কলকাতা, 21 অক্টোবর: প্রতিবাদ সার্থক হল তথাগত মুখোপাধ্যায়ের । তাঁর হুঙ্কারেই শেষমেশ হাঁফ ছেড়ে বাঁচল এক অবলা শিশু ।
বৈদ্যবাটির নার্সারি রোডের এক দুর্গাপুজোর মণ্ডপে পুজোর বিষয়বস্তুকে জীবন্ত করতে একটি উটের গলায় শিকল পরিয়ে তাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল । বিষয়টি চোখে পড়তেই গর্জে ওঠেন টলিউড অভিনেতা ও পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়-সহ আরও কয়েকজন । বিষয়টি সাংসদ-অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে আনারও চেষ্টা করেন বলে ইটিভি ভারতকে জানিয়েছিলেন তথাগত । ফোনে সাড়া না পাওয়ায় তিনি বাধ্য হয়ে রচনাকে মোবাইলে বার্তা লিখে পাঠান । তাতেও সাংসদের সাড়া মেলেনি বলে দাবি করেছিলেন অভিনেতা । তথাগত এরপর যোগাযোগ করেন পুজোর উদ্যোক্তাদের সঙ্গেও । তাঁদের দাবি, পুলিশের অনুমতি নিয়েই নাকি তাঁরা উটটিকে মণ্ডপে রেখেছেন ।
তবে, অবশেষে উদ্ধার করা গিয়েছে উটটিকে । এমনটাই জানিয়েছেন স্বয়ং তথাগত মুখোপাধ্যায় । তিনি সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, "একটা অসহায় অবলা জীবের জন্য চিৎকার করেছিলেন, করেছিলাম আমরা অনেকে । তাই আজ উটটির জন্য একটা সুস্থ জীবনের সম্ভাবনা প্রস্তুত । বৈদ্যবাটির নার্সারি রোডের পুজো মণ্ডপের সেই উটটি আজ উদ্ধার হল হাইকোর্টের নির্দেশে । জানতে পারলাম স্থানীয় কিছু লোকজন উটটিকে নিয়ে যেতে বাধা প্রদান করেছিল । শেষে হাইকোর্টের নির্দেশ থাকায় স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় উটটি উদ্ধার হয় । বৈদ্যবাটি অঞ্চলে নার্সারি রোডের পুজোর মানুষজনের ঔদ্ধত্য এবং নিষ্ঠুর ভাবনাতে আমি শঙ্কিত ।"
তিনি আরও লেখেন, "আপনার এলাকায় অবলা পশুদের উপর কোনও রকম অত্যাচার হলে প্রতিবাদ করার, আওয়াজ তোলার দায়িত্ব কিন্তু আপনার । এভাবেই একদিন পালটাবে পরিস্থিতি । পরবর্তীতে উটটির গন্তব্য, ভবিষ্যৎ সবটাই আপডেট করব ।" অবশেষে উট চলেছে রেসকিউ সেন্টারে, হাইকোর্টের ফের নির্দেশের আগে সে থাকবে সেখানেই ।
বৈদ্যবাটির নার্সারি রোডের 'ঐক্যতান'-এর মণ্ডপের থিম ছিল 'হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো'। সেখানেই মণ্ডপ সজ্জায় জ্যান্ত উটকে ব্যবহার করা হয়েছিল ৷ একটা উটকে এভাবে আটকে রাখা অত্যন্ত অমানবিক বলে দাবি করেন তথাগত মুখোপাধ্যায় । তাঁর কথায়, "উট কামড়ে দেয় বলে ওর মুখে মাজল (নেট) পরিয়ে রাখা হয়েছিল । যা আরও অমানবিক ।"
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের 2015 সালের আদেশ অনুযায়ী, উট গৃহপালিত পশু । তাকে বেআইনি পাচার বা কেনাবেচা করা যায় না । উটকে তাই রাজস্থানের বাইরে কোথাও উন্মুক্তভাবে রাখার নিয়ম নেই । দিন কয়েকের জন্য কোথাও ভাড়া নিয়ে যেতে হলে আইনি অনুমতির প্রয়োজন । সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে অনুমতি নিতে হয় ।
'গৃহপালিত প্রাণী' হওয়ার সুবাদে উটের কিছু আইনি রক্ষাকবচ এদেশে আছে । প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস অ্যাক্ট (1960), পারফর্মিং অ্যানিম্যালস রুলস (1973) এবং ট্রান্সপোর্ট অফ অ্যানিম্যালস রুলস (1978) মেনেই উটকে কোনও অনুষ্ঠান বা মনোরঞ্জেনর কাজে ব্যবহার করা যায় ।
বৈদ্যবাটির ঘটনায় পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে তথাগত প্রশ্ন তুললে তাঁরা জানান, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ওড়িশা থেকে উটটি নিয়ে আসা হয়েছে । প্রশাসন এ ভাবে মণ্ডপের বাইরে একটি প্রাণীকে বেঁধে রাখার অনুমতি দিয়েছেন, সেটা ভেবেই অবাক হন অভিনেতা । একইসঙ্গে এই ঘটনায় বিরক্তও হন তিনি । তিনি সোমবারও ইটিভি ভারতকে বলেন, "সাংসদ নীরব ।"