নয়াদিল্লি, 6 ফেব্রুয়ারি: নিয়োগের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অনিয়ম ও দুর্নীতিকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করার জন্য লোকসভায় নয়া বিল পাশ করল কেন্দ্রীয় সরকার ৷ তার নাম দ্য পাবলিক এক্সামিনেশনস (প্রিভেনশন অফ আনফেয়ার মিনস) বিল, 2024 ৷ এই বিলে অপরাধীদের সর্বোচ্চ 10 বছরের জেল এবং 1 কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে ৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং এই বিল সম্পর্কে লোকসভায় বলেন, মেধাবী ছাত্র এবং প্রার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্যই এই বিলের বিধানগুলি তৈরি হয়েছে । বিরোধী সদস্যদের প্রস্তাবিত সংশোধনী প্রত্যাখ্যান করার পর বিলটি আজ লোকসভায় পাশ হয় ।
জিতেন্দ্র সিং এ দিন বলেন, সরকার "সংগঠিত অপরাধের বিনিময়ে মেধাবী (প্রার্থীদের) বলি দিতে দেবে না ৷" শিক্ষার্থী এবং প্রার্থীরা এই বিলের আওতায় পড়বেন না এবং চাকরিপ্রার্থীদের এই বিলের জন্য কোনও ক্ষতি হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি ।
রাজস্থানে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, হরিয়ানায় গ্রুপ-ডি পদের জন্য কমন এলিজিবিলিটি টেস্ট (সিইটি), গুজরাতে জুনিয়র ক্লার্কদের নিয়োগ পরীক্ষা এবং বিহারে কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার মতো প্রতিযোগিতামূলক বেশকিছু পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর তা বাতিল করতে হয়েছে ৷ পশ্চিমবঙ্গেও শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে চলছে একাধিক মামলা ৷ তারই প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ।
এই বিলে সরকারি চাকরির পরীক্ষার জন্য একটি উচ্চ-স্তরের জাতীয় কারিগরি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা কম্পিউটারাইজড পরীক্ষার প্রক্রিয়াকে আরও নিরাপদ করতে সুপারিশ করবে । কমিটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলিকে ফুলপ্রুফ করার জন্য প্রোটোকলের উন্নয়নের দিকে নজর রাখবে, নির্ভুল আইটি নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিকাশের জন্য উপায় তৈরি করবে, পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির ইলেকট্রনিক নজরদারি নিশ্চিত করবে এবং এই জাতীয় পরীক্ষা পরিচালনার জন্য আইটি ও উপস্থিত পরিকাঠামো উভয়ের জন্য জাতীয় মান ও পরিষেবা প্রণয়ন করবে ।
অনেক ক্ষেত্রে এটা দেখা গিয়েছে যে, সংগঠিত গোষ্ঠী ও মাফিয়ারা অসদাচরণের সঙ্গে জড়িত দলকে মোতায়েন করে প্রশ্নপত্র ফাঁসে লিপ্ত হয় । এই বিল প্রাথমিকভাবে এই ধরনের প্রচেষ্টাকে আটকানোর লক্ষ্যে তৈরি হয়েছে । বিলটির উদ্দেশ্য হল, সরকারি চাকরির পরীক্ষা পদ্ধতিতে অধিকতর স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা আনা এবং যুবকদের আশ্বস্ত করা যে, তাঁদের আন্তরিক ও প্রকৃত প্রচেষ্টা পুরস্কৃত হবে এবং তাঁদের ভবিষ্যত নিরাপদ ।
31 জানুয়ারি বাজেট অধিবেশনের শুরুতে সংসদের উভয় কক্ষের যৌথ বৈঠকে ভাষণ দেওয়ার সময় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বলেছিলেন যে, সরকার পরীক্ষায় অনিয়ম নিয়ে যুবকদের উদ্বেগ সম্পর্কে সচেতন । তিনি বলেন, "অতএব, এই ধরনের অপকর্মকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করার জন্য একটি নতুন আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷"
সরকার সবকিছুকে কেন্দ্রীভূত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা ৷ তার জবাবে এ দিন জিতেন্দ্র সিং বলেন, মোদি সরকার সমবায় ফেডারেলিজমে বিশ্বাস করে এবং বিলটি সমস্ত ব্যবস্থাকে কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করে না । তিনি বলেন, যখনই কোনও পরীক্ষা বাতিল করা হবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করা হবে । বাতিল পরীক্ষার পুনরায় নেওয়ার জন্য কোনও দৃঢ় সময়সীমা থাকতে পারে না ৷ কারণ প্রায়শই এই জাতীয় মামলাগুলি তদন্তকারী সংস্থাগুলি পরীক্ষা করে এবং তারা তাদের নিজস্ব সময় নেয় । মন্ত্রী এ দিন বলেন, ইউপিএসসি 14টি ভাষায় পরীক্ষা পরিচালনা করছে এবং "আমরা ধীরে ধীরে সমস্ত অর্থাৎ 22টি ভাষাই অন্তর্ভুক্ত করার আশা রাখছি ৷"
বিলের বিতর্কে অংশ নিয়ে কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন যে, বিলটি শাস্তিমূলক বিধানের কথা বলে তবে অপরাধ প্রতিরোধের ব্যবস্থা এতে অনুপস্থিত । তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, সরকারের প্রচেষ্টা সমস্ত কর্তৃপক্ষকে কেন্দ্রীভূত করা । অধীর বলেন যে, দেশ প্রচুর সংখ্যা ডেটা ফাঁসের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে, সেখানে কীভাবে সরকার এই ত্রুটিগুলিকে তুলে ধরতে চায় ৷
এন কে প্রেমচন্দ্রন (আরএসপি) দাবি করেন যে, বিলের বিধানগুলি ফৌজদারি আইনশাস্ত্রের নীতির বিরুদ্ধে এবং তাই এটিকে যাচাইয়ের জন্য স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো উচিত । তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে, এই আইনের কোনও খারাপ নেই, তবে আসল সমস্যা হল তা বাস্তবায়ন নিয়ে । বিরোধী দলের অধিকাংশ সদস্যই বিলটিকে সমর্থন করেছেন । (পিটিআই)
আরও পড়ুন: