ETV Bharat / sukhibhava

বিশ্ব ক্যানসার দিবস: ক্যানসার নিয়ে মিথের আড়ালে সত্যের খোঁজ - বিশ্ব ক্যান্সার দিবস

প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি, মানুষকে ক্যানসার সম্পর্কে সচেতন ও শিক্ষিত করতে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালন করা হয় । এখানে আরও প্রয়াস করা হয়েছে, এই প্রাণঘাতী রোগের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করার। সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, ক্যানসার হল এমন একটা রোগ, যেখানে অস্বাভাবিক কোষ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়তে থাকে এবং অন্যান্য টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। রক্ত ও লিম্ফ সিস্টেম, যারা শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করে দেয়, তাদের মাধ্যমে ক্যানসার কোষ শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে ।

বিশ্ব ক্যান্সার দিবস
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস
author img

By

Published : Feb 4, 2021, 3:48 PM IST

ক্যানসার রোগীদের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে, ক্যানসার বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, “বিশ্বজুড়ে ক্যানসারে ২০১৮ সালে ৯.৬ মিলিয়ন মৃত্যু হয়েছে। প্রতি ৬টি মৃত্যুর একটির কারণ হয়েছে ক্যানসার।” সবথেকে পরিচিত যে ক্যানসারগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলি হল:

●ফুসফুস (২.০৯ মিলিয়ন কেস)

●স্তন (২.০৯ মিলিয়ন কেস)

●কোলোরেক্টাল (১.৮০ মিলিয়ন কেস)

●প্রস্টেট (১.২৮ মিলিয়ন কেস)

●ত্বকের ক্যানসার (১.০৪ মিলিয়ন কেস)

●পাকস্থলী (১.০৩ মিলিয়ন কেস)

সবাই জানেন যে ক্যানসার কী, কিন্তু তাঁরা এর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন তথ্য জানেন না । তাই আজ বিশ্ব ক্যানসার দিবসে আমরা এই অসুখ নিয়ে সবথেকে পরিচিত মিথগুলোকে ভেঙে আসল তথ্যগুলো আপনাদের সামনে রাখব ।

1.ক্যানসার ছোঁয়াচে!

বেশিরভাগ ক্যানসারই ছোঁয়াচে নয়, কিন্তু কয়েকটি ক্যানসার তৈরি করে একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়া ব্যাকটিরিয়া বা ভাইরাস । ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইজেএমআর)-এর মতে, “সার্ভাইকাল ক্যানসার (যা হয় হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস থেকে ) এবং লিভার ক্যানসার (যার কারণ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস) ছাড়া কোনও ক্যানসারই ছোঁয়াচে নয় । রক্ত দেওয়া, একই সূঁচে একাধিক ইঞ্জেকশন এবং অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক থেকেই সাধারণত এধরণের ক্যানসার ছড়ায় ।”

2.ক্যানসার সবসময়ই প্রাণঘাতী

না, ক্যানসার সবসময় প্রাণঘাতী নয় । চিকিৎসাবিদ্যা ও প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে, বহু ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে । সুতরাং, ক্যানসার চিকিৎসার পর বাঁচার হার এখন বেশি । কিন্তু এটা জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, যে একজন আক্রান্ত ব্যক্তি কতদিন বাঁচবেন, তা নির্ভর করে কতটা গতিবেগে ক্যানসার শরীরে ছড়াচ্ছে এবং কতটা ছড়িয়ে পড়েছে, সফলভাবে চিকিৎসা করা যাচ্ছে কি না, ওই ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থা কেমন, তার উপর ।

3.ঘামরোধক এবং ডিওড্রেন্ট থেকে স্তনের ক্যানসার ছড়ায়

ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, কোনও গবেষণা থেকেই এখনও এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যে ঘামরোধক বা ডিওড্রেন্টে থাকা রাসায়নিক থেকে স্তনের টিস্যু প্রভাবিত হয় ।

4.একমাত্র ধূমপায়ীদেরই ফুসফুসের ক্যানসার হতে পারে

ধূমপান নিশ্চিতভাবেই মানুষের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়, কিন্তু ধূমপায়ী নন এমন ব্যক্তিরও ঝুঁকি থাকতে পারে। আইজেএমআর বলছে, অ্যাসবেস্টস, রেডন, ইউরেনিয়াম, আর্সেনিকের সংস্পর্শে দীর্ঘদিন থাকলে, জিনগতভাবে, পরোক্ষ ধূমপানের মাধ্যমে এবং কোনও অসুখে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সেখান থেকেও ফুসফুসের ক্যানসার হতে পারে ।

5.সুগার থাকলে কি ক্যানসার আরও খারাপ হতে পারে?

না । ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট বলছে, যদিও গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে ক্যানসার কোষ বেশি পরিমাণে শর্করা শোষণ করে, কিন্তু সুগার থাকলে ক্যানসার আরও গুরুতর হবে, এমন প্রমাণ নেই। আপনি চিনি খাওয়া বন্ধ করলেই যে ক্যানসার কমে যাবে অদৃশ্য হয়ে যাবে, এমনটাও নয় । কিন্তু হাই-সুগার ডায়েট থেকে ওজন বাড়তে পারে, এবং ওবেসিটি নানা ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় ।

6. পুরুষের ব্রেস্ট ক্যানসার হয় না

ভুল । যেহেতু পুরুষের শরীরেও ব্রেস্ট টিস্যু আছে, তাই তাদেরও ব্রেস্ট ক্যানসার হতে পারে । যদিও ছেলেদের মধ্যে এর ঝুঁকি অত্যন্ত কম, কিন্তু নেই এমনটা বলা যায় না ।

7.সদর্থক মনোভাব থাকলে ক্যানসার সারে

যে কোনও ধরনের চিকিৎসার সময় সদর্থক মনোভাব থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু শুধু এতেই ক্যানসার সারে না । যথাযথ ওষুধপত্র ও চিকিৎসা ক্যানসার রোগীদের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ।

8.ক্যানসার চিকিৎসায় নসিয়া, যন্ত্রণা ও অসুস্থতা হয়

আইজেএমআর ব্যাখ্যা দিয়েছে, যে নির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতিতে ব্যক্তিবিশেষে আলাদা প্রতিক্রিয়া হয় । অ্যান্টি-এমেটিক্সে সাম্প্রতিক অগ্রগতির ফলে নসিয়া ও অসুস্থতার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানো সম্ভব হয়েছে । যন্ত্রণা কমানোর ওষুধ ও শরীরচর্চা রোগীর জীবনকে উন্নত করে তোলে ।

সুতরাং, বহু মিথ, এমনকী ট্যাবুও রয়েছে, যা সমাজ থেকে নির্মূল করতে হবে এবং মানুষকে ক্যানসার সম্পর্কে আসল তথ্যগুলো জানতে হবে। মানুষকে ভুল বোঝানো এবং গুজব ছড়িয়ে তাদের আতঙ্কিত করা কোনওমতেই কাম্য নয় । এর ফলে দুশ্চিন্তা ও অপ্রয়োজনীয় ভাবনায় তাদের শরীর আরও খারাপ হতে পারে । তাই আমরা অনুরোধ করি যে সত্যের পাশে দাঁড়ান এবং এই ভয়াবহ রোগের মোকাবিলা করতে এগিয়ে আসুন ।

ক্যানসার রোগীদের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে, ক্যানসার বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, “বিশ্বজুড়ে ক্যানসারে ২০১৮ সালে ৯.৬ মিলিয়ন মৃত্যু হয়েছে। প্রতি ৬টি মৃত্যুর একটির কারণ হয়েছে ক্যানসার।” সবথেকে পরিচিত যে ক্যানসারগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলি হল:

●ফুসফুস (২.০৯ মিলিয়ন কেস)

●স্তন (২.০৯ মিলিয়ন কেস)

●কোলোরেক্টাল (১.৮০ মিলিয়ন কেস)

●প্রস্টেট (১.২৮ মিলিয়ন কেস)

●ত্বকের ক্যানসার (১.০৪ মিলিয়ন কেস)

●পাকস্থলী (১.০৩ মিলিয়ন কেস)

সবাই জানেন যে ক্যানসার কী, কিন্তু তাঁরা এর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন তথ্য জানেন না । তাই আজ বিশ্ব ক্যানসার দিবসে আমরা এই অসুখ নিয়ে সবথেকে পরিচিত মিথগুলোকে ভেঙে আসল তথ্যগুলো আপনাদের সামনে রাখব ।

1.ক্যানসার ছোঁয়াচে!

বেশিরভাগ ক্যানসারই ছোঁয়াচে নয়, কিন্তু কয়েকটি ক্যানসার তৈরি করে একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়া ব্যাকটিরিয়া বা ভাইরাস । ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইজেএমআর)-এর মতে, “সার্ভাইকাল ক্যানসার (যা হয় হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস থেকে ) এবং লিভার ক্যানসার (যার কারণ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস) ছাড়া কোনও ক্যানসারই ছোঁয়াচে নয় । রক্ত দেওয়া, একই সূঁচে একাধিক ইঞ্জেকশন এবং অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক থেকেই সাধারণত এধরণের ক্যানসার ছড়ায় ।”

2.ক্যানসার সবসময়ই প্রাণঘাতী

না, ক্যানসার সবসময় প্রাণঘাতী নয় । চিকিৎসাবিদ্যা ও প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে, বহু ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে । সুতরাং, ক্যানসার চিকিৎসার পর বাঁচার হার এখন বেশি । কিন্তু এটা জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, যে একজন আক্রান্ত ব্যক্তি কতদিন বাঁচবেন, তা নির্ভর করে কতটা গতিবেগে ক্যানসার শরীরে ছড়াচ্ছে এবং কতটা ছড়িয়ে পড়েছে, সফলভাবে চিকিৎসা করা যাচ্ছে কি না, ওই ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থা কেমন, তার উপর ।

3.ঘামরোধক এবং ডিওড্রেন্ট থেকে স্তনের ক্যানসার ছড়ায়

ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, কোনও গবেষণা থেকেই এখনও এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যে ঘামরোধক বা ডিওড্রেন্টে থাকা রাসায়নিক থেকে স্তনের টিস্যু প্রভাবিত হয় ।

4.একমাত্র ধূমপায়ীদেরই ফুসফুসের ক্যানসার হতে পারে

ধূমপান নিশ্চিতভাবেই মানুষের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়, কিন্তু ধূমপায়ী নন এমন ব্যক্তিরও ঝুঁকি থাকতে পারে। আইজেএমআর বলছে, অ্যাসবেস্টস, রেডন, ইউরেনিয়াম, আর্সেনিকের সংস্পর্শে দীর্ঘদিন থাকলে, জিনগতভাবে, পরোক্ষ ধূমপানের মাধ্যমে এবং কোনও অসুখে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সেখান থেকেও ফুসফুসের ক্যানসার হতে পারে ।

5.সুগার থাকলে কি ক্যানসার আরও খারাপ হতে পারে?

না । ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট বলছে, যদিও গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে ক্যানসার কোষ বেশি পরিমাণে শর্করা শোষণ করে, কিন্তু সুগার থাকলে ক্যানসার আরও গুরুতর হবে, এমন প্রমাণ নেই। আপনি চিনি খাওয়া বন্ধ করলেই যে ক্যানসার কমে যাবে অদৃশ্য হয়ে যাবে, এমনটাও নয় । কিন্তু হাই-সুগার ডায়েট থেকে ওজন বাড়তে পারে, এবং ওবেসিটি নানা ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় ।

6. পুরুষের ব্রেস্ট ক্যানসার হয় না

ভুল । যেহেতু পুরুষের শরীরেও ব্রেস্ট টিস্যু আছে, তাই তাদেরও ব্রেস্ট ক্যানসার হতে পারে । যদিও ছেলেদের মধ্যে এর ঝুঁকি অত্যন্ত কম, কিন্তু নেই এমনটা বলা যায় না ।

7.সদর্থক মনোভাব থাকলে ক্যানসার সারে

যে কোনও ধরনের চিকিৎসার সময় সদর্থক মনোভাব থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু শুধু এতেই ক্যানসার সারে না । যথাযথ ওষুধপত্র ও চিকিৎসা ক্যানসার রোগীদের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ।

8.ক্যানসার চিকিৎসায় নসিয়া, যন্ত্রণা ও অসুস্থতা হয়

আইজেএমআর ব্যাখ্যা দিয়েছে, যে নির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতিতে ব্যক্তিবিশেষে আলাদা প্রতিক্রিয়া হয় । অ্যান্টি-এমেটিক্সে সাম্প্রতিক অগ্রগতির ফলে নসিয়া ও অসুস্থতার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানো সম্ভব হয়েছে । যন্ত্রণা কমানোর ওষুধ ও শরীরচর্চা রোগীর জীবনকে উন্নত করে তোলে ।

সুতরাং, বহু মিথ, এমনকী ট্যাবুও রয়েছে, যা সমাজ থেকে নির্মূল করতে হবে এবং মানুষকে ক্যানসার সম্পর্কে আসল তথ্যগুলো জানতে হবে। মানুষকে ভুল বোঝানো এবং গুজব ছড়িয়ে তাদের আতঙ্কিত করা কোনওমতেই কাম্য নয় । এর ফলে দুশ্চিন্তা ও অপ্রয়োজনীয় ভাবনায় তাদের শরীর আরও খারাপ হতে পারে । তাই আমরা অনুরোধ করি যে সত্যের পাশে দাঁড়ান এবং এই ভয়াবহ রোগের মোকাবিলা করতে এগিয়ে আসুন ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.