হায়দরাবাদ : জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা অনুসারে, 2015-16 সালের তুলনায় দেশের ফার্টিলিটি হার অনেকটাই কমে গিয়েছে ৷ 2015-16 সালে ফার্টিলিটি হার ছিল 2.2 যা 2020-21 সালে 2.0 তে পৌঁছেছে (Infertility Rate in India) ৷ এর অর্থ হল মহিলাদের প্রজননকালে নবজাতকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য়ভাবে কমেছে ৷ পিতামাতার প্রতিস্থাপনের জন্য যে পরিমান শিশু প্রয়োজন তার অনুপাত, মৃত্যু, বিষম লিঙ্গ অনুপাত(skewed sex ratio), সদ্যজাতের মৃত্যু প্রভৃতি কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে দেশের মোট উর্বরতার হার উর্বরতার প্রতিস্থাপন স্তরের নীচে পৌঁছে গিয়েছে ৷
জনসংখ্যা প্রতিস্থাপনের হার, যা একটি সমাজের জনসংখ্যার আকার বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তা বজায় রাখতে হলে ফার্টিলিটির হার অন্ততপক্ষে প্রতি মহিলার জন্য 2.1 হতেই হবে। এই সংখ্যার নীচে নেমে যাওয়া মানে দেশের সামগ্রিক জনসংখ্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে পারে । বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, 2019 সালে বিশ্বব্যাপী ফার্টিলিটির হার ছিল 2.4 । কিছুটা অতীতে গেলেই বোঝা যাবে ফার্টিলিটি হার কী পরিমানে কমেছে, 1950 সালে বিশ্বব্যাপী ফার্টিলিটির হার ছিল 4.7 ৷
এইমস-