নয়াদিল্লি, 11 মার্চ: নির্বাচনী বন্ড নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানোর মামলায় সোমবার স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়াকে রীতিমতো তুলোধনা করল সুপ্রিম কোর্ট ৷ জুন মাস পর্যন্ত যে সময় নির্বাচনী বন্ড নিয়ে বিশদ তথ্য জানাতে চেয়েছিল এসবিআই তা খারিজ করে দিয়েছে আদালত ৷ ভারতের নির্বাচন কমিশনকে আগামিকালের মধ্যে সব তথ্য শেয়ার করতে বলা হয়েছে এসবিআই-কে ৷
অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মসের আবেদন অনুযায়ী, শীর্ষ আদালত আদালত অবমাননার পিটিশন গ্রহণ করেনি ৷ তবে, এসবিআইয়ের চেয়ারম্যান ও এমডিকে একটি হলফনামা জমা দিতে বলা হয়েছিল ৷ সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে শুক্রবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে তাদের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য আপলোড করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত ৷ সেই সঙ্গে এসবিআইকে 12 মার্চ, মঙ্গলবার কাজের সময়ের মধ্যে সমস্ত তথ্য শেয়ার করতে বলা হয়েছে ৷
এসবিআই-কে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, নির্বাচনী বন্ড দাতার বিস্তারিত তথ্য নির্দিষ্ট ব্রাঞ্চে মুখবন্ধ খামে জমা দেওয়া হয় এবং সমস্ত মুখবন্ধ খাম মুম্বইয়ের প্রধান শাখায় জমা দেওয়া হয়েছিল ৷ আদালত এসবিআই-এর আইনজীবীকে প্রশ্ন করে,"আপনি কী বলতে চাইছেন, যে বন্ড দাতাদের বিবরণ মুম্বইয়ের প্রধান শাখায় পাঠানো হয়েছিল এবং রাজনৈতিক দলগুলির বিবরণও একই শাখায় পাঠানো হয়েছিল ? আর এইভাবে দু’টি সেটের তথ্য তৈরি হয়েছিল ?
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এসবিআইয়ের আইনজীবীকে বলেন, "আদালত কখনই এসবিআইকে রাজনৈতিক দলের রশিদ ও বন্ড দাতাদের তথ্য মেলাতে বলেনি ৷ বদলে সহজভাবে সেই সব তথ্য প্রকাশ করতে বলা হয়েছিল ৷"
এসবিআই দাবি করেছে, যখন বন্ড কেনা হয়েছে, তখন সব তথ্য আলাদা করা হয়েছিল ৷ যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানতে চেয়েছে, সেই সব তথ্য এসবিআই মুম্বই ব্রাঞ্চে পাঠিয়েছে কি না ৷ আদালত প্রশ্ন করে, "সমস্ত বিবরণ কি মুম্বই শাখায় পাঠানো হয়নি ?"
এদিন প্রধান বিচারপতি এসবিআই কর্তৃপক্ষকে মনে করিয়ে দেন, ব্যাংক আদালতে ইতিমধ্য বলেছে যে, নির্বাচনী বন্ডের ক্রেতাদের সমস্ত তথ্য তারা মুখবন্ধ খামে রেখেছে ৷ তাই এসবিআইয়ের কাজ সেই মুখবন্ধ খাম খুলে সব তথ্য দিয়ে দেওয়া ৷
প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলে, "আমরা গত 15 ফেব্রুয়ারি এই নির্দেশ দিয়েছিলাম ৷ আর আজকে 11 মার্চ ৷ মাঝের এই 26 দিনে আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন ? এসবিআই যে আবেদন করেছে, তার মধ্যে সেসব কিছুই লেখা নেই ৷"
এসবিআইয়ের আইনজীবীকে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট ভাষায় জানায়, "এই আবেদনকে এসবিআইকে উল্লেখ করতে হবে, তারা এই এই পদক্ষেপ নিয়েছে এবং আরও পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সময় চাই ৷ আমরা এসবিআইয়ের থেকে স্বচ্ছতা আশা করি ৷"
জবাবে এসবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, "ব্যাংক তাড়াহুড়ো করে কোনও কাজ করতে চাইছে না ৷ যাতে করে কোনও ভুল হয় বা এর জন্য কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয় ৷" এসবিআইয়ের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন প্রধান বিচারপতি ৷ তিনি মন্তব্য করেন, "এখানে ভুল হওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না ৷ আপনাদের কাছে কেওয়াইসি আছে ৷ আপনারা দেশের এক নম্বর ব্যাংক ৷ আমরা আশা করি আপনারা এটা সামলাতে সমর্থ...৷"
ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি বলেন, "এসবিআইয়ের একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হলফনামা দাখিল করেছেন এই মর্মে যাতে, সাংবিধানিক বেঞ্চ তার রায় বদল করে !" যে আবেদনকে সাংবিধানিক বেঞ্চের জারি করা নির্দেশ পালনের জন্য ব্যাংক 30 জুন পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ করেছিল ৷ তবে, সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত ৷ বদলে আগামিকালের মধ্য নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য নির্বাচন কমিশনকে দিতে বলা হয়েছে এবং কমিশনকে আগামী শুক্রবার বিকেল 5টার মধ্য সব তথ্য ওয়েবসাইটে আপলোড করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত ৷
আরও পড়ুন: