ETV Bharat / bharat

স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাব মেনে নেয়নি কংগ্রেস, কৃষক আন্দোলনের আবহে ফিরে দেখা 10টি সুপারিশ - কৃষক আন্দোলন

The Swaminathan Commission: বারবার আন্দোলনে করছে কৃষক সংগঠনগুলি ৷ তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে কোনও রফাসূত্র মিলছে না ৷ এদিকে কৃষকদের স্বার্থেই তৈরি হয়েছিল স্বামীনাথন কমিশন ৷ কী বলেছিল সেই কমিশন ?

ETV Bharat
কৃষকদের জন্যই তৈরি হয়েছিল স্বামীনাথন কমিশন
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 14, 2024, 3:01 PM IST

নয়াদিল্লি, 14 ফেব্রুয়ারি: ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপির-সহ বেশ কিছু দাবিদাওয়াকে সামনে রেখে আজও হচ্ছে কৃষকদের 'দিল্লি চলো' মহামিছিল ৷ এর আগেও 2020-21 সালে এই এমএসপি-সহ বেশ কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে দীর্ঘ আন্দোলন করেছেন কৃষকরা ৷ এ নিয়ে কোনওভাবেই কৃষকদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে পারছে না কেন্দ্রীয় সরকার ৷ এদিকে কৃষকদের এই সমস্যার সমাধানে প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে কৃষকদের জাতীয় কমিশনের অধীনে তৈরি হয় স্বামীনাথন কমিশন ৷ এই কমিশনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, কৃষি বিজ্ঞানী অধ্যাপক এমএস স্বামীনাথন ৷ তিনি দেশের সবুজ বিপ্লবের স্থপতি ৷

সেই সময় এমএসপি নিয়ে সরকারকে কী প্রস্তাব দিয়েছিল এই কমিশন ? রাজ্যসভায় কংগ্রেস সরকারের কাছে এই প্রশ্ন তুলেছিল বিজেপি ৷ 2010 সালের 16 এপ্রিল এর উত্তর দিয়েছিল দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার ৷ তখনও প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং ৷ উত্তরে কংগ্রেস সরকারের কৃষি মন্ত্রক জানায়, কোনও ফসলের ওজনের উপর নির্ভর করে উৎপাদনের গড় খরচ নির্ধারণ করা হয় ৷ সেই খরচের থেকে অন্ততপক্ষে 50 শতাংশ বেশি হবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি ৷ তবে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার নানা কারণে এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারেনি বলে জানিয়েছিল ৷

স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাবগুলি কী ছিল? রইল তার 10টি পয়েন্ট:

  1. জমি সংস্কারকে গুরুত্ব দিয়েছিল কমিশন ৷ ফসল উৎপাদন এবং গবাদি পশুপালনের ক্ষেত্রে জমি ব্যবহারের প্রাথমিক ইস্যুগুলির সমাধানে জমি সংস্কার অবশ্য প্রয়োজন বলেও তারা মনে করেছিল ৷
  2. কৃষির সঙ্গে জড়িত সেচ, নিকাশি ব্যবস্থা, জমির উন্নয়ন, জল সংরক্ষণ, গবেষণায় উন্নতি এবং সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমজনতার বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার উপর জোর দেওয়া হয়েছিল ৷
  3. চাষবাসের সঙ্গে সংরক্ষণ কীভাবে জড়িত, তা কৃষকদের জানানোর পক্ষে ছিল কমিশন ৷ সংরক্ষণ কার্যকর করার কথাও বলেছিল ৷ এই পদক্ষেপ কৃষি পরিবারগুলিকে মাটির স্বাস্থ্য উন্নতিতে এবং সংরক্ষণে সাহায্য করবে বলে মনে হয়েছিল কমিশনের ৷
  4. সরকারি সাহায্যে কৃষি ঋণের উপর 4 শতাংশ সরল সুদ কমানো হোক ৷
  5. ফসল বিমা সারা দেশে কার্যকর হোক এবং তা সব ফসলের জন্য হোক ৷ পাশাপাশি এর কিস্তির পরিমাণ কমানো হোক ৷ গ্রামীণ বিমা কী, তা নিয়ে আরও বেশি মানুষকে জানানো দরকার ৷ কৃষকদের কাছে এই বিষয়ে জানাতে তৈরি হোক রুরাল ইনস্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ৷
  6. কৃষকদের জন্য সর্বজনীন বিতরণ ব্যবস্থা কার্যকর করুক সরকার ৷ জীবনচক্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুষ্টি সহায়ক প্রকল্প রয়েছে ৷ সেই প্রকল্পের সুবিধেগুলি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে তাকে ঢেলে সাজানো হোক ৷ আর এই কাজে অংশ নিক পঞ্চায়েত ও স্থানীয় প্রশাসন ৷
  7. গ্রামাঞ্চলে শস্য সঞ্চয় এবং সর্বত্র জল পাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল ৷ এই নীতির উপরে ভিত্তি করেই তৈরি হয় মহিলাদের স্বনির্ভর দল বা সেল্ফ হেল্প গ্রুপ ৷ মহিলাদের এই স্বনির্ভর দলগুলিই সবার জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা এবং জল সংরক্ষণও করবে ৷ এই বিষয়টি প্রচার করুক সরকার ৷
  8. রাজ্যস্তরেই কৃষক কমিশন তৈরি করতে হবে ৷ এই কমিশনগুলির কৃষক প্রতিনিধিরা সরকারের কাছে তাঁদের সমস্যার কথা জানাবেন, যাতে কৃষকদের সমস্যার দ্রুত সমাধান হয় ৷
  9. যে যে জায়গাগুলিতে কৃষকদের অবস্থা খুবই খারাপ, সেখানে জ্ঞান চৌপল বা ভিলেজ নলেজ সেন্টার তৈরি হোক ৷ এখান থেকে কৃষকরা চাষ এবং চাষ ছাড়া অন্য গ্রামীণ জীবিকা সম্পর্কিত সমস্যাগুলির সমাধান পাবেন ৷
  10. কোনও ফসলের ওজন অনুযায়ী গড় উৎপাদন মূল্যের চেয়ে অন্ততপক্ষে 50 শতাংশ বেশি হবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি ৷

আরও পড়ুন:

  1. ‘মহান কৃষক নেতা’কে ভারতরত্ন দিলেও কৃষকদের উপর অবিচার মোদি সরকারের, অভিযোগ কংগ্রেসের
  2. আজ ফের 'দিল্লি চলো' মহামিছিল, কৃষকদের রুখতে প্রশাসনের কড়া ব্যবস্থা
  3. 'হিংসা সমাধান নয়', বিক্ষোভরত কৃষকদের আলোচনায় বসার আহ্বান অনুরাগ ঠাকুরের

নয়াদিল্লি, 14 ফেব্রুয়ারি: ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপির-সহ বেশ কিছু দাবিদাওয়াকে সামনে রেখে আজও হচ্ছে কৃষকদের 'দিল্লি চলো' মহামিছিল ৷ এর আগেও 2020-21 সালে এই এমএসপি-সহ বেশ কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে দীর্ঘ আন্দোলন করেছেন কৃষকরা ৷ এ নিয়ে কোনওভাবেই কৃষকদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে পারছে না কেন্দ্রীয় সরকার ৷ এদিকে কৃষকদের এই সমস্যার সমাধানে প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে কৃষকদের জাতীয় কমিশনের অধীনে তৈরি হয় স্বামীনাথন কমিশন ৷ এই কমিশনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, কৃষি বিজ্ঞানী অধ্যাপক এমএস স্বামীনাথন ৷ তিনি দেশের সবুজ বিপ্লবের স্থপতি ৷

সেই সময় এমএসপি নিয়ে সরকারকে কী প্রস্তাব দিয়েছিল এই কমিশন ? রাজ্যসভায় কংগ্রেস সরকারের কাছে এই প্রশ্ন তুলেছিল বিজেপি ৷ 2010 সালের 16 এপ্রিল এর উত্তর দিয়েছিল দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার ৷ তখনও প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং ৷ উত্তরে কংগ্রেস সরকারের কৃষি মন্ত্রক জানায়, কোনও ফসলের ওজনের উপর নির্ভর করে উৎপাদনের গড় খরচ নির্ধারণ করা হয় ৷ সেই খরচের থেকে অন্ততপক্ষে 50 শতাংশ বেশি হবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি ৷ তবে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার নানা কারণে এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারেনি বলে জানিয়েছিল ৷

স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাবগুলি কী ছিল? রইল তার 10টি পয়েন্ট:

  1. জমি সংস্কারকে গুরুত্ব দিয়েছিল কমিশন ৷ ফসল উৎপাদন এবং গবাদি পশুপালনের ক্ষেত্রে জমি ব্যবহারের প্রাথমিক ইস্যুগুলির সমাধানে জমি সংস্কার অবশ্য প্রয়োজন বলেও তারা মনে করেছিল ৷
  2. কৃষির সঙ্গে জড়িত সেচ, নিকাশি ব্যবস্থা, জমির উন্নয়ন, জল সংরক্ষণ, গবেষণায় উন্নতি এবং সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমজনতার বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার উপর জোর দেওয়া হয়েছিল ৷
  3. চাষবাসের সঙ্গে সংরক্ষণ কীভাবে জড়িত, তা কৃষকদের জানানোর পক্ষে ছিল কমিশন ৷ সংরক্ষণ কার্যকর করার কথাও বলেছিল ৷ এই পদক্ষেপ কৃষি পরিবারগুলিকে মাটির স্বাস্থ্য উন্নতিতে এবং সংরক্ষণে সাহায্য করবে বলে মনে হয়েছিল কমিশনের ৷
  4. সরকারি সাহায্যে কৃষি ঋণের উপর 4 শতাংশ সরল সুদ কমানো হোক ৷
  5. ফসল বিমা সারা দেশে কার্যকর হোক এবং তা সব ফসলের জন্য হোক ৷ পাশাপাশি এর কিস্তির পরিমাণ কমানো হোক ৷ গ্রামীণ বিমা কী, তা নিয়ে আরও বেশি মানুষকে জানানো দরকার ৷ কৃষকদের কাছে এই বিষয়ে জানাতে তৈরি হোক রুরাল ইনস্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ৷
  6. কৃষকদের জন্য সর্বজনীন বিতরণ ব্যবস্থা কার্যকর করুক সরকার ৷ জীবনচক্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুষ্টি সহায়ক প্রকল্প রয়েছে ৷ সেই প্রকল্পের সুবিধেগুলি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে তাকে ঢেলে সাজানো হোক ৷ আর এই কাজে অংশ নিক পঞ্চায়েত ও স্থানীয় প্রশাসন ৷
  7. গ্রামাঞ্চলে শস্য সঞ্চয় এবং সর্বত্র জল পাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল ৷ এই নীতির উপরে ভিত্তি করেই তৈরি হয় মহিলাদের স্বনির্ভর দল বা সেল্ফ হেল্প গ্রুপ ৷ মহিলাদের এই স্বনির্ভর দলগুলিই সবার জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা এবং জল সংরক্ষণও করবে ৷ এই বিষয়টি প্রচার করুক সরকার ৷
  8. রাজ্যস্তরেই কৃষক কমিশন তৈরি করতে হবে ৷ এই কমিশনগুলির কৃষক প্রতিনিধিরা সরকারের কাছে তাঁদের সমস্যার কথা জানাবেন, যাতে কৃষকদের সমস্যার দ্রুত সমাধান হয় ৷
  9. যে যে জায়গাগুলিতে কৃষকদের অবস্থা খুবই খারাপ, সেখানে জ্ঞান চৌপল বা ভিলেজ নলেজ সেন্টার তৈরি হোক ৷ এখান থেকে কৃষকরা চাষ এবং চাষ ছাড়া অন্য গ্রামীণ জীবিকা সম্পর্কিত সমস্যাগুলির সমাধান পাবেন ৷
  10. কোনও ফসলের ওজন অনুযায়ী গড় উৎপাদন মূল্যের চেয়ে অন্ততপক্ষে 50 শতাংশ বেশি হবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি ৷

আরও পড়ুন:

  1. ‘মহান কৃষক নেতা’কে ভারতরত্ন দিলেও কৃষকদের উপর অবিচার মোদি সরকারের, অভিযোগ কংগ্রেসের
  2. আজ ফের 'দিল্লি চলো' মহামিছিল, কৃষকদের রুখতে প্রশাসনের কড়া ব্যবস্থা
  3. 'হিংসা সমাধান নয়', বিক্ষোভরত কৃষকদের আলোচনায় বসার আহ্বান অনুরাগ ঠাকুরের
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.