গোরখপুর, 28 নভেম্বর: এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলট সৃষ্টি তুলিকে খুন করা হয়েছে, অভিযাগ তুলেছে পরিবার ৷ সোমবার ভোরে মুম্বইয়ে তাঁর ফ্ল্যাট থেকে তরুণী পাইলটের (25) দেহ উদ্ধার হয় ৷ সৃষ্টি নিজেই এই চরম পন্থা বেছে নিয়েছিলেন, এই তত্ত্ব মানতে রাজি নন তাঁর কাকা বিবেক তুলি ৷
এই ঘটনায় তিনি সৃষ্টির প্রেমিক আদিত্য পণ্ডিতের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন ৷ তাঁর দাবি, সে সৃষ্টিকে খুন করেছে ৷ বিমানচালকদের মনের জোর অনেক বেশি হয়, সৃষ্টিরও তাই ছিল ৷ তিনি এমন কাজ করতেই পারেন না, দৃঢ় বিশ্বাস তরুণী বিমানচালকের কাকার ৷
বৃহস্পতিবার সৃষ্টির কাকা বলেন, "ও খুব শক্ত মনের মেয়ে ছিল ৷ বিমানচালকের প্রশিক্ষণের সময় মনেরও প্রশিক্ষণ হয় ৷ এই ধরনের একটা মেয়ে কখনও আত্মহত্যা করতে পারে না ৷" তিনি জানিয়েছেন, সৃষ্টির দেহ খুঁজে পাওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে আদিত্য পণ্ডিত এবং আরেকটি মেয়েও ছিল ৷ এই প্রসঙ্গে বিবেক তুলি বলেন, "ওরা দু'জনে কথা বলছিল ৷ এরপর সৃষ্টি ওর ফ্ল্যাটে চলে যায় ৷ আমি তো অবাক হয়ে গিয়েছি, পরবর্তী 15-20 মিনিটে এমন কী হল যে সৃষ্টিকে আত্মহত্যা করতে হল ? সবই তো দিব্য চলছিল ৷ ওর প্রেমিক আদিত্য পণ্ডিতকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ ওকে ঠিক করে জেরা করা উচিত ৷"
সৃষ্টির কাকা ভাইঝির শৈশব নিয়ে জানান, সৃষ্টি ছোটবেলা থেকেই বিমানচালক হতে চেয়েছিলেন ৷ তাঁর সেই স্বপ্নও পূরণ হয়েছিল ৷ তাঁদের পরিবার সেনার পরিবার ৷ তাঁর দাদু ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন ৷ 1971 সালে ভারত-পাক যুদ্ধে তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেন ৷ এই পরিবারের মেয়ে সৃষ্টি মাত্র 23 বছর বয়সে বিমানচালক হন ৷ গোরখপুরের প্রথম মহিলা পাইলট সৃষ্টি তুলি ৷ তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী আদিত্য যোগী ৷
কাজের প্রয়োজনে গত বছরের জুন মাস থেকে উত্তরপ্রদেশের বাড়ি ছেড়ে মুম্বইয়ের আন্ধেরির মারোল এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন সৃষ্টি ৷ দিল্লিতে বাণিজ্যিক বিমানচালকের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত একটি কোর্স করতে গিয়ে আদিত্য পণ্ডিতের সঙ্গে আলাপ হয় সৃষ্টির ৷ দু'জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ৷ আদিত্যও বিমানচালক হতে চায় ৷ তার প্রস্তুতিও নিচ্ছে, জানালেন কাকা বিবেক ৷
তিনি বলেন, "আদিত্যকে মুম্বই পুলিশ গ্রেফতার করেছে ৷ ও নিজেও বিমানচালক হওয়ার চেষ্টা করছে ৷ ও সৃষ্টিকে ব্ল্যাকমেল করত ৷ ওর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত ৷ হামেশাই রেগে যেত এবং এটাই আদিত্যর স্বভাব ৷ রাস্তাঘাটে সবার সামনে সৃষ্টির উপর চেঁচিয়ে উঠত ৷"
খাওয়াদাওয়া আচারের মতো বিষয়গুলি নিয়ে আদিত্য নিজের মত সৃষ্টির উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাত, অভিযোগ বিবেক তুলির ৷ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সৃষ্টি আমিষ খেতেন ৷ বিবেক বলেন, "পণ্ডিত সৃষ্টিকে ওর খাবারদাবারের অভ্যাস বদলানোর জন্য চাপ দিত ৷ প্রায়শ হেনস্তা করত, জনসমক্ষে অপমান করত ৷"
সংবাদসংস্থা পিটিআই পোওয়াই পুলিশ স্টেশনের উক্তি উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, আদিত্য পণ্ডিত গাড়িতে দিল্লি যাচ্ছিল ৷ গাড়ি চালানোর সময় সৃষ্টি তাঁকে ফোন করে জানান, তিনি নিজের জীবন শেষ করে দেবেন ৷ পুলিশ আধিকারিক জানান, এরপর আদিত্য পণ্ডিত দ্রুত মুম্বইয়ে ফিরে আসে ৷ সে সৃষ্টির ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ৷ এরপর দরজা খুলে দেখা যায় সৃষ্টি অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৷ আদিত্য তাঁকে মুম্বইয়ের সেভেন হিলস হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷ সেখানে চিকিৎসকরা সৃষ্টিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ৷
এই ঘটনার পর তুলির কাকা পুলিশের কাছে আদিত্য পণ্ডিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান ৷ অভিযোগ, আদিত্য প্রায়ই সৃষ্টিকে হেনস্তা করত ৷ প্রকাশ্যে জনসমক্ষে তাঁকে অপমান করত ৷ তাঁর খাদ্যাভ্যাস পাল্টানোর জন্য চাপ দিত, জানিয়েছে পুলিশ আধিকারিক ৷
এরপর কাকার অভিযোগের ভিত্তিতে আদিত্যকে গ্রেফতার করে পোওয়াই থানা ৷ তাকে 4 দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ ৷ তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার 108 নম্বর ধারার আওতায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে ৷ সৃষ্টির ফোনটি বাজেয়াপ্ত করে ফরেনসিক বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হয়েছে ৷