নয়াদিল্লি, 7 মে: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলাকে একটি 'সিস্টেমেটিক ফ্রড' বা পরিকল্পিত জালিয়াতির আখ্যা দিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে আপাতত স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট ৷ শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, যোগ্য-অযোগ্য বিভাজন করতে পারলে পুরো প্যানেল বাতিল করার সিদ্ধান্ত ন্যায্য নয় ৷ সে ক্ষেত্রে আপাতত 25,573 জন চাকরিতে বহাল থাকছে বলে জানিয়ে দিলেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ৷ আগামী 16 জুলাই মামলায় চূড়ান্ত নির্দেশ দেবে শীর্ষ আদালত ৷
এদিন শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্টে অযোগ্য চাকরি প্রার্থীদের কথা কার্যত স্বীকার করে নেয় রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশন ৷ কমিশনের তরফে জানান হয়, এই তালিকায় যোগ্য প্রার্থী রয়েছে প্রায় 19 হাজার এবং অযোগ্য প্রার্থী রয়েছে প্রায় 8324 জন ৷ কমিশনের তরফে বলা হয়, "সিবিআই-এর তথ্য়ের উপর নির্ভর করে 2016 সালের প্যানেলে প্রাপ্ত চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে যোগ্য-অযোগ্য পার্থক্য করা সম্ভব ৷ এমনকি, যে সমস্ত ও এমআর তথ্য মিলছে না, সেগুলিও খুঁজে পাওয়া সম্ভব ৷" সংক্ষিপ্ত রায়ে সেই বিষয়ে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র-র ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, চিহ্নিত করতে পারলে অযোগ্যদের সুদ-সহ টাকা ফেরত দিতে হবে ৷ তবে সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সিবিআই রিপোর্টের ভিত্তিতে ৷
এদিন শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, নবম ও দশম শ্রেণির এত সংখ্যক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করলে পড়াশোনার ক্ষেত্রে তার বিরুপ প্রভাব পরবে ৷ তবে এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট যে রায় নিয়েছে, তার উপর এখনই সম্পূর্ণ স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে না ৷ শূন্যপদ তৈরির ক্ষেত্রে মন্ত্রীসভার সদস্যদের গ্রেফতার করতে পারবে না সিবিআই ৷ যদিও মামলার তদন্ত করে আগামী 3 মাসের মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিতে হবে সিবিআই-কে ৷
দুর্নীতির সম্পূর্ণ ঘটনাটিকে একটি 'সিস্টেমেটিক ফ্রড' (পরিকল্পিত জালিয়াতি) বলে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্ট ৷ শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, "বর্তমান সময়ে সরকারি চাকরি পাওয়া বেশ দুষ্প্রাপ্য ৷ যদি সাধারণ মানুষের ভরসা উঠে যায়, তবে আর কিছুই থাকবে না ৷ পরিকল্পিত জালিয়াতি হয়েছে এই ঘটনায় ৷ সাধারণ মানুষ বিশ্বাস হারালে কী করবেন?" সেই সঙ্গে শীর্ষ আদালতের মন্তব্য, মামলা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য আদৌ নথিভুক্ত ছিল কি না, তার প্রমাণ দিতে পারেনি রাজ্য সরকার ৷
উল্লেখ্য, 22 এপ্রিল নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে 2016 সালের এসএসসি-র পুরো প্যানেল বাতিল করেন কলকাতা হাইকোর্ট বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ৷ রায়ে চাকরি হারান 25,573 জন ৷ 281 পাতার রায়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে নয়া টেন্ডার ডেকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালুর নির্দেশও দেয় আদালত ৷ ভোট মিটলে সেই প্রক্রিয়া শুরু হবে ৷ তবে সিবিআইকে মামলার তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট ৷ পাশাপাশি সমস্ত ওএমআর শিটের কপি এসএসসি সার্ভারে আপলোড করারও নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ উচ্চ আদালতের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টার দ্বারস্থ হয় কমিশন এবং রাজ্য সরকার ৷
আরও পড়ুন: