হায়দরাবাদ, 15 ফেব্রুয়ারি: হৃদয়বিদারক ! 60 বছর বয়সি মৃত বাবার দেহ 4 দিন ধরে পড়ে রইল বাড়ির বাইরে ৷ তাঁর বড় ছেলে শেষকৃত্য করবে না বলে, সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ৷ কারণ, বাবা জীবিত অবস্থায় 'পুরো' সম্পত্তি তাঁর নামে লিখে দেননি ৷ ঘটনাটি তেলেঙ্গানার জঙ্গাঁ জেলার কোডাকান্ডলা মণ্ডলের এদুনুতালা গ্রামের। শেষমেশ ভূমি ও রাজস্ব দফতরের কর্মকর্তারা সেখানে পৌঁছন ও পুলিশই হস্তক্ষেপে সম্পত্তির একটি ছেলের নামে হস্তান্তর করা হয় ও শুক্রবার তাঁর দাহ সম্পন্ন হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদুনুতালা গ্রামের বাসিন্দা ভেলিকাত্তে ইয়াদাগিরি (60) দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থতায় ভুগছিলেন ৷ গত 10 ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয় ৷ প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ছেলের মা, বোন ও ভাইকেও ওই বৃদ্ধ সমান ভাগে ভাগ করে দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু, বড় ছেলের দরকার পুরোটা ৷ তাই তিনি বাবার শেষকৃত্য করতে নারাজ ৷ ভেলিকাত্তের দুই স্ত্রী এবং তিন সন্তান ছিল। তাঁর প্রথম স্ত্রী রেণুকার ছেলে রমেশ ৷ রেণুকা আগেই মারা গিয়েছেন ৷ বর্তমান স্ত্রী পদ্মার উপেন্দ্র এবং শোভা নামের দুই ছেলে, মেয়ে ৷
ভূমি ও রাজস্ব দফতর সূত্রে খবর, ভেলিকাত্তের 15 একর জমি ছিল। তিনি তাঁর দুই ছেলে রমেশ এবং উপেন্দ্ররের নামে 5 একর করে জমি লিখে দিয়েছিলেন ৷ মেয়ে শোভাকে বিয়ের সময় 3 একর জমি উপহার দেন বাবা। বাকি 2 একর জমি তার দ্বিতীয় স্ত্রী পদ্মার নামে লিখে দিয়ে যান ৷ গত 10 তারিখ স্ত্রী পদ্মা এবং মেয়ে শোভা বৃদ্ধের মৃতদেহ এদুনুতলায় ছেলে রমেশের বাড়িতে নিয়ে আসেন। তাঁদের মতে, বড় ছেলেকেই বাবার শেষকৃত্য করতে হবে ৷ তবে, তিনি মৃতদেহ দাহ করতে নারাজ ৷ রমেশ পঞ্চায়েতের কাছে একটি আবেদন জমা দেন ৷ তিনি উল্লেখ করেন, সৎ মাকে বাবার দেওয়া 2 একর জমি তাঁর নামে লিখে দিতে হবে ৷ রমেশ জানান, সম্পত্তি বন্টনের সময় তাঁকে বঞ্চিত করা হয়েছে ৷ পঞ্চায়েত প্রথমে এনিয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি ৷
পদ্মা বলেন, "আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে বড় ছেলের হয়রানির শিকার আমি ৷ আমাকে প্রতিনিয়ত সম্পত্তি তাঁর নামে রেজিস্ট্রি করতে বলছে ৷ আমার ছেলে এবং মেয়ে 4দিন ধরে তাঁদের বাবার শেষকৃত্য করতে চেষ্টা করছে, কিন্তু সেখানে বাধা দিচ্ছে রমেশ ৷ নিজেও করছে না ৷ আত্মীয়-স্বজনদেরও বাধা দিচ্ছে ৷ ছেলেকে ওই দুই একর জমি দিলে আমার বাঁচব কীভাবে? আমি রেজিস্ট্রেশন করতে রাজি নই।"
এদিকে, মৃতদেহ 4 দিন ধরে বাড়ির সামনে পড়ে থাকে। অবশেষে, পুলিশ এবং ভূমি রাজস্ব দফতরের কর্মকর্তারা হস্তক্ষেপ করেন ৷ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনার পর পদ্মার থেকে এক একর জমি রমেশের নামে হস্তান্তরের জন্য একটি লিখিত চুক্তি স্বাক্ষর হয় ৷ অবশেষে, গতকাল শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।