হায়দরাবাদ, 5 নভেম্বর: ভারতীয় সঙ্গীত জগতে অনবদ্য শিল্পী ভূপেন হাজারিকা ৷ বাংলা, হিন্দি, আসামিজ-সহ একাধিক ভাষায় গানের জাদু তৈরি করেছে রূপকথা ৷ আজ শিল্পীর 13তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ফিরে দেখা তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি ৷ 1926 সালের 8 সেপ্টেম্বর অসমে জন্মগ্রহণ করেন কিংবদন্তী শিল্পী ৷ অত্যন্ত দরাজ গলার অধিকারী শিল্পী প্রথমে অসমীয়া চলচ্চিত্র সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন ৷
এরপর ধীরে ধীরে বাংলা ও হিন্দি গানরে জগতে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে ৷ 'আজ জীবন খুঁজে পাবি', 'আমি এক যাযাবর', 'গঙ্গা আমার মা', 'হে দোলা হো দোলা', 'সাগর সঙ্গমে', 'বিস্তীর্ণ দুপারে'-র মতো একাধিক গান আজও শিহরণ তোলে শ্রোতাদের মনে ৷
1993 সালে মুক্তি পায় 'রুদালি' ৷ ছবিতে 'দিল হুম হুম করে' গান আজও সমান জনপ্রিয় ৷ শিল্পীর গান প্রায়শই দুঃখ, স্থিতিস্থাপকতা এবং মানবতার চেতনাকে উদযাপন করে ৷ আসলে এই গানটা এসেছে হাজারিকার আসামীজ গান 'বুকু হম হম করে' থেকে ৷ 'রুদালি'র পরিচালক কল্পনা লাজমি ছবির চিত্রনাট্য অনুযায়ী এর হিন্দি ভার্সন সিনেমায় ব্যবহার করেন ৷ হিন্দি গানের কথা লেখেন গুলজার ৷ গানে 'হম হম'-এর জায়গায় গুলজার ব্যবহার করেন 'হুম হুম' ৷ এই গানে ছবিতে দেখা গিয়েছে ডিম্পল কাপাডিয়াকে ৷
পরিচালক লাজমি ভূপেন হাজারিকার কাছের মানুষ ছিলেন ৷ এক সাক্ষাৎকারে 'রুদালি' তৈরির নেপথ্যের গল্প বলার সময় উঠে আসে দিল হুম হুম করে গানের কথা ৷ জানা যায়, অনস্ক্রিন ডিম্পলকে চিত্রায়ন করার জন্য এই গান লতা মঙ্গেশকরকে দিয়ে গাওয়ানো হয় ৷ কিন্তু ডাবিং সেশনে হাজারিকার কণ্ঠ শোনার পর লতাজি ও রেকর্ডিং ইঞ্জিনিয়র অমিল সুদ ঠিক করেন ভূপেনজির কণ্ঠেই গান রাখবেন ৷
এরপরেই উঠে আসে ছবির গুরুত্বপূর্ণ এক দৃশ্যের কথা ৷ লাজমি স্মৃতিচারণে জানান, শনিচড়ির চরিত্রে ডিম্পল কাপাডিয়া ছবির টিমকে অনুরোধ করেছিলেন, শুটিং চলার সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে ভূপেন হাজারিকার দিল হুম হুম করে গান চালানোর জন্য ৷ এতে নাকি তাঁর চরিত্রে প্রবেশ করতে সুবিধে হত ৷ প্রত্যন্ত এক মরুভূমিতে ভোর চারটের সময় শুটিং ৷ শ্যুট হচ্ছে যেখানে শনিচড়ি মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে অবশেষে ভেঙে পড়বে ৷
প্রথমবার তাঁর চোখে জলের বন্যা বইবে ৷ পরিচালক বলেন, "এই ছবির যখন শটে যকন শনিচড়ি কান্নায় ভেঙে পড়েন তখন সেই কান্নার শব্দের উপর চাপানো হয় ভূপেনজির গান ৷ মরুভূমিতে সেই শব্দ যেন চরিত্রের চিৎকার রূপে ফিরে ফিরে আসছিল ৷" রুদালি যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা জানেন ছবির এই দৃশ্য কতটা ইমপ্যাক্ট ফেলেছিল মনের গভীরে ৷