নয়াদিল্লি, 16 ফেব্রুয়ারি: মহাকুম্ভের ট্রেন ধরতে গিয়ে নয়াদিল্লি রেলস্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু মিছিল ৷ চলে গেল তাজা 18টি প্রাণ ৷ জখম হন 12 জনেরও বেশি মানুষ ৷ কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, তার কারণ অনুসন্ধান করা শুরু হয়েছে ৷ সূত্র জানিয়েছে, ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব এবং প্রতি ঘণ্টায় 1500টি সাধারণ (জেনারেল) টিকিট বিক্রির কারণে নয়াদিল্লি রেলস্টেশনে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির তৈরি হয়ে থাকতে পারে ৷ ঘটনার তদন্তে গঠিত হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ৷ তবে প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর দুর্ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করেছে রেল ৷
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, শনিবার রাতে মহাকুম্ভের ট্রেন ধরতে নয়াদিল্লি রেলস্টেশনের 14-15 নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে যেতে গিয়ে পা পিছলে সিঁড়িতে পড়ে যান এক যাত্রী ৷ সেই সময় তাঁর পেছনের যাত্রীরা হুড়মুড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে বাধা পান ও ধাক্কাধাক্কিতে একে অপরের উপর গিয়ে পড়েন ৷ এর জেরেই ঘটে যায় পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ৷

নর্দার্ন রেলওয়ের সিপিআরও হিমাংশু শেখর উপাধ্যায় দুর্ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করতে বলতে একথা বলেছেন ৷ পাশাপাশি তিনি জানান যে, ঘটনার তদন্ত করছে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি । হিমাংশু শেখর উপাধ্যায় বলেন, "গতকাল যখন এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে, তখন পটনার দিকে যাওয়া মগধ এক্সপ্রেস নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনের 14 নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েছিল এবং জম্মুর দিকে যাওয়া উত্তর সম্পর্ক ক্রান্তি 15 নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েছিল । এই সময়, 14-15 নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে আসা একজন যাত্রী পিছলে সিঁড়িতে পড়ে যান এবং তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক যাত্রী ধাক্কা খেয়ে পড়ে এবং এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে । এটি একটি উচ্চ-স্তরের কমিটি দ্বারা তদন্ত করা হচ্ছে ।"
তবে এই ঘটনার জন্য ট্রেনের পরিষেবায় কোনও প্রভাব পড়েনি বলে তিনি জানিয়েছেন ৷ তাঁর কথায়, "কোনও ট্রেন বাতিল করা হয়নি, প্ল্যাটফর্মে কোনও পরিবর্তনও করা হয়নি ৷ ঘটনাটির তদন্ত করা হচ্ছে, তাই কমিটিকে তাদের রিপোর্ট এবং অনুসন্ধান জমা দিতে দিন । প্ল্যাটফর্মের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক । সমস্ত ট্রেন স্বাভাবিক সময়ে চলছে ৷"
শনিবার, নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে পদদলিত হয়ে 18 জনের প্রাণহানি ঘটে । রাত 10টায় এই দুর্ঘটনাটি ঘটে ৷ লক্ষ লক্ষ ভক্ত মহাকুম্ভে যোগ দিতে প্রয়াগরাজ যাচ্ছিলেন, যার ফলে স্টেশনে ভিড় উপচে পড়ে ৷ তারই জেরে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে ৷ মৃতরা হলেন, আহা দেবী (79), পিঙ্কি দেবী (41), শীলা দেবী (50), ব্যোম (25), পুনম দেবী (40), ললিতা দেবী (35), সুরুচি (11), কৃষ্ণা দেবী (40), বিজয় শাহ (15), নীরজ (12), শান্তি দেবী (40), পূজা কুমার (8), সঙ্গীতা মালিক (34), পুনম (34), মমতা ঝা (40), রিয়া সিং (7), বেবি কুমারী (28) এবং মনোজ (47)।
'দুটি ট্রেনের বিলম্বে বাড়ে যাত্রীদের ভিড়'
রেলওয়ের ডিসিপি কেপিএস মালহোত্রা ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, দুটি ট্রেনের বিলম্বের ফলে যাত্রীদের ভিড় অত্যধিক বেড়ে যায় ৷ তার জেরেই ঘটে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ৷ তাঁর কথায় "একদিকে ট্রেন বিলম্বিত হয়েছিল, এবং এর পাশাপাশি প্রয়াগরাজের জন্য অতিরিক্ত টিকিটও কেটেছিলেন মানুষজন । আমরা ভিড় মূল্যায়ন করেছি, এবং আমি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অর্থাৎ প্রায় 10 মিনিটের মধ্যে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছি । এই সময়ের মধ্যে আরও বেশি লোকের আগমন এবং দুটি ট্রেনের বিলম্বই এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার মূল কারণ ৷" ঘটনাটি 14 এবং 15 নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঘটে, যা যাত্রীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা এবং আতঙ্কের সৃষ্টি করে ।
রেলওয়ে বোর্ডের তথ্য ও প্রচারের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর দিলীপ কুমার বলেন, "নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে আজমেরী গেটের পাশে, 14, 15 এবং 16 নম্বর প্ল্যাটফর্মে, নিয়মিত দিনের তুলনায় শনিবার সন্ধ্যায় আরও বেশি সংখ্যক লোক এসে পৌঁছেছিল ৷ ট্রেন ধরার চেষ্টা করার সময় সেখানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় । ফলস্বরূপ, বেশ কয়েকজন অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং আমরা তাঁদের সকলকে যথাযথ চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে পাঠিয়েছি ।"
পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার পর, সেখানে দিল্লি পুলিশ এবং রেলওয়ে সুরক্ষা বাহিনী দ্রুত মোতায়েন করা হয় এবং ঘটনাস্থলে দমকল বাহিনীও পাঠানো হয় । রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনসাধারণকে আশ্বস্ত করেছেন যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, ভিড় সামলাতে বিশেষ ট্রেন চালানো হচ্ছে । ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আরও বিশৃঙ্খলা রোধ করার দিকে মনোযোগী হয়েছে ৷ আগামী 26 ফেব্রুয়ারি শেষ হতে চলেছে মহাকুম্ভের উৎসব ৷ তার আগে মহাকুম্ভের জন্য বিশেষ ট্রেনগুলিতে প্রচুর ভিড় দেখা যাচ্ছে ।
14 নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাছে যে পরিস্থিতি হয়
বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে যে, ঘণ্টায় প্রায় 1500 সাধারণ (জেনারেল) টিকিট বিক্রি হচ্ছিল, যার ফলে প্ল্যাটফর্মে প্রচুর মানুষের ভিড় জমে । 14 নম্বর প্ল্যাটফর্ম এবং 1 নম্বর প্ল্যাটফর্মের এসকেলেটরের কাছে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় । তবে এনডিআরএফ কমান্ডান্ট দৌলত রাম চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন যে, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ।
তাঁর কথায়, "...পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে । জখমদের উদ্ধার করা হয়েছে ৷ আমাদের কাছে 14 নম্বর প্ল্যাটফর্মে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার খবর এসেছিল ৷ আমরা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছি ৷" রেলের ডেপুটি কমিশনার (ডিসিপি) কেপিএস মালহোত্রা বলেন, "14 নম্বর প্ল্যাটফর্মে প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে থাকায় বহু লোকের সমাগম হয়েছিল ৷ এছাড়াও, স্বতন্ত্রতা সেনানি এক্সপ্রেস এবং ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস ছাড়তে দেরি করায়, 12, 13 এবং 14 নম্বর প্ল্যাটফর্মে যানজট আরও বাড়ে। এই ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ের বোর্ড ৷"