অযোধ্যা, 22 জানুয়ারি: অযোধ্যায় রাম মন্দিরে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের আবহে জগৎগুরু রামভদ্রাচার্য সমস্ত 'সনাতন' অনুসারীদের জন্য তাঁর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ৷ একই সঙ্গে নিজেদের জীবনে ভগবান রামের মূল্যবোধ অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বানও জানিয়েছেন। জগদগুরু বলেন, "আমি রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে সনাতন ধর্মের সমস্ত লোককে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমি চাই, প্রত্যেকে তাঁদের জীবন ও আচরণে প্রভু রামের বৈশিষ্ট্যগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করুন। আজ ত্রেতাযুগ তার ছায়া ফেলছে কলিযুগে। ভগবান রামের 'বনবাস' থেকে অযোধ্যায় ফিরে আসার মতো একই আনন্দ আজ অনুভব করা যেতে পারে ৷"
যারা এই প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, জগদগুরু বলেন, "বিনাশ কালে বিপরীত বুদ্ধি ৷" তাদের সম্পর্কে এর বেশি আর কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। যোগগুরু রামদেব যিনি প্রাণ প্রতিষ্ঠাও সাক্ষী ছিলেন এদিন । তাঁর মতে, এটি দেশে রাম রাজ্যের একটি নতুন সূচনা। রামদেব বলেন, "আমরা আগে যথন এখানে এসেছিলাম তখন রামলালা তাঁবুতে ছিলেন। আজ, একটি বিশাল মন্দির তৈরি হয়েছে। আজ সনাতনের একটি নতুন ইতিহাস তৈরি হচ্ছে। রাম মন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, 'রাম রাজ্যের' নতুন সূচনা হচ্ছে।" একই অনুভূতি কার্যত প্রতিধ্বনিত হয়েছিল বাগেশ্বর ধামের ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীর মধ্য়েও ৷ তিনি বলেন, "এটি ভারতের জন্য একটি গর্বের দিন ৷ এটি 'রাম রাজ্যের' সূচনা। আমার হৃদয় পূর্ণ ৷ আমরা সকলেই খুব খুশি ৷"
রাম লালার 'প্রাণপ্রতিষ্ঠা' পৌষ শুক্লা কুর্ম দ্বাদশী, বিক্রম সংবত 2080-এর জন্য নির্ধারিত হয়েছিল ৷ যা এদিন সোমবার 22 জানুয়ারি ছিল ৷ প্রাণপ্রতিষ্ঠা এদিন 12.30 টার দিকে শুরু হয় ৷ শেষ হয় দুপুর একটায় ৷ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবত, উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেল এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ-সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন ৷ প্রাণ প্রতিষ্ঠার মুহূর্তে সেনা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে রাম মন্দিরের উপর ফুল বর্ষণ করা হয় ৷ একই সঙ্গে, 30 জন শিল্পী প্রাণপ্রতিষ্ঠা উপলক্ষ্যে আরতির সময় মন্দির চত্বরে বিভিন্ন ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রের মধ্য দিয়ে মঙ্গলধ্বনি বাজানো হয় ৷
ঐতিহাসিক প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে দেশের সকল প্রধান আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও এদিন উপস্থিত ছিলেন ৷ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি-সহ সর্বস্তরের মানুষও উপস্থিত ছিলেন। গর্ভগৃহে প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিরা রামলালার দর্শন করতে পারবেন বলেও জানা গিয়েছে। শ্রীরাম জন্মভূমি মন্দিরটি ঐতিহ্যবাহী নাগারা শৈলীতে নির্মিত। এর দৈর্ঘ্য (পূর্ব-পশ্চিম) 380 ফুট; প্রস্থ 250 ফুট এবং উচ্চতা 161 ফুট ৷ মোট 392টি স্তম্ভ এবং 44টি দরজা রয়েছে এই মন্দিরে ৷ মন্দিরের স্তম্ভ এবং দেয়ালগুলি হিন্দু দেবী-দেবতা এবং পৌরাণিক ভাস্কর্য খোদাই করা হয়েছে ৷ প্রধান গর্ভগৃহে কৃষ্ণ পাথরে নির্মিত ভগবান শ্রীরামের শৈশব রূপ স্থাপন করা হয়েছে।
মন্দিরের প্রধান প্রবেশদ্বারটি পূর্ব দিকে অবস্থিত ৷ সিংহ দ্বার দিয়ে 32টি সিঁড়ি উঠে মূল মন্দিরে প্রবেশ করা যাবে ৷ মন্দিরে মোট পাঁচটি মন্ডপ রয়েছে- নৃত্য মণ্ডপ, রং মণ্ডপ, সভা মণ্ডপ, প্রার্থনা মণ্ডপ এবং কীর্তন মণ্ডপ। মন্দিরের কাছে একটি ঐতিহাসিক কূপ (সীতা কুপ) রয়েছে, যা প্রাচীন যুগের। মন্দির কমপ্লেক্সের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে কুবের টিলায়, জটায়ুর মূর্তি স্থাপনের পাশাপাশি ভগবান শিবের প্রাচীন মন্দিরটিও পুনরুদ্ধার করা হয়েছে ৷ (এএনআই)
আরও পড়ুন
কয়েকশো বছরের প্রতীক্ষা-ধৈর্য-ত্যাগের পর আজ আমাদের রাম এসেছেন, বললেন প্রধানমন্ত্রী মোদি
সরাসরি: রামরাজ্যে ফিরলেন মর্যাদা পুরুষোত্তম, রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা প্রধানমন্ত্রীর
সীতার বাপের বাড়ি ! রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার আগে আলোকিত নেপালের জানকী মন্দির