হায়দরাবাদ, 24 এপ্রিল: ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ ৷ লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ঠিক আগে পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ৷ পাশাপাশি পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগও তেলেন তিনি ৷ মঙ্গলবার হায়দরাবাদে একটি সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, "আমি পশ্চিমী সংবাদমাধ্যম থেকে এই ধরনের অনেক খবর পাই যেখানে তারা আমাদের গণতন্ত্রের সমালোচনা করে ৷ তবে এটি তারা তথ্যের অভাবে করে তা না, বরং পশ্চিমী সংবাদমাধ্যম মনে করে তারাও আমাদের নির্বাচনে রাজনৈতিক খেলোয়াড় ।"
বিদেশমন্ত্রীর দাবি, পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে তাপপ্রবাহ চলছে তার মধ্যে কেন তারা নির্বাচন করছে? তিনি বলেন, "আমি তাদের বলতে চাই, শুনুন এই আবহাওয়ায় আমার সব থেকে কম যতজন ভোট দিয়েছে তা আপনাদের সর্বোচ্চ ভোটদানের চেয়ে বেশি ৷" তিনি আরও বলেন, "এগুলো আমাদের নিয়ে খেলা চলছে । এগুলি সব বিশ্ব রাজনীতি । এগুলির মাধ্যমে আমাদের ঘরোয়া রাজনীতিকে বিশ্বব্যাপী করা হচ্ছে ৷ বিশ্ব রাজনীতির অংশ যারা তারা মনে করছে যে তাদের এখন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত । তারা কীভাবে আমাদের সঙ্গে পরামর্শ না করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে কে তাদের শাসন করবে? তারা (পশ্চিম) আসলে মনে করে যে তারা আমাদের ভোটারদের অংশ ৷ আমি মনে করি যে সঠিক সময় এসেছে তাদের ভুল ধারণা বা মোহ থেকে মুক্ত করার এবং আমরা আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে এটিকে করা সম্ভব ।"
পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের তরফে ভারতকে নিয়ে এই ধরণের আক্রমণ, সমালোচনা এবং র্যাঙ্কিং ও রিপোর্টগুলির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী ৷ কারণ তারা সব বিষয়ে প্রশ্ন করবে বলে তিনি জানান । তিনি বলেন, "তারা আপনার নির্বাচন ব্যবস্থা, আপনার ইভিএম, আপনার নির্বাচন কমিশন, এমনকী আবহাওয়াও নিয়েও প্রশ্ন করবে ৷"
জয়শঙ্করের কথায়, "সরকার যে সিদ্ধান্তগুলি নেবে তা কেবল আগামী পাঁচ বছরের জন্য নয় ৷ এই সিদ্ধান্তগুলি আমাদের জাতি, সমাজ এবং আগামী প্রজন্মকে ভোট দেওয়ার প্রতি উৎসাহিত করবে । এটি গ্যারান্টি ৷ গ্যারান্টি আদতে আস্থার অভিব্যক্তি । গত দশ বছর ধরে আমরা যা দিয়েছি তার উপর ভিত্তি করে এটি আস্থার প্রকাশ ৷" তিনি তুলে ধরেন যে গত দশ বছরে ভারতকে সারা বিশ্বে কীভাবে সম্মান দিয়েছে ৷ দেশ আজ কীভাবে আগামী 25 বছরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ৷ বিদেশমন্ত্রী বলেন, "সেই মানসিকতা নিয়ে আমাদের বিশ্বের কাছে যেতে হবে ।"
পাশাপাশি জি20 শীর্ষ সম্মেলনের কথা মনে করিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, "ভারত জি20 সভাপতিত্ব করার সময় বেশ কয়েকটি দেশ ভারতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে চেয়েছিল । বিশেষ করে সৌদি আরবের মাধ্যমে আইএমইসি নামে একটি উদ্যোগ ছিল, তারা ভারতকে ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চেয়েছিল । রাশিয়া এবং ইরানও ইউরোপে একটি সংযোগ পথ চায় । পূর্বে ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলি মায়ানমারের মধ্য দিয়ে ভারতে আসার পথ চায় ৷"
ভারত সম্পর্কে বিশ্বের সংবাদমাধ্যম কী বলেছে?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনকালে বিশ্বের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম সংস্থার সংবাদ উপস্থাপনের বিষয়ে দৃষ্টি আরোপ করেছে ভারত ৷ পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমগুলি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং এনডিএ সরকারকে তীব্র আক্রমণের পাশাপাশি বিশ্ব দরবারে খারাপভাবে তুলে ধরছে ৷
এই সপ্তাহের শুরুতে নিউইয়র্ক ভিত্তিক একটি আমেরিকান সংবাদ মাধ্যম প্রকাশিত করে যে, ভারতের গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার বিষয়ে মোদির কোনো গ্যারান্টি নেই ৷ ভারতের নির্বাচনকে মোদি নিজের মতো করে পরিচালনা করছেন ৷ নয়াদিল্লি এই আর্টিকেলের তীব্র সমালোচনা করেছে । এই মাসের শুরুর দিকে নিউজউইকের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমকে একহাত নেন, যারা তাঁর সরকারকে ধর্মীয় বৈষম্যের সঙ্গে জড়ানোর অভিযোগ তোলেন ।
প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, "এগুলি এমন কিছু লোকের মস্তিস্ক প্রসূত ব্যাপার যারা নিজেদের চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে এসে বাইরের লোকেদের সঙ্গে মেশে না ৷ এমনকী ভারতের সংখ্যালঘুরাও এগুলিতে আর প্রভাবিত হয় না । সমস্ত ধর্মের সংখ্যালঘুরা ভারতে সুখে ও সমৃদ্ধিতে বসবাস করছে ৷"
গত বছর বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকে ভারত ৷ চিনা সরকারের মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক শাসন এবং বিদেশ নীতিতে ভারতের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রশংসা করে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেছিল ।
সাংহাইয়ের ফুদান ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের সেন্টারের ডিরেক্টর ঝাং জিয়াডং ওই আর্টিকেল লেখেন, "চিন ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা নিয়ে আলোচনা করার সময় ভারতীয় প্রতিনিধিরা আগে প্রাথমিকভাবে বাণিজ্য ভারসাম্য কমাতে চিনের পদক্ষেপের উপর দৃষ্টি আরোপ করতেন । কিন্তু এখন তারা ভারতের রফতানি সম্ভাবনার উপর বেশি জোর দিচ্ছে ৷"
আরও পড়ুন: