গুন্টুর (অন্ধ্রপ্রদেশ), 8 এপ্রিল: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘন ঘন আছড়ে পড়ছে ঘূর্ণিঝড় ৷ বাড়ছে গরম ৷ এই অতিরিক্ত তাপের প্রভাব পড়ছে কৃষি জমিতে ৷ ক্ষতির সম্মুখীণ হচ্ছেন চাষিরা ৷ তাই চরম আবহাওয়ার থেকে বাঁচার উপায় বাতলালেন অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুরের কৃষকরা ৷ ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত এই এলাকায় চাষিরা অতিরিক্ত চাপ থেকে ফসলকে রক্ষা করতে জোর দিয়েছেন প্রাকৃতিক চাষের কৌশলের উপর ৷
গুন্টুরে চাষিরা বিশেষ ধরনের গন্ধের মাধ্যমে ফসলকে বাঁচাচ্ছেন ৷ এই গন্ধ খামারে গরুর মূত্র, অপরিশোধিত চিনি এবং অন্যান্য জৈব পদার্থের মিশ্রন থেকে আসে ৷ এটি ভুট্টা, চাল, শাক-সবজি এবং অন্যান্য শাকসবজি চাষের ক্ষেত্রে সার, কীটনাশক এবং খারাপ আবহাওয়ার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে ৷ কৃষকরা জানাচ্ছেন, তথাকথিত প্রাকৃতিক চাষ তাদের ফসল রক্ষা করে কারণ মাটি বেশি জল ধরে রাখতে পারে এবং গাছগুলির শিকড় শক্ত হয়, যা প্রবল বেগে আসা বাতাস সহ্য করতে তাদের সাহায্য করে ।
প্রাকৃতিক চাষে যে সুবিধা হয় তার ইতিবাচক উদাহরণ হয়ে উঠেছে অন্ধ্রপ্রদেশ ৷ সরকারের সক্রিয় সমর্থন রাজ্যের চাষিদের সাফল্যের প্রধান কারণ । বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই পদ্ধতিগুলি ভারতের বিস্তীর্ণ কৃষিজমি জুড়ে প্রসারিত করা উচিত ৷ কারণ জলবায়ু পরিবর্তন এবং চাষে মুনাফা কমে যাওয়ার এই বছর অনেক কৃষকদের বিক্ষোভের পথে হেঁটেছেন ৷ কিন্তু এই পদ্ধতিগুলি সারাদেশে চালু করার অর্থ হল অধিকাংশ কৃষক এখনও রাসায়নিক কীটনাশক এবং সার ব্যবহার করে ৷ এর ফলে চরম আবহাওয়া আঘাত হানলে তাদের ফসল আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে ।
অনেকের জন্য প্রাকৃতিক চাষে বৃহত্তর বিনিয়োগের সুবিধাগুলি ইতিমধ্যেই সুস্পষ্ট ৷ ডিসেম্বরে প্রতি ঘন্টায় 110 কিলোমিটার (ঘণ্টায় 62 মাইল) বেগে ঘূর্ণিঝড় মিচাং আছড়ে পড়েছিল ৷ এই ঝড়ের ফলে ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়, যা শহর ও জমিকে প্লাবিত করে । ঝড়ের কয়েক সপ্তাহ পরে সার্ভেতে দেখা গিয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে 6 লক্ষ একর ফসল ধ্বংস হয়েছে ।
তবে চাষি রাজু যিনি সেই সময়ে ধান চাষ করছিলেন তাঁর জমিতে জল জমেনি ৷ তিনি বলেন, "আমাদের জমিতে বৃষ্টির জল একদিনে মাটিতে মিশে গিয়েছিল ৷ মাটি বেশি জল শোষণ করতে পেরেছিল ৷ কারণ কীটনাশক ব্যবহৃত মাটি খসখসে এবং শুষ্ক হয় ৷ তবে প্রাকৃতিক চাষে মাটিতে বেশি ছিদ্র থাকে ৷ তাই জল সহজে নেমে যায় ৷ সারা বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের শস্য রোপণ মাটিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ।"
অন্যদিকে আর এক কৃষক শ্রীকান্ত কানাপালের জমিতে রাসায়নিক কীটনাশক এবং সারের উপর নির্ভর করে চাষ করেছিলেন ৷ ফলে ঘূর্ণিঝড়ের পর চার দিন তাঁর জমি প্লাবিত ছিল । তিনি বলেন, " আমার প্রচুর ক্ষতি হয়েছে ৷ রাজুর ফসল শক্ত থাকতে দেখে বিকল্প চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আগ্রহী হই আমি । আগামী মরশুমে আমি প্রাকৃতিক চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছি ।"
আরও পড়ুন: