কলকাতা, 24 জানুয়ারি: জীবনকৃতী সম্মানে সম্মানিত করা হল দীপা মালিককে ৷ 2016 রিও প্যারাঅলিম্পিকে শটপুটে রুপো-জয়ী দীপার জীবন লড়াইয়ের শেষ কথা ৷ কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবের অনুষ্ঠানে তাঁকে সম্মানিত করা হয় ৷ মন্দারমণিতে হওয়া এই অনুষ্ঠানের মঞ্চে জীবনকৃতী সম্মানে সম্মানিত হলেন পঙ্কজ কোঠারিও ৷ বিলিয়ার্ডের প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উপস্থিত থাকলেও আকর্ষণের কেন্দ্রে প্রথমবার প্যারা অলিম্পিকে প্রথম ভারতীয় প্যারা অলিম্পিয়ান ডাঃ দীপা মালিক ৷
ক্রিকেট খেলতে এবং বাইক চালাতে পছন্দ করেন এই প্যারা অলিম্পিয়ান শৈশবে রোগাক্রান্ত হয়ে চলচ্ছক্তিহীন হয়ে পড়েন ৷ কিন্তু হার-না-মানা মনোভাবকে পুঁজি করে সেনাবাহিনীর আধিকারিকর ঘরনী ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ৷ চল্লিশ বছরে জ্যাভলিনে হাতেখড়ি ৷ দু'বছরের মধ্যে বিশ্বের দু'নম্বর হিসেবে উঠে এলেও অর্জুন পুরস্কারে সম্মানিত দীপা অলিম্পিক পোডিয়ামে উঠেছিলেন শটপুটে সাফল্যের কারণে ৷
কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে দীপা জানিয়েছেন কলকাতা তাঁর ছোটবেলার শহর ৷ ঝালমুড়ির স্বাদ, ডুয়ার্সের জঙ্গলে ঘোরার অভিজ্ঞতা আজও তাজা খেলরত্ন দীপার মনে ৷ কলকাতায় দীপার প্রথম স্কুল ৷ সল্টলেক কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে স্কুল জীবন শুরু হওয়া যা আরও দীর্ঘায়ত হয়েছিল এই শহরেই ৷ সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে প্রথম রকব্যান্ড সঙ্গীত শোনার অভিজ্ঞতা আজও ছবির মতো দীপার চোখে ৷
বাঙালি পরিবারের সঙ্গে দীপা মালিকের যোগাযোগ রয়েছে, যা তিনি নিজের মুখেই জানিয়েছেন ৷ দীপার দিদির বিয়ে হয়েছে বাঙালি পরিবারে ৷ পাঞ্জাবি পরিবারে কন্যার বাঙালি পরিবারের রীতিনীতিতে অভ্যস্ত হওয়ার গল্পের কথা শোনালেন ৷ মাছ খাওয়ার প্রথম অভিজ্ঞতাও বাঙালি পরিবারের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কের কারণেই বলে জানিয়েছেন তিনি ৷ ছোটবেলা থেকে ঠাকুমার প্রশ্রয় ছিল দীপা মালিকের সব কাজে ৷
পরবর্তী জীবনে স্বামী এবং সন্তানদের সমর্থনের হাত বাড়ালেও দীপা ভুলতে পারেন না ঠাকুমার প্রথম সমর্থনের কথা ৷ তাই জীবনকৃতী সম্মান দীপা উৎসর্গ করলেন ঠাকুমাকেই ৷ তাঁর হাত ধরেই প্যারা স্পোর্টসে সাফল্যের আলো ৷ ধীরে ধীরে সেই সাফল্যের গ্রাফ বেড়েছে ৷ দীপাও প্রত্যাশার পারদ সম্পর্কে সচেতন ৷ দরজায় কড়া নাড়ছে প্যারিস প্যারা অলিম্পিক ৷ দীপা বলেন, "পদক সংখ্যা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে আগ্রহী নই ৷ তবে পারফরম্যান্সের গুণগত মান যে ভালো হবে, সে বিষয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী ৷"
বার্ষিক ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান প্রথমবার কলকাতার বাইরে আয়োজিত হয় ৷ সেখানে পুরস্কৃত হলেন জাতীয় স্তরে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ বিশ্ব বিলিয়ার্ডসে রানার্স সৌরভ কোঠারি এবং অলিম্পিক্সের কোটা অর্জন করার দোরগোড়ায় থাকা শুটার মেহুলি ঘোষ ৷ জিমন্যাস্টিক্সে বিশেষ সম্মান জানানো হয়েছে কোচ টুম্পা দেবনাথকে ৷ কিউ স্পোর্টস এবং প্যারা স্পোর্টসে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয় নীতা কোঠারি এবং দ্রোণাচার্য এস সত্যনারায়ণকে।
বর্ষসেরা ক্রিকেটারের শিরোপা পেয়েছেন মুকেশ কুমার এবং রিচা ঘোষ ৷ সেরা ফুটবলার বিবেচিত হয়েছেন ডেভিড লালহলাসাঙ্গা এবং সেরা অ্যাথিলটের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে সোনিয়া বৈশ্য ৷ সেরা জিমন্যাস্ট এবং সেরা ভলিবল খেলোয়াড় প্রণতি দাস এবং শেখ শরিফ অনুষ্ঠানে সম্মানিত ৷ এছাড়া, সেরা সাঁতারু (প্যারা) রিমো সাহা, সেরা তিরন্দাজ জুয়েল সরকার, সেরা শুটার স্বর্ণালী রায়, সেরা দাবাড়ু নীলাশ সাহা ৷ সেরা টিটি খেলোয়াড়ের সম্মান পেয়েছেন অঙ্কুর ভট্টাচার্য ও পয়মন্তী বৈশ্য ৷ মন্দারমনিতে স্পোর্টস মিউজিয়ামের উদ্বোধন করছে কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাব, যা বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করবেন দীপা মালিক ৷
আরও পড়ুন: