ETV Bharat / bharat

রূপান্তরকামীরাও 14 বছর বনবাসে কাটিয়েছিলেন ! আশীর্বাদে ভগবান রামের থেকে কী পেয়েছিলেন ?

Lord Ram Blessing on Transgender: অযোধ্যায় নিজের ঘর পেলেন রামলালা । এর ফলে পুরুষ- নারীরা যতটা আনন্দ পাচ্ছেন তার চেয়ে বেশি খুশি রূপান্তরকামীরা ৷ কারণ তাঁদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে ভগবান রামের ৷ জেনে নিন রূপান্তরকামীদের জীবনে প্রভু রামের ভূমিকা কী ।

ETV Bharat
ইটিভি ভারত
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 22, 2024, 12:34 PM IST

অযোধ্যা, 22 জানুয়ারি: অওধ শহরের ভগবান শ্রীরামকে নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত । এই গল্পের মধ্যে এমন অনেক চরিত্র পাওয়া যায়, যা রামের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত । আজ আমরা ভগবান শ্রীরামের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত এমনই এক চরিত্রের কথা বলব আপনাদের ৷ যিনি ভগবান শ্রীরামের সঙ্গে 14 বছর বনবাসেই কাটিয়েছিলেন । আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন তিনি হবেন লক্ষ্মণ, ভরত বা মাতা সীতা। না তাঁরা নন, এই মানুষগুলি ছাড়াও আর একটি শ্রেণির মানুষ ছিল যারা 14 বছর ধরে ভগবান রামের জন্য তপস্যা করেছিলেন । শুনলে অবাক হবেন কিন্তু এটাই সত্যি । এই তপস্যা কোনও ঋষি, মহাত্মা বা সাধকেরা করেননি ৷ বরং করেছিলেন অযোধ্যার রূপান্তরকামীরা ৷ তাঁরা কলিযুগে শাসন করার জন্য স্বয়ং ভগবান শ্রীরামের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন ।

রূপান্তরকামীরা স্বর্গ থেকে এসেছেন অযোধ্যায়

অযোধ্যা রূপান্তরকামীদের পীঠস্থান। রূপান্তরকামী সম্প্রদায় দাবি করে, রাজা দশরথের বাড়িতে রামলালার জন্মের পরই রূপান্তরকামীরা স্বর্গ থেকে অবতীর্ণ হয়েছিলেন । রূপান্তরকামীদের জন্ম হয়নি কিন্তু তাঁদের মর্তে আনা হয়েছিল । ভগবান শিবের অর্ধনারীশ্বর রূপই রূপান্তরকামী সম্প্রদায়ের রূপ । অযোধ্যার রূপান্তরকামী সম্প্রদায় বলে, রাম যখন বনে যাচ্ছিলেন তখন তিনি নর-নারীকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন । তিনি রূপান্তরকামীদের নাম নেননি, তাই রূপান্তরকামীদের সেখানে থেকে যায় এবং রূপান্তরকামীদের পূর্বপুরুষরা 14 বছর ধরে রামের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন ৷

তমসা নদীর তীরে যান অযোধ্যাবাসী

অযোধ্যার রূপান্তরকামী সিংহাসনে অধিষ্ঠিত পিঙ্কি মিশ্র বলেন, "ভগবান রাম যখন বনবাসের জন্য অযোধ্যা ত্যাগ করছিলেন, তখন সমগ্র অযোধ্যার মানুষ তাঁর সঙ্গে তমসা নদীর তির পর্যন্ত গিয়েছিলেন । নারী-পুরুষ, রূপান্তরকামী, পশু-পাখি সবাই শ্রীরামকে দেখতে এসেছিলেন । তমসা নদী তীর ভারত কুন্ডের কাছে অবস্থিত । সেখানে ভগবান রাম বলেছিলেন, অযোধ্যার পুরুষ এবং মহিলা নির্বিশেষে সকলেই ফিরে যান । সকলের সঙ্গে 14 বছর পর দেখা হবে । এই কথা বলে রাম নৌকায় বসে তমসা নদীর পেরিয়ে যান । আমাদের পূর্বপুরুষরা বলেছিলেন, ভগবান পুরুষ ও মহিলাদের অযোধ্যায় ফিরে যেতে বলেছেন । কিন্তু রূপান্তরকামীদের ফিরে যেতে বলা হয়নি । আমরা পুরুষ বা মহিলা নই । এর অর্থ হল প্রভু আমাদের ফিরে যেতে আদেশ দেননি ।"

