কোটপুটলি, 1 জানুয়ারি: খেলতে খেলতে কুয়োয় পড়ে গিয়েছিল ছোট্ট চেতনা ৷ 10 দিন ধরে উদ্ধারের কাজ চলার পর বুধবার বিকেলে তাকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন স্থানীয় থানার আধিকারিক মহাবীর সিং ৷ সঙ্গে সঙ্গে তাকে অচৈতন্য অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ৷
হাসপাতালের আধিকারিক ডাঃ চৈতন্য রাওয়াত জানান, 10 দিন ধরে কুয়োয় আটকে থাকার ফলে মৃত্যু হয়েছে 3 বছরের চেতনার ৷ তিনি বলেন, "তাকে (চেতনা) আনার পর সঙ্গে সঙ্গে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ একটা স্পেশাল বেড তার জন্য আগেভাগেই রাখা হয়েছিল ৷ চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখে নিশ্চিত করেন যে শিশুটি আর বেঁচে নেই ৷ কালেক্টরের নির্দেশ মেনে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে ৷"
গত 23 ডিসেম্বর কুয়োর 150 ফুট গভীরে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিল বছর তিনেকের চেতনা ৷ খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার অভিযানে নামে এনডিআরএফ ৷ 240 ঘণ্টা একটানা অন্ধকার সুড়ঙ্গে আটকে থাকার পর তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য জেলার বিডিএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ এই প্রসঙ্গে ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর কল্পনা আগরওয়াল তখন বলেছিলেন, "শিশুটিকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে ৷ সে এখন হাসপাতালে ৷ শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বোঝা যাবে, সে কেমন আছে ৷" কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হল ৷ চেতনার জ্ঞান আর ফিরল না ৷
VIDEO | Rajasthan: Here’s what Medical Officer Dr Chetanya Rawat said about the death of 3-year-old Chetna, who lost her life after being trapped in a borewell for 10 days in Kotputli.
— Press Trust of India (@PTI_News) January 1, 2025
" she was brought in and immediately moved to the emergency room, where a special bed was set… pic.twitter.com/u5ci0QQQDO
এর আগে এদিনই কালেক্টর জানিয়েছিলেন, খুব শীঘ্রই চেতনাকে বের করে আনা হবে ৷ তিনি বলেন, "উদ্ধারকারী দল 170 ফুট গভীর একটি টানেল খুঁড়েছে ৷ চেতনা কোথায় আটকে আছে, তা খুঁজে পেয়েছে ৷ মেয়েটিকে খুব শীঘ্রই বের করে আনা হবে ৷ ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুল্যান্স এবং পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে ৷" বিডিএম হাসপাতালের সামনেও কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে ৷ সেখানে সকাল থেকেই ছিলেন, ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর, এসপি, প্রশাসনের উচ্চস্তরীয় কর্তারা ৷
উদ্ধারকারী দলের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, গত 8 দিন ধরে চেতনা নড়াচড়া করেনি ৷ একই অবস্থায় ছিল ৷ ইংরেজি L অক্ষরের আদলে গর্ত খুঁড়ে তাকে বের করে আনা হয়েছে ৷ এর আগে তাকে উদ্ধারের পাঁচটি প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয় ৷ পরিবারের লোকজন প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছিল ৷ পরে সোমবার ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর কল্পনা আগরওয়াল চেতনার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করেন ৷ তিনি তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, উদ্ধারের পথে কী কী অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ৷
ঘটনার টাইমলাইন
23 ডিসেম্বর 2024: সোমবার দুপুর 1.30 টা নাগাদ চেতনা খেলতে খেলতে পিছলে গিয়ে কুয়োর ভিতর পড়ে যায় ৷
24 ডিসেম্বর 2024: কুয়োর 150 ফুট গভীর থেকে তাকে 30 ফুট দূরত্বে টেনে তোলা হয় ৷ কিন্তু সে সেখানেই আটকে থাকে ৷
25 ডিসেম্বর 2024: জেসিবি মেশিনের সাহায্যে পিট খুঁড়ে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয় ৷ ওই পিটে সবসময় অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছিল, যাতে চেতনার শ্বাস প্রক্রিয়ায় কোনও সমস্যা না হয় ৷ ক্যামেরাতে মেয়েটির অবস্থা দেখা যাচ্ছিল না ৷
26 ডিসেম্বর 2024: এরপর উত্তরাখণ্ড থেকে একটি বিশেষ উদ্ধারকারী দলকে ডেকে পাঠানো হয় ৷ তারা পাইলিং মেশিন দিয়ে ক্রমাগত কুয়োটি খুঁড়তে থাকেন ৷ এই সময় মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছিল ৷ ফলে উদ্ধারের কাজ চালিয়ে যেতে সমস্যা পড়তে হচ্ছিল ৷
27 ডিসেম্বর 2024: এই পরিস্থিতিতে ব়্যাট হোল মাইনারের দল চেতনাকে উদ্ধারের দায়িত্ব নেয় ৷
28 ডিসেম্বর 2024: কুয়োর পিটের পাশেই 170 ফুটের পিট খোঁড়া হয়েছিল ৷ উদ্ধারকারী এনডিআরএফ দল যন্ত্রগুলি নামিয়ে আনে এবং সুড়ঙ্গের ভিতরে 90 ডিগ্রি কোণে 10 ফুট গভীর একটি গর্ত খোঁড়া শুরু করে ৷
29 ডিসেম্বর 2024: 170 ফুট দীর্ঘ একটি সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয় এবং ইংরেজি L হরফের আরেকটি গর্ত খোঁড়া হয় ৷
30 ডিসেম্বর 2024: সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ সম্পূর্ণ হয় ৷ সেখান থেকে গ্যাস বের হওয়ায় শ্বাস প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে অসুবিধে হচ্ছিল ৷ তাই খুদে চেতনার কাছে পৌঁছতে পারছিল না উদ্ধারকারী দল ৷
31 ডিসেম্বর 2024: ফের 4 ফুটের একটি সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয় ৷ এরপর ওই চেতনার কাছে পৌঁছতে সক্ষম হয় উদ্ধারকারী দল ৷
1 জানুয়ারি 2025: কাজে এল না সমস্ত প্রচেষ্টা। চেতনাকে বের করে নিয়ে আসা সম্ভব হলেও প্রাণে বাঁচানো গেল না।