নয়াদিল্লি, 17 অক্টোবর: বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব বিষয়ে ঐতিহাসিক রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট ৷ বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ 4:1 হিসেবে 1955 সালের নাগরিকত্ব আইনের 6A ধারার সাংবিধানিক বৈধতাকে বহাল রাখল ৷ এই ধারায় 1 জানুয়ারি, 1966 থেকে 1971 সালের 25 মার্চ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে অসমে এসে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকের স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক বলে জানিয়েছে বেঞ্চ ৷ তাঁরা ভারতীয় নাগরিক ৷ তাই 6A ধারা সাংবিধানিক দিক দিয়ে বৈধ কি না, সেই প্রশ্ন খারিজ হয়ে যায় ৷
এদিন নাগরিকত্ব আইনের 6A ধারার বৈধতা নিয়ে 17টি মামলার শুনানির রায় ঘোষণার দিন ছিল ৷ শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চের বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি এমএম সুন্দরেশ এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র 1955 সালের নাগরিকত্ব আইনের 6A ধারার সাংবিধানিক বৈধতাকে সমর্থন জানিয়েছেন ৷ কিন্তু বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ভিন্নমত পোষণ করেন ৷ তিনি নাগরিকত্ব আইনের এই ধারাকে অসাংবিধানিক বলেছেন ৷ তাই বেঞ্চ 4:1 হিসেবে এই রায় ঘোষণা করেছে ৷
Supreme Court’s five-judge Constitution bench upholds the constitutional validity of Section 6A of the Citizenship Act inserted by way of an amendment in 1985 in furtherance of the Assam Accord. pic.twitter.com/I2waFAKhbl
— ANI (@ANI) October 17, 2024
অসম অ্যাকর্ড ও ধারা 6A
বাংলাদেশ থেকে, বিশেষত 1971 সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু শরণার্থী অসমে এসে আশ্রয় নেয় ৷ তাতে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যটির জনবিন্যাস, সংস্কৃতি বিপন্ন হয়ে পড়ছিল ৷ তাই অসমের নিজস্ব সংস্কৃতি, ধারা, সম্প্রদায়কে বাঁচাতে ছ'বছর ধরে আন্দোলন চালায় এএএসইউ বা আসু ৷ তখন একদিকে আন্দোলনের চাপে, অন্যদিকে মানবিকতার খাতিরে বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের ভারতে আশ্রয় দিতে অসম অ্যাকর্ড চুক্তি করে সরকার ৷
1985 সালের 15 অগস্ট দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন-এর (এএএসইউ) মধ্যে অসম অ্যাকর্ড চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ৷ বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি সমাধানে 1955 সালের নাগরিকত্ব আইনে বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে 6A ধারা অন্তর্ভুক্তি করে কংগ্রেস সরকার ৷ এই ধারার আওতায় 1966 সালের 1 জানুয়ারি থেকে 1971 সালের 25 মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে অসমে আসা শরণার্থীরা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন ৷ কিন্তু তাঁদের ভোটাধিকার থাকবে না অর্থাৎ ভোট দিতে পারবেন না ৷
পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ
এদিন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের মোকাবিলায় অসম অ্যাকর্ড এবং মূল নাগরিকত্ব আইনে 6A ধারার অন্তর্ভুক্তি একটি রাজনৈতিক সমাধান মাত্র ৷ ঐতিহাসিক রায়ে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানায়, "6A ধারা অনুযায়ী, 1966 সালের 1 জানুয়ারি থেকে 1971 সালের 25 মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ-সহ নির্দিষ্ট কিছু জায়গা থেকে যাঁরা অসমে প্রবেশ করেছেন, তাঁরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য ৷ যাঁরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পেয়েছেন, তাঁদের সেই নাগরিকত্ব বৈধ এবং তা বহাল থাকবে ৷"
তাঁরা 1985 সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের আওতায় নাগরিকত্ব পাবেন ৷ তাঁরা উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যের বাসিন্দা ৷ তাই 18 নম্বর ধারার আওতায় তাঁদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে নিজেদের নথিভুক্ত করতে হবে ৷
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার অন্য রাজ্যগুলির ক্ষেত্রেও এই পদক্ষেপ করতে পারত ৷ কিন্তু তা করা হয়নি ৷ এই ব্যবস্থা শুধুমাত্র অসমের জন্য ৷ কারণ, অসমের আয়তন পশ্চিমবঙ্গের থেকেও ছোট ৷ অসমে 40 লক্ষ শরণার্থী বসবাসের ফলে সেখানে যে প্রভাব পড়বে, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা 57 লক্ষ বা তার বেশি হতে হবে ৷ অসম তুলনামূলক ছোট জায়গা হওয়ায় এখানে বিদেশি নাগরিককে চিহ্নিত করা মুশকিল ৷ তাই এই ব্যবস্থাটি কেবল অসমের জন্য ৷"
আদালতের পর্যবেক্ষণ, সেই সময় কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশি শরণার্থীদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে যে পদক্ষেপ করেছে, তা একেবারে সঠিক ৷ বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি এমএম সুন্দরেশ এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র, বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেন যে, নাগরিকত্ব আইনে 6A ধারাটির অন্তর্ভুক্তি করতে যে সাংবিধানিক ক্ষমতা দরকার, তা সংসদের আছে ৷ কিন্তু বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা তাঁদের সঙ্গে একমত হতে পারেননি ৷ তিনি 6A ধারাকে অসাংবিধানিক বলে গণ্য করেন ৷