সিমলা, 2 নভেম্বর: পাথরের মেলা অর্থাৎ যে মেলায় পাথর ছোড়াই রেওয়াজ ৷ সেই পাথর কারও গায়ে লাগলে এবং তার গা দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরলে তখন শান্তি ৷ বন্ধ হবে পাথর ছোড়া ৷ আহত ব্যক্তির গা দিয়ে যে রক্ত বেরবে, সেই রক্তে পুজো হবে মা কালীর ! এমন আজব ঘটনা ঘটে ভারতের হিমাচল প্রদেশে ৷
রাজধানী সিমলা থেকে 30 কিমি দূরে অবস্থিত ধামীর হলোগ এলাকায় প্রতি বছর দীপাবলির পরের দিন পাথরের মেলার আয়োজন করা হয় ৷ এর নেপথ্যে রয়েছে ধর্মীয় মাহাত্ম্য ৷ পাথরের ঘায়ে জখম হওয়া ব্যক্তির রক্ত দিয়ে মা ভীমকালীর কপালে তিলক কাটা হবে ৷ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এমনটাই চলে আসছে ৷
এবারও দীপাবলির পরের দিন পাথরের মেলার আয়োজন হয়েছিল ৷ দুপুর 2টোর পর ধামীর প্রধান মোড়ে কটেডু এবং জমোগী বংশের লোকজন জড়ো হয় ৷ তাঁরা দু'ভাগ হয়ে একে অপরকে নিশানা করে পাথর ছুড়বে ৷ ধামীর রাজপরিবারের সদস্যরা হাজির হওয়ার পর আরম্ভ হয় পাথর ছোড়াছুড়ি ৷ এবছর জমোগী বংশের সুরেন্দ্র নামের এক ব্যক্তির গায়ে পাথর লাগে ৷ সেই আঘাতে তাঁর গা দিয়ে রক্ত বেরতে থাকে ৷ এরপর পাথর ছোড়ার খেলা বন্ধ হয় ৷ সুরেন্দ্রর রক্তে মায়ের কপালে তিলক কাটা হয় ৷ শেষ হয় পাথরের মেলা ৷
এটাই পরম্পরা
কথিত আছে, কয়েকশো বছর আগে ধামী রাজ্যে মা ভীমকালীর মন্দির ছিল ৷ সেখানে নরবলির প্রচলন ছিল ৷ ধামীর রাজা রানার রানি এই নরবলি প্রথার বিরোধিতা করেন ৷ এর প্রতিবাদে রানি মন্দির লাগোয়া একটি জায়গায় মৃত্যু বরণ করেন অর্থাৎ সতী হন ৷ রানির সতী হওয়ার পর ধামী রাজ্যে নরবলি বন্ধ হয় ৷ ভীমকালীর কাছে পশু বলি দেওয়া হয় ৷ পরে পশু বলি দেওয়ার প্রথাও বন্ধ হয়ে যায় ৷ তারপরই শুরু হয় এই পাথর ছোড়ার মেলা ৷ দুই বংশের লোকজন দু'ভাগ হয়ে একে অপরকে পাথর ছুড়তে থাকেন ৷ যেখানে এই পাথর ছোড়ার খেলা হয়, তাকে চৌরা বলা হয় ৷
এই পাথর মেলার অদ্ভুত বিষয়, যে ব্যক্তির গায়ে পাথর লেগে রক্ত বেরয়, তিনি আনন্দিত হন ৷ তাঁর রক্ত মা ভীমকালীকে অর্পণ করা হয় ৷ তারপরই সাঙ্গ হয় পাথরের মেলা ৷ এই সময় স্থানীয় প্রশাসনের তরফে অ্যাম্বুল্যান্স, চিকিৎসকদের দলের ব্যবস্থা করা থাকে ৷