পুরী, 9 জুলাই: পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডার খোলার সম্ভাব্য দিন ঘোষিত হল শেষমেশ ৷ সাড়ে চার দশকেরও বেশি সময় পর আগামী 14 জুলাই ভক্তদের সমক্ষে আনা হতে পারে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডার ৷ ওড়িশা সরকার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে রত্ন ভাণ্ডার ফের খোলার তদারকির জন্য একটি নয়া উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে ৷ সেই কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি বিশ্বনাথ রথ মঙ্গলবারের বৈঠকে সুপারিশ করেন রত্ন ভাণ্ডার খোলার দিনটি ৷ যদিও বিষয়টি সরকারের সম্মতির উপরেই ঝুলে রয়েছে ৷
তিনি বলেন, "আমরা আশা করছি সরকার 14 জুলাই রত্ন ভাণ্ডার খোলার অনুমতি দেবে।" সরকারের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার পর ভাণ্ডারের চাবি ঠিকমতো কাজ করুক বা না-করুক, যেনতেন প্রকারে খোলা হবে ৷ মঙ্গলবার মন্দিরের নবগঠিত রত্ন ভাণ্ডার পরিদর্শন কমিটির দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডার ঘোষণার তারিখ এবং কীভাবে এটি খোলা হবে তা নিয়ে আলোচনা হয় ৷
এক নজরে রত্ন ভাণ্ডারের ইতিহাস
- গত বছর রত্নভাণ্ডারের খোলা ও সুরক্ষা নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল । সেই শুনানিতে হাইকোর্ট একটি উচ্চ-স্তরের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় । তারপরই এই উদ্যোগ।
- 1978 সাল থেকে বন্ধ পুরীর রত্ন ভাণ্ডার ৷
- এই রত্ন ভাণ্ডার ঘিরে ভক্তদের মনে প্রবল কৌতূহল রয়েছে ৷
- ভক্তদের বিশ্বাস এই মন্দিরে যা রত্ন আছে তা আর কোথাও নেই ৷
- বিশ্বাস পুরীর রত্ন ভাণ্ডারে এমন সব মণিমাণিক্য আছে, যা দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যেতে পারে ৷
- 14 জুলাই ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হবে মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডার ৷
- বিচারপতি বিশ্বনাথ রথ জানান, শ্রী জগন্নাথ টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর কাছে রত্ন ভাণ্ডারের চাবি চেয়েছে ৷
- চাবি না-পেলে প্রয়োজনে তালা ভেঙে খোলা হতে পারে ৷
- এই রত্ন ভাণ্ডারে থাকা অলংকার মন্দিরের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় থাকবে ৷ সেই স্থান ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে ৷
- লোকসভা নির্বাচনের সময় বিজেপির তরফে জানানো হয়েছিল ক্ষমতায় এলে আবার খুলে দেওয়া হবে রত্ন ভাণ্ডার ৷
বৈঠকের পর কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি বিশ্বনাথ রথ বলেন, "14 তারিখ সরকারকে রত্ন ভাণ্ডার খোলার প্রস্তাব দেওয়া হবে। তবে রত্নটি খুললে ভক্তের তা দেখতে ভক্তের ভিড় উপচে পড়তে পারে। তবে ভক্তরা এই কাজে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন ৷" বিচারপতি নির্দেশ দেন, চাবি না-পাওয়া গেলেও তালা ভেঙে খোলা হবে রত্ন ভাণ্ডারে দরজা ৷ শুধুমাত্র সরকারের অনুমতি পাওয়ার অপেক্ষা ৷ আশা করছি ওড়িশা সরকার এই ব্যাপারে অনুমতি দেবে ৷"
বিচারপতি বিশ্বনাথ রথ আরও জানান, রত্ন ভাণ্ডারের নথিতে তিন ধরনের অলঙ্কারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে । মন্দির পরিচালন কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, রত্নগুলি কোথায় রাখা হবে সেই (কক্ষ) চূড়ান্ত করা হয়েছে। যেহেতু মন্দিরের সম্পত্তি বাইরে স্থানান্তর করা যাবে না, তাই মন্দিরের ভিতরে একটি নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করে সেখানেই রাখা হবে এই সমস্ত বহুমূল্য সম্পদ।
বিচারপতি বিশ্বনাথ রথ বলেন, "আমরা অলঙ্কারের প্রকৃতি, অলঙ্কারের গুণমান (তা 22 বা 24 ক্যারেট) বিচার করে দেখব। যেহেতু বেশ কিছু দিক রয়েছে, তাই রাজ্য সরকারকে এই ব্যাপারে খতিয়ে দেখার কথা উল্লেখ করেছেন ৷ প্রয়োজনীয় বেশ কয়েকটি দল গঠন করতে হবে ৷ সেই দলে অভিজ্ঞ লোকদের নির্বাচন করতে হবে যারা রত্নগুলিকে খতিয়ে দেখবেন ৷
বিচারপতি বিশ্বনাথ রথের কথায় এক্ষেত্রে দু’টি দিক গুরুত্ব দেওয়া হবে ৷ কিভাবে ইনভেন্টরি করা হবে ? সেই প্রসঙ্গেই বিচারপতি রাথ জানান, গণনা প্রক্রিয়া একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ ব্যাপারে এমন যোগ্য লোকের প্রয়োজন যারা পুরানো রত্নগুলিকে সনাক্ত করতে পারবেন ৷ এই রত্ন ভাণ্ডারে রাজ-রাজাদেরর আমলের পাশাপাশি কিছু 1500 বছরেরও পুরনো অলঙ্কার রয়েছে। স্বর্ণকার এবং মেট্রোলজিস্টদের একটি দল গঠন করা হবে এবং এটি ওড়িশা সরকারের দায়িত্ব। প্রসঙ্গত, রত্ন ভাণ্ডার খোলার প্রক্রিয়া শুরু হলেও উল্টো রথে ভক্তদের জন্য মন্দিরে প্রবেশে কোনও বাধা থাকবে না ৷ ভক্তরা দূরত্ব বজায় রেখে প্রভু জগন্নাথের দর্শন করতে পারবেন ৷