নয়াদিল্লি, 25 অক্টোবর: খালিস্তানি জঙ্গিদের দেশে ফেরানোর জন্য ভারত কানাডাকে 26টি অনুরোধ পাঠিয়েছিল ৷ তার মধ্যে মাত্র 5টির সমাধান হয়েছে ৷ বাকিগুলির কোনও সমাধানই হয়নি ৷ দেশে ফিরে কানাডায় ভারতীয় হাই-কমিশনার সঞ্জয় বর্মা সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এই তথ্য তুলে ধরেন ৷ তিনি এই ঘটনাকে কানাডার নিষ্ক্রিয়তা বলে উল্লেখ করেন ৷ ওই পাঁচজনের প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া চলছে ৷ কিন্তু তাঁদের নাম প্রকাশ করতে পারবেন না বলে জানান ভারতীয় এই উচ্চাধিকারিক ৷
2023 সালে খালিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনের ঘটনায় ভারতীয় কূটনীতিকদের যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ তোলে কানাডা ৷ শুধু তাই নয়, হাই-কমিশনার-সহ বেশ কয়েকজন ভারতীয় আধিকারিক সরাসারি খুনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বলেও দাবি করে কানাডা। এতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়ে ওঠে যে, ভারত কানাাডার কয়েকজন কূটনীতিককে দেশে ফিরে যেতে বলে ৷ কানাডাও একই পদক্ষেপ করে ৷ পাশাপাশি ভারতও তাঁদের প্রত্যাহার করে নেয়। দেশে ফিরে আসেন কানাডায় ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জয় বর্মা-সহ আরও কয়েকজন কূটনীতিক ৷
গত বছর 18 জুন কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় সুরিতে নিজ্জরকে গুলি করে হত্যা করা হয় ৷ এদিকে ভারত সরকার আগেই তাকে জঙ্গি ঘোষণা করেছিল ৷ এই খুন নিয়ে দু'দেশের মধ্যে তরজা চরমে ওঠে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সে দেশের সংসদে দাঁড়িয়ে জানান, এই ঘটনার সঙ্গে ভারতের যোগ আছে। পাল্টা জবাব দেয় দিল্লি।
কানাডায় বসবাসকারী খালিস্তানি জঙ্গিরা সেদেশের নাগরিক ৷ আর ঠিক সেই যুক্তিতেই তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে চায় কানাডা। আবার ভারতের মাটিতে তারা সকলেই 'ওয়ান্টেড' তালিকাভুক্ত ৷ খালিস্তানি জঙ্গিরা ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা ভেঙে নতুন দেশ গড়তে চায় ৷ সে দেশে বসেই ভারতে নাশকতা ছড়াতে চায় তারা। তাদের কাজকর্ম রুখতে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি কানাডা সরকার ৷ নয়াদিল্লি বারবারই এই অভিযোগ করেছে ৷ এই বিতর্কে দু'দেশের মধ্যে সম্পর্ক এখন তলানিতে পৌঁছেছে ৷
জঙ্গিদের প্রত্যর্পণ নিয়ে সঞ্জয় বর্মা বলেন, "গত 10 বছর ধরে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কানাডা ৷ এই অবস্থায় বিষয়টিকে কানাডার নিষ্ক্রিয়তাই বলতে হয় ৷" সম্প্রতি বিদেশ মন্ত্রক কানাডাকে জানায়, ভারতের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত এমন 26 জন অপরাধীকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হোক ৷ এমনকী কয়েকজনের শর্তসাপেক্ষে গ্রেফতারির দাবিও জানায় দিল্লি ৷ সেগুলি 'মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স' চুক্তির আওতায় পড়ে রয়েছে ৷ কানাডা তবু কিছুই করেনি।
এই প্রসঙ্গে সঞ্জয় বর্মা বলেন, "শেষ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, 5 জনের বিষয়টির সমাধান হয়েছে ৷ বাকি 21টি অনুরোধ এখনও পড়ে রয়েছে ৷ আর সেগুলি কয়েক দশক ধরেই এই অবস্থায় রয়েছে ৷ তাই আমি বলব, এই বিষয়টি নিয়ে কানাডা নিষ্ক্রিয়ই ৷ কোনও আলোচনা না করে ফেলে রেখে দিয়েছে ৷ ইস্যুগুলি যখন বিচার ব্যবস্থার আওতাধীন থাকে, তখন সেগুলি নিয়ে কখনও কখনও আলোচনা করা দরকার ৷ কারণ, আমরা দু'টি ভিন্ন ধরনের বিচার ব্যবস্থা অনুসরণ করছি ৷"
ভারত-কানাডার এই হিমশীতল সম্পর্কের কি কখনও পরিবর্তন হবে ? এর উত্তরে বর্মা বলেন, "আমি শুধু এটাই বলতে চাই যে, দু'দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও ভালো হোক ৷ আমরা এটা চাইছি বলেই যে ভালো হবে তা নয়, আমরা দু'টি দেশ পরস্পরকে শ্রদ্ধা করি ৷ আমরা একে অপরকে বুঝতে চাই ৷ দু'দেশই দু'পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ দুশ্চিন্তার কারণগুলি জানি ৷"