কোরবা, 30 অক্টোবর: আলোর উৎসবে ঘরবাড়ি সাজিয়ে তুলতে ব্যস্ত সবাই ৷ তখন ভাঙার খেলা চলে অন্য কোথাও ৷ ছত্তিশগড়ের কোরওয়া এবং বীরহোর জনজাতির মানুষের কাছে দীপাবলি মানে ঘর ভাঙার সময় ৷ তাই তাদের ঘর আর পাকা হয়ে ওঠে না ৷ নেই আবাস যোজনার টাকা নেওয়ার রেওয়াজও ৷
শুনতে অবাক লাগলেও আলোর উৎসবের দিন ছত্তিশগড়ের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে ঘর ভাঙেন কোরওয়া ও বীরহোর জনজাতির মানুষ ৷ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এমনটাই চলে আসছে প্রান্তিক মানুষদের মধ্যে ৷ আগামী প্রজন্মের মধ্যেও এই রীতির প্রচলন করতে চান তাঁরা ৷
ঘর কেন ভাঙা হয় ?
দেবপাহাড়ি, দেবদুরা এবং ছাতাবাহার কোরবা জেলার অংশ ৷ এখানেই বাস কোরওয়া ও বীরহোর জনজাতির ৷ পরিবারের কারও মৃত্যু হলে দীপাবলিতে মাটি দিয়ে তৈরি ঘর ভেঙে ফেলেন তাঁরা ৷ তারপর আবার নতুন করে তৈরি হয় ঘর ৷
কোরাই গ্রামের এক বাসিন্দা বুধওয়ার সাই কোরওয়া বলেন, "ঘর ভেঙে আমরা ওই মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্য সম্পন্ন করি ৷ এরপর নতুন করে শুরু ৷ একই জায়গায় নতুন করে ঘর বানাই ৷ কয়েক যুগ ধরে এটা হয়ে আসছে ৷ যে ঘরে কোনও আত্মীয় বা পূর্বপুরুষের মৃত্যু হয়েছে, সেই ঘর এই দীপাবলিতে ভেঙে ফেলাই আমাদের রীতি ৷ আর ওই মৃত ব্যক্তির স্মরণে ভালো আহারের আয়োজন হয় ৷"
ছত্তিশগড়ের প্রত্যন্ত এই গ্রামগুলিতে পৌঁছয়নি আলোর রোশনাই ৷ মানুষের বেঁচে থাকার প্রাথমিক প্রয়োজন পরিস্রুত পানীয় জল থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা থেকেও তাঁরা বঞ্চিত ৷ দীপাবলির শহুরে উদযাপন থেকে কয়েক আলোক বর্ষ দূরে তাদের বাস ৷
বীরহোর সম্প্রদায়ের দিল রাম দেবদুরাইতে থাকেন ৷ তিনি বললেন, "দীপাবলি আমাদের কাছে আলো আর মিষ্টির উৎসব নয় ৷ এটা স্মরণের দিন ৷ বাকি দুনিয়ার মতো আমরা দীপাবলির উদযাপন করি না ৷ এদিন আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্মান জানাই ৷ আমাদের পরিবারের কারও মৃত্যু হলে তাঁদের কথা মনে রেখে আমরা ঘর ভেঙে ফেলি ৷ তারপর আমরা নতুন ঘর গড়ি ৷ আমাদের জন্য এটা একটা নতুন শুরু ৷"
দিল রাম অনেক আগেই তাঁর বাবা-মাকে হারিয়েছেন ৷ স্কুলে যাওয়া হয়ে ওঠেনি তাঁর ৷ কিন্তু এদিনে নিজের ঐতিহ্যকে বহন করে চলার দিন, তাই এটা তাঁর কাছে বিশেষ ৷ দিল রাম জোর দিয়ে বলেন, "আমি হয়তো জীবনে কখনও ক্লাসে বসিনি ৷ কিন্তু আমার এই ঐতিহ্য একান্ত আমার ৷ এটা আমার শিকড় ৷ আমি চাই আমার পরবর্তী প্রজন্মও এটা মেনে চলুক ৷"
দেবদুরাইয়ের আরেক বাসিন্দা সোবিন সাই বীরহোর ছত্তিশগড়ের জঙ্গলে তাঁদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের কথা তুলে ধরলেন ৷ তিনি বলেন, "আমরা এমন একটা জায়গায় থাকি যেখানে বিদ্যুৎ নেই, জল নেই, রাস্তাও নেই ৷ পুরো গ্রামটাই অন্ধকারে থাকে ৷ সোলার লাইট থাকলেও প্রতি রাতে সেই আলো মাত্র কয়েক ঘণ্টা পাওয়া যায় ৷ এসব সত্ত্বেও আমাদের চিরাচরিত প্রথার প্রতি আমরা দায়বদ্ধ ৷ দীপাবলির দিন আমরা ঘর ভাঙি ৷ সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া করি ৷ আমাদের জীবন যাপন সরল কিন্তু ঐতিহ্য সমৃদ্ধ ৷ কেউই এটা হারাতে চায় না ৷"
ছত্তিশগড়ের জঙ্গলে গুলির লড়াইয়ে নিকেশ 8 নকশাল, শহিদ এক নিরাপত্তারক্ষীও