লাহৌল-স্পিতি, 1 অক্টোবর: বিমান দুর্ঘটনার পর 5 দশকেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে ৷ তাও মৃতদের সন্ধানে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছিল ভারতীয় সেনা ৷ ভারতের ইতিহাসে অন্যতম দীর্ঘ সেই তল্লাশি অভিযানে সাফল্য মিলল ৷ বিমান দুর্ঘটনার 56 বছর পর বরফের স্তূপ থেকে উদ্ধার হল 4 জন সেনা জওয়ানের মৃতদেহ ৷
সেনা সূত্রে খবর, হিমাচল প্রদেশের লাহুল জেলায় রোহতাং পাসের কাছে এই সেনা জওয়ানদের দেহ পাওয়া গিয়েছে ৷ অভিযান চালিয়েছে, ভারতী সেনার ডোগরা স্কাউট এবং তিরঙ্গা মাউন্টেন রেসকিউ-এর যৌথ দল ৷
ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান দুর্ঘটনা
1968 সালের 7 ফেব্রুয়ারি চণ্ডীগড় থেকে লেহ-তে যাচ্ছিল ভারতীয় বায়ুসেনার AN-12 বিমান ৷ তাতে 102 জন সেনা জওয়ান ছিলেন ৷ চণ্ডীগড় থেকে উড়ানের কিছুক্ষণ পর বিমানটির সঙ্গে যোগাযাগ করা যাচ্ছিল না ৷ পরে জানা যায় প্রতিকূল আবহাওয়ায় বিমানটি রোহতাং পাসের কাছে ভেঙে পড়েছে ৷ বরফের স্তূপের মধ্যেই চাপা পড়েছিল দেহগুলি ৷
লাহৌল-স্পিতির এসপি মায়াঙ্ক চৌধরী
সোমবার বিকেলে লাহৌল-স্পিতির এসপি মায়াঙ্ক চৌধরী 4 সেনা জওয়ানের দেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ৷ তিনি সংবাদসংস্থা এএনআই-কে জানান, সেনার একটি পর্বতারোহী দল স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্য়মে এই খবর দিয়েছে ৷ এই দলটি লাহুল-স্পীতির বাটালের কাছে চন্দ্রভাগা-13 পর্বতশৃঙ্গে (সিবি-13) আরোহণ করছিল ৷ পুলিশ আধিকারিক বলেন, "স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, 4টি দেহ পাওয়া গিয়েছে ৷ 56 বছর আগে 1968 সালে ভারতীয় বায়ুসেনার এএন-12 বিমানটি চন্দ্রভাগা-13 শৃঙ্গের ঢাকা গ্লেসিয়ারের কাছে ভেঙে পড়ে ৷ অতীতেও এই দুর্ঘটনায় মৃতদের দেহ উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়েছে ৷ এখনও পর্যন্ত 5 জনের দেহ মিলেছে ৷"
তিনি আরও বলেন, "সেপ্টেম্বরে আরেকটি দল দেহ উদ্ধারে অভিযান চালায় ৷ তারা এই চারটি দেহাবশেষ উদ্ধার করে ৷ দেহগুলি ভারতীয় বায়ুসেনার এন-12 বিমান দুর্ঘটনার ৷ দেহগুলি পচে গিয়েছে ৷" মৃতদের পরিচয় সম্পর্কে পুলিশের উচ্চাধিকারিক বলেন, "সাহরানপুরের বাসিন্দা মালখান সিং, সিপাহি উত্তরাখণ্ডের গাঢ়ওয়ালের চামোলি তেহসিলের বাসিন্দা নারায়ণ সিং, হরিয়ানার রেওয়াড়ির সিপাহী মুন্সি রাম এবং কেরলের থমাস চেরিয়ান ৷" মৃতদের আত্মীয়দের দেওয়া বিবরণ অনুযায়ী দেহগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে ৷
কী বলছে দুর্ঘটনায় মৃতের পরিবার ?
থমাস চেরিয়ানের পরিবারে মা ও ভাই রয়েছেন ৷ তাঁদের ছেলের দেহ উদ্ধারের খবর দেওয়া হয়েছে ৷ বিমান দুর্ঘটনার সময় থমাসের বয়স ছিল মাত্র 22 বছর ৷ সোমবারই আরামুলা থানার পুলিশ তাঁদের খবর দিয়েছে ৷ থমাস ভার্গিস এই খবরে একদিকে যেমন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন ৷ অন্য়দিকে ভাইকে হারানোর শোকও ৷ তিনি বলেন, "এটা যন্ত্রণাদায়ক ৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাইয়ের দেহ উদ্ধারে একটা বিষয়ে শান্তি পেয়েছি ৷ ভাইয়ের দেহাবশেষ পরিবারের সমাধিক্ষেত্রে সমাধি দেওয়া হবে ৷"
মালখান সিংকে শনাক্ত করা হয়েছে সরকারি রেকর্ড দেখে ৷ সিপাহি নারায়ণ সিং সেনার মেডিক্যাল বিভাগে কাজ করতেন ৷ তাঁকে সরকারি কাগজপত্রের নিরিখে চিহ্নিত করা হয়েছে ৷ পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, সেনার দলটি দেহগুলি লোসর বেস ক্যাম্পে নিয়ে আসছে ৷ সেখানে ময়নাতদন্তের পর দেহগুলি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে ৷
2003 সালে প্রথম এএন-12 বিমানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায় একটি পর্বতারোহী দল ৷ তখন বায়ুসেনা সরকারিভাবে ঘোষণা করে যে, এএন-12 বিমানটি দুর্ঘটনায় ভেঙে পড়েছিল ৷ অটল বিহারি বাজপেয়ি ইনস্টিটিউট (এবিভিআই) মানালিতে পর্বতাভিযানে গিয়েছিল ৷ দলটির সদস্যরা একটি দেহ উদ্ধার করে ৷ জানা যায়, সেটি সিপাহি বেলি রামের ৷ এরপরই ভারতীয় বায়ুসেনা তল্লাশি চালানোর বিষয়ে উদ্যোগী হয় ৷ ডোগরা স্কাউট উদ্ধার অভিযানে নামে ৷ 2005, 2006, 2013, এবং 2019 সালে অভিযান চালানো হয় ৷
এসপি মায়াঙ্ক চৌধরী বলেন, "2018 সালে এই বিমান দুর্ঘটনায় নিহত এক সেনার দেহ পাওয়া গিয়েছিল ঢাকা হিমবাহের বেস ক্যাম্পে ৷ সেই জায়গাটি 6 হাজার 200 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ৷ পর্বতারোহীর একটি দল চন্দ্রভাগা-13 শৃঙ্গে সাফাই অভিযানে গিয়েছিল ৷ তারাই দেহ দেখতে পায় ৷"