ETV Bharat / bharat

টাটা স্টিলের ইতিহাসে প্রথম মহিলা খনি ইঞ্জিনিয়ার গায়েত্রী, জীবন কাটে ভূগর্ভে - First Woman Engineer Of Tata Steel - FIRST WOMAN ENGINEER OF TATA STEEL

Bandi Gayatri: ভূগর্ভস্থ খনির 500 মিটার গভীরে কাজ করা সহজ নয় । চারদিক অন্ধকারে আচ্ছন্ন । কখন খনির ছাদ ধসে পড়বে, তা কেউ জানে না । সেখানেই বড় দায়িত্ব সামলাচ্ছেন হায়দরাবাদের বান্দি গায়েত্রী।

Bandi Gayatri
টাটা স্টিলের ইতিহাসে প্রথম মহিলা ইঞ্জিনিয়ার গায়েত্রী, যিনি কাজ করেন ভূগর্ভস্থ খনিতে ৷
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 5, 2024, 8:04 PM IST

হায়দরাবাদ, 5 এপ্রিল: এসি ঘর, সাজানো চরাচর, ব্র্যান্ডেড জামাকাপড়, আধুনিক ডিজিটাল গ্যাজেট, উইকএন্ডে লং ড্রাইভ... এটাই নতুন প্রজন্মের জীবনযাপনের পরিচিত ধারা । কিন্তু, হায়দরাবাদের বান্দি গায়েত্রী ভূগর্ভস্থ খনিতে কাজ করাকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন, যা পুরুষদের জন্যও বেশ কঠিন কাজ । টাটা স্টিলের 114 বছরের ইতিহাসে তিনিই প্রথম মহিলা যিনি ভূগর্ভস্থ খনিতে কাজ করছেন ৷

এই উপলক্ষে ইটিভি ভারত তাঁকে শুভেচ্ছা জানায় ৷ গায়েত্রী বলেন, ''ছোটবেলা থেকেই আমি আমার কাজে সেরা হতে চেয়েছি ৷ এটাই আমার অভ্যাস ৷ তাই আমি বরাবরই প্রথাগত শিক্ষা বা পেশা চাইনি ৷ বাবা ক্যাপ্টেন বান্দি বেণু সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। মা জেপি মরগান অ্যান্ড চেজের ভাইস প্রেসিডেন্ট । বড় বোন বিনিয়োগ-ব্যাংকিং ক্ষেত্রে কর্মরত । আমি পদার্থবিদ্যা এবং গণিতের প্রতি আমার বিশেষ অনুরাগের পাশাপাশি ডেটা সায়েন্সে পারদর্শী হয়েছি । অনেক পুরস্কারও পেয়েছি । এই ক্ষেত্রে অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে । কিন্তু সেটা আমার উদ্দেশ্য নয় ৷"

গায়েত্রী বলেন, ''ছোটবেলা থেকেই কোনও কিছু খারাপ হয়ে গেলেই আমি মেরামত করতাম । এটা দেখে, মা সবসময় বলতেন, বড় হয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হব । কিন্তু, সবার প্রত্যাশার বিপরীতে গিয়ে আমি মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার গড়েছি । হায়দরাবাদ পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা করেছি । সেই সঙ্গে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছি । লন টেনিস ছাড়াও আমি কর্ণাটক সঙ্গীতে পারদর্শী ছিলাম । দ্বাদশ শ্রেণির পর উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আমার স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। তাই ঘরে বসে প্রস্তুতি নিলাম ৷

তিনি বলেন, 'দুর্ভাগ্যবশত, জেইই পরীক্ষার সময় আমার পা ভেঙে গিয়েছিল । তবে, আমি তা-ও পরীক্ষা দেব এবং এই ব্যথা সহ্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম । আমার কষ্ট নষ্ট হয়নি । ভাল ব়্যাঙ্ক নিয়ে আইআইটি বিএইচইউ, বারাণসীতে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়া শুরু করি । এই বিভাগে মেয়েদের সংখ্যা কম । প্রায়ই ওখানকার অধ্যাপকরা বলতেন যে, তুমি বিদেশে গিয়ে এই নিয়ে পড়ালেখা করে ভবিষ্যতে সেখানেই চাকরি করবে । কিন্তু, আমি উলটোটাই বলতে চাই । আমি কথার চেয়ে কাজে করে দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি । আমি আইআইটি আইএসএম ধানবাদ থেকে সম্মানীয় চাণক্য টেকমিন ফেলোশিপ পেয়েছি । এটি আমাকে খনির হাইপারস্পেকট্রাল ইমেজ নিয়ে গবেষণা করতে সাহায্য করেছিল ৷''

গায়েত্রী বলেন, ''অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, কেন আপনি মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ? যদি আমরা সমস্যা দেখেই ভয় পাই, তাহলে আমরা উন্নতি করতে পারব না। দেশের ভবিষ্যৎ থমকে যেতে পারে না । এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে মেয়েদের কাজ করার তেমন নজির নেই৷ আমি সেটা জেনেও এগিয়ে গেলাম । বি.টেক শেষ করে টাটা স্টিলে যোগ দিলাম । প্রথম 6 মাস নোভামুন্ডিতে ওপেন কাস্ট মেটাল মাইনে কাজ করার পরে ঝরিয়ায় ভূগর্ভস্থ কয়লা খনিতে কাজ করার সুযোগ পাই । আমি আগেই শুনেছিলাম, মেয়ের জন্য ভূগর্ভস্থ খনিতে কাজ করা বেশ কঠিন ৷ তবে তা সত্ত্বেও আমি পিছিয়ে যাইনি ৷''

তিনি বলেন, ''কোম্পানি গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেছে যে, গত 114 বছরে একজনও মহিলা ইঞ্জিনিয়ার সেখানে কাজ করেননি, আমিই প্রথম । আমি মেয়ে বলে প্রথমে ওরা কি আমার কথা আদৌ শুনবে ? নিরাপত্তার দিক থেকে কোনও সমস্যা হবে কিনা তা নিয়েও নানা সংশয় রয়েছে । কিন্তু আমার উর্ধ্বতন কর্তারা আমাকে উৎসাহিত করেছেন । প্রথমে, আমি ভেবেছিলাম যে, আমি শুধুমাত্র আমার দায়িত্ব পালন করছি... আমি বুঝতে পারি, যারা আমার পরে এই ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে, আমি তাদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসাবে দাঁড়িয়ে আছি ৷''

হায়দরাবাদের বান্দি গায়েত্রী বলেন, ''একটি ভূগর্ভস্থ খনিতে 500 মিটার গভীরে কাজ করা সহজ নয় । অন্ধকারে আচ্ছন্ন । কখন খনির ছাদ ধসে পড়বে, তা কেউ জানে না । তাছাড়া, ঝরিয়া খনিতে গ্যাস থাকায় ভেতরে কোনও ডিজিটাল ডিভাইস, ফোন বা ঘড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না । খনিগর্ভে 90-100 শতাংশ আর্দ্রতা-সহ উচ্চ তাপমাত্রা থাকে । এমন জায়গায় সারাদিন পায়ে হেঁটেই দায়িত্ব পালন করতে হয় । শুরুতে, আমি 300 জনের দলের একজন হিসাবে কাজ শুরু করেছিলাম... এখন আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কিছু দায়িত্ব নিয়েছি যেখানে 1000 জন কাজ করছেন । আমি সেই কয়েকজন লোকের মধ্যে একজন যারা পণ্য পরিবহণ, ট্র্যাকিং এবং বিশেষ করে শ্যাফ্ট ড্রেসিং দেখেছি । আমার বাকি বন্ধুদের মতো, আমি এসি রুমে কাজ করি না ৷ আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় দিতে পারি না ৷ কিন্তু আমি আমার সন্তুষ্টি নিয়ে কাজ করতে পারি । এমন বিশেষ কোনও কাজ নেই যা মেয়েরা পারে না । আমরা যে কাজ পছন্দ করি, তা করা এমন কিছু কঠিন মনে হবে না । আমি নিজেই তার উদাহরণ !''