14 বছর ধরে রামের জন্য অপেক্ষা

পিঙ্কি মিশ্রের কথায়, "ভগবান রামের বনবাস থেকে ফিরে আসার অপেক্ষায় আমাদের পূর্বপুরুষরা 14 বছর ধরে তমসার তীরে তপস্যা করেছিলেন । ওই সময়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা একই কন্দমূল ফল খেতেন যা প্রভু বনে খেয়েছিলেন । ভগবান যেমন গঙ্গার জল পান করতেন, তেমনই আমাদের রূপান্তরকামী সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষরাও গঙ্গার জল পান করেছিলেন । 14 বছর পর্যন্ত ভগবান রামের জন্য অপেক্ষা করার সময় আমাদের রূপান্তরকামী সম্প্রদায়ের মানুষ রাম নাম ঝপ করেন এবং কিছু প্রবীণদের রামের নাম জপ করতে করতে তাদের সারা শরীর কাদায় ঢেকে গিয়েছিল । ভগবান রাম যখন বনবাস থেকে অযোধ্যায় ফিরে আসেন, তখন তিনি প্রথম তমসার তীরে রূপান্তরকামীদের সম্মুখীন হন । প্রভু রূপান্তরকামীদের জিজ্ঞেস করেন, এই লোকগুলো কে? যাওয়ার সময় এই লোকেরা এখানে ছিলেন না । আমাদের পূর্বপুরুষেরা তাঁকে বলেছিলেন, আমরা রূপান্তরকামী সম্প্রদায়ের । "

রূপান্তরকামীদের শ্রী রামের আশীর্বাদ

পিঙ্কি মিশ্র বলেছেন, "আমাদের পূর্বপুরুষরা ভগবান রামকে বলেছিলেন, আপনার পিতা আমাদের স্বর্গ থেকে নামিয়ে এনেছেন । আমরা 14 বছর ধরে আপনার অপেক্ষায় বনের কন্দমূল ফল খেয়েছি । ভগবান রাম আমাদের পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে আপনারা কলিযুগে রাজত্ব করবেন । যার সংসার বাড়ছে তার দ্বারস্থ হবেন, যার সংসার কমছে তার দ্বারস্থ হবেন না । সোনার অট্টালিকা, ধন-সম্পদ, মায়া ইত্যাদি দেখে যাবেন না । কোনও রাজবংশ বড় হলে তার জায়গায় শুধু রূপান্তরকামীরা যাবে । একটি সোনার প্রাসাদ রয়েছে কিন্তু সেখানে যদি সন্তান না হন তবে রূপান্তরকামীরা সেখানে যাবেন না । আমাদের পূর্বপুরুষরা ভগবান রামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেউ যদি আমাদের কথা না শোনে তাহলে আমরা কী করব? প্রভু বলেন, এরপর আমি তোমাদের কথা শুনব।"

আরও পড়ুন:

  1. রামলালার স্নানের জল কয়েক কলসি, হাজার হাজার টন ফুলে সজ্জিত রামনগরী
  2. পিঠে-লাড্ডু-সুগন্ধি-ধনুক; রামলালার জন্য প্রচুর উপহার জমছে অযোধ্যায়
  3. মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাম মন্দিরের উদ্বোধন, এক ঝলকে দেখে নিন অনুষ্ঠান সূচি

অযোধ্যা, 22 জানুয়ারি: অওধ শহরের ভগবান শ্রীরামকে নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত । এই গল্পের মধ্যে এমন অনেক চরিত্র পাওয়া যায়, যা রামের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত । আজ আমরা ভগবান শ্রীরামের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত এমনই এক চরিত্রের কথা বলব আপনাদের ৷ যিনি ভগবান শ্রীরামের সঙ্গে 14 বছর বনবাসেই কাটিয়েছিলেন । আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন তিনি হবেন লক্ষ্মণ, ভরত বা মাতা সীতা। না তাঁরা নন, এই মানুষগুলি ছাড়াও আর একটি শ্রেণির মানুষ ছিল যারা 14 বছর ধরে ভগবান রামের জন্য তপস্যা করেছিলেন । শুনলে অবাক হবেন কিন্তু এটাই সত্যি । এই তপস্যা কোনও ঋষি, মহাত্মা বা সাধকেরা করেননি ৷ বরং করেছিলেন অযোধ্যার রূপান্তরকামীরা ৷ তাঁরা কলিযুগে শাসন করার জন্য স্বয়ং ভগবান শ্রীরামের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন ।

রূপান্তরকামীরা স্বর্গ থেকে এসেছেন অযোধ্যায়

অযোধ্যা রূপান্তরকামীদের পীঠস্থান। রূপান্তরকামী সম্প্রদায় দাবি করে, রাজা দশরথের বাড়িতে রামলালার জন্মের পরই রূপান্তরকামীরা স্বর্গ থেকে অবতীর্ণ হয়েছিলেন । রূপান্তরকামীদের জন্ম হয়নি কিন্তু তাঁদের মর্তে আনা হয়েছিল । ভগবান শিবের অর্ধনারীশ্বর রূপই রূপান্তরকামী সম্প্রদায়ের রূপ । অযোধ্যার রূপান্তরকামী সম্প্রদায় বলে, রাম যখন বনে যাচ্ছিলেন তখন তিনি নর-নারীকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন । তিনি রূপান্তরকামীদের নাম নেননি, তাই রূপান্তরকামীদের সেখানে থেকে যায় এবং রূপান্তরকামীদের পূর্বপুরুষরা 14 বছর ধরে রামের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন ৷

