র পরিশ্রম ও কাজের জন্যই ৷