আরও পড়ুন:

শিকড়ের টানে 62 বছর ডেনমার্ক থেকে ভারতে দুই বোন

স্বেচ্ছামৃত্যু: মানসিকভাবে অসুস্থদের কি মৃত্যুতে সহায়তা করা উচিত ?

এআই, ডিপফেক ও ভয়েস ক্লোনিং: প্রযুক্তিগত হুমকির মুখে লোকসভা নির্বাচন

হায়দরাবাদ, 5 এপ্রিল: এসি ঘর, সাজানো চরাচর, ব্র্যান্ডেড জামাকাপড়, আধুনিক ডিজিটাল গ্যাজেট, উইকএন্ডে লং ড্রাইভ... এটাই নতুন প্রজন্মের জীবনযাপনের পরিচিত ধারা । কিন্তু, হায়দরাবাদের বান্দি গায়েত্রী ভূগর্ভস্থ খনিতে কাজ করাকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন, যা পুরুষদের জন্যও বেশ কঠিন কাজ । টাটা স্টিলের 114 বছরের ইতিহাসে তিনিই প্রথম মহিলা যিনি ভূগর্ভস্থ খনিতে কাজ করছেন ৷

এই উপলক্ষে ইটিভি ভারত তাঁকে শুভেচ্ছা জানায় ৷ গায়েত্রী বলেন, ''ছোটবেলা থেকেই আমি আমার কাজে সেরা হতে চেয়েছি ৷ এটাই আমার অভ্যাস ৷ তাই আমি বরাবরই প্রথাগত শিক্ষা বা পেশা চাইনি ৷ বাবা ক্যাপ্টেন বান্দি বেণু সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। মা জেপি মরগান অ্যান্ড চেজের ভাইস প্রেসিডেন্ট । বড় বোন বিনিয়োগ-ব্যাংকিং ক্ষেত্রে কর্মরত । আমি পদার্থবিদ্যা এবং গণিতের প্রতি আমার বিশেষ অনুরাগের পাশাপাশি ডেটা সায়েন্সে পারদর্শী হয়েছি । অনেক পুরস্কারও পেয়েছি । এই ক্ষেত্রে অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে । কিন্তু সেটা আমার উদ্দেশ্য নয় ৷"

গায়েত্রী বলেন, ''ছোটবেলা থেকেই কোনও কিছু খারাপ হয়ে গেলেই আমি মেরামত করতাম । এটা দেখে, মা সবসময় বলতেন, বড় হয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হব । কিন্তু, সবার প্রত্যাশার বিপরীতে গিয়ে আমি মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার গড়েছি । হায়দরাবাদ পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা করেছি । সেই সঙ্গে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছি । লন টেনিস ছাড়াও আমি কর্ণাটক সঙ্গীতে পারদর্শী ছিলাম । দ্বাদশ শ্রেণির পর উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আমার স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। তাই ঘরে বসে প্রস্তুতি নিলাম ৷

তিনি বলেন, 'দুর্ভাগ্যবশত, জেইই পরীক্ষার সময় আমার পা ভেঙে গিয়েছিল । তবে, আমি তা-ও পরীক্ষা দেব এবং এই ব্যথা সহ্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম । আমার কষ্ট নষ্ট হয়নি । ভাল ব়্যাঙ্ক নিয়ে আইআইটি বিএইচইউ, বারাণসীতে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়া শুরু করি । এই বিভাগে মেয়েদের সংখ্যা কম । প্রায়ই ওখানকার অধ্যাপকরা বলতেন যে, তুমি বিদেশে গিয়ে এই নিয়ে পড়ালেখা করে ভবিষ্যতে সেখানেই চাকরি করবে । কিন্তু, আমি উলটোটাই বলতে চাই । আমি কথার চেয়ে কাজে করে দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি । আমি আইআইটি আইএসএম ধানবাদ থেকে সম্মানীয় চাণক্য টেকমিন ফেলোশিপ পেয়েছি । এটি আমাকে খনির হাইপারস্পেকট্রাল ইমেজ নিয়ে গবেষণা করতে সাহায্য করেছিল ৷''

গায়েত্রী বলেন, ''অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, কেন আপনি মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ? যদি আমরা সমস্যা দেখেই ভয় পাই, তাহলে আমরা উন্নতি করতে পারব না। দেশের ভবিষ্যৎ থমকে যেতে পারে না । এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে মেয়েদের কাজ করার তেমন নজির নেই৷ আমি সেটা জেনেও এগিয়ে গেলাম । বি.টেক শেষ করে টাটা স্টিলে যোগ দিলাম । প্রথম 6 মাস নোভামুন্ডিতে ওপেন কাস্ট মেটাল মাইনে কাজ করার পরে ঝরিয়ায় ভূগর্ভস্থ কয়লা খনিতে কাজ করার সুযোগ পাই । আমি আগেই শুনেছিলাম, মেয়ের জন্য ভূগর্ভস্থ খনিতে কাজ করা বেশ কঠিন ৷ তবে তা সত্ত্বেও আমি পিছিয়ে যাইনি ৷''

তিনি বলেন, ''কোম্পানি গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেছে যে, গত 114 বছরে একজনও মহিলা ইঞ্জিনিয়ার সেখানে কাজ করেননি, আমিই প্রথম । আমি মেয়ে বলে প্রথমে ওরা কি আমার কথা আদৌ শুনবে ? নিরাপত্তার দিক থেকে কোনও সমস্যা হবে কিনা তা নিয়েও নানা সংশয় রয়েছে । কিন্তু আমার উর্ধ্বতন কর্তারা আমাকে উৎসাহিত করেছেন । প্রথমে, আমি ভেবেছিলাম যে, আমি শুধুমাত্র আমার দায়িত্ব পালন করছি... আমি বুঝতে পারি, যারা আমার পরে এই ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে, আমি তাদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসাবে দাঁড়িয়ে আছি ৷''

হায়দরাবাদের বান্দি গায়েত্রী বলেন, ''একটি ভূগর্ভস্থ খনিতে 500 মিটার গভীরে কাজ করা সহজ নয় । অন্ধকারে আচ্ছন্ন । কখন খনির ছাদ ধসে পড়বে, তা কেউ জানে না । তাছাড়া, ঝরিয়া খনিতে গ্যাস থাকায় ভেতরে কোনও ডিজিটাল ডিভাইস, ফোন বা ঘড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না । খনিগর্ভে 90-100 শতাংশ আর্দ্রতা-সহ উচ্চ তাপমাত্রা থাকে । এমন জায়গায় সারাদিন পায়ে হেঁটেই দায়িত্ব পালন করতে হয় । শুরুতে, আমি 300 জনের দলের একজন হিসাবে কাজ শুরু করেছিলাম... এখন আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কিছু দায়িত্ব নিয়েছি যেখানে 1000 জন কাজ করছেন । আমি সেই কয়েকজন লোকের মধ্যে একজন যারা পণ্য পরিবহণ, ট্র্যাকিং এবং বিশেষ করে শ্যাফ্ট ড্রেসিং দেখেছি । আমার বাকি বন্ধুদের মতো, আমি এসি রুমে কাজ করি না ৷ আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় দিতে পারি না ৷ কিন্তু আমি আমার সন্তুষ্টি নিয়ে কাজ করতে পারি । এমন বিশেষ কোনও কাজ নেই যা মেয়েরা পারে না । আমরা যে কাজ পছন্দ করি, তা করা এমন কিছু কঠিন মনে হবে না । আমি নিজেই তার উদাহরণ !''

আরও পড়ুন:

শিকড়ের টানে 62 বছর ডেনমার্ক থেকে ভারতে দুই বোন

স্বেচ্ছামৃত্যু: মানসিকভাবে অসুস্থদের কি মৃত্যুতে সহায়তা করা উচিত ?

এআই, ডিপফেক ও ভয়েস ক্লোনিং: প্রযুক্তিগত হুমকির মুখে লোকসভা নির্বাচন

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.