তমসা নদীর তীরে যান অযোধ্যাবাসী

অযোধ্যার রূপান্তরকামী সিংহাসনে অধিষ্ঠিত পিঙ্কি মিশ্র বলেন, "ভগবান রাম যখন বনবাসের জন্য অযোধ্যা ত্যাগ করছিলেন, তখন সমগ্র অযোধ্যার মানুষ তাঁর সঙ্গে তমসা নদীর তির পর্যন্ত গিয়েছিলেন । নারী-পুরুষ, রূপান্তরকামী, পশু-পাখি সবাই শ্রীরামকে দেখতে এসেছিলেন । তমসা নদী তীর ভারত কুন্ডের কাছে অবস্থিত । সেখানে ভগবান রাম বলেছিলেন, অযোধ্যার পুরুষ এবং মহিলা নির্বিশেষে সকলেই ফিরে যান । সকলের সঙ্গে 14 বছর পর দেখা হবে । এই কথা বলে রাম নৌকায় বসে তমসা নদীর পেরিয়ে যান । আমাদের পূর্বপুরুষরা বলেছিলেন, ভগবান পুরুষ ও মহিলাদের অযোধ্যায় ফিরে যেতে বলেছেন । কিন্তু রূপান্তরকামীদের ফিরে যেতে বলা হয়নি । আমরা পুরুষ বা মহিলা নই । এর অর্থ হল প্রভু আমাদের ফিরে যেতে আদেশ দেননি ।"

14 বছর ধরে রামের জন্য অপেক্ষা

পিঙ্কি মিশ্রের কথায়, "ভগবান রামের বনবাস থেকে ফিরে আসার অপেক্ষায় আমাদের পূর্বপুরুষরা 14 বছর ধরে তমসার তীরে তপস্যা করেছিলেন । ওই সময়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা একই কন্দমূল ফল খেতেন যা প্রভু বনে খেয়েছিলেন । ভগবান যেমন গঙ্গার জল পান করতেন, তেমনই আমাদের রূপান্তরকামী সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষরাও গঙ্গার জল পান করেছিলেন । 14 বছর পর্যন্ত ভগবান রামের জন্য অপেক্ষা করার সময় আমাদের রূপান্তরকামী সম্প্রদায়ের মানুষ রাম নাম ঝপ করেন এবং কিছু প্রবীণদের রামের নাম জপ করতে করতে তাদের সারা শরীর কাদায় ঢেকে গিয়েছিল । ভগবান রাম যখন বনবাস থেকে অযোধ্যায় ফিরে আসেন, তখন তিনি প্রথম তমসার তীরে রূপান্তরকামীদের সম্মুখীন হন । প্রভু রূপান্তরকামীদের জিজ্ঞেস করেন, এই লোকগুলো কে? যাওয়ার সময় এই লোকেরা এখানে ছিলেন না । আমাদের পূর্বপুরুষেরা তাঁকে বলেছিলেন, আমরা রূপান্তরকামী সম্প্রদায়ের । "

রূপান্তরকামীদের শ্রী রামের আশীর্বাদ

পিঙ্কি মিশ্র বলেছেন, "আমাদের পূর্বপুরুষরা ভগবান রামকে বলেছিলেন, আপনার পিতা আমাদের স্বর্গ থেকে নামিয়ে এনেছেন । আমরা 14 বছর ধরে আপনার অপেক্ষায় বনের কন্দমূল ফল খেয়েছি । ভগবান রাম আমাদের পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে আপনারা কলিযুগে রাজত্ব করবেন । যার সংসার বাড়ছে তার দ্বারস্থ হবেন, যার সংসার কমছে তার দ্বারস্থ হবেন না । সোনার অট্টালিকা, ধন-সম্পদ, মায়া ইত্যাদি দেখে যাবেন না । কোনও রাজবংশ বড় হলে তার জায়গায় শুধু রূপান্তরকামীরা যাবে । একটি সোনার প্রাসাদ রয়েছে কিন্তু সেখানে যদি সন্তান না হন তবে রূপান্তরকামীরা সেখানে যাবেন না । আমাদের পূর্বপুরুষরা ভগবান রামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেউ যদি আমাদের কথা না শোনে তাহলে আমরা কী করব? প্রভু বলেন, এরপর আমি তোমাদের কথা শুনব।"

আরও পড়ুন:

  1. রামলালার স্নানের জল কয়েক কলসি, হাজার হাজার টন ফুলে সজ্জিত রামনগরী
  2. পিঠে-লাড্ডু-সুগন্ধি-ধনুক; রামলালার জন্য প্রচুর উপহার জমছে অযোধ্যায়
  3. মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাম মন্দিরের উদ্বোধন, এক ঝলকে দেখে নিন অনুষ্ঠান সূচি
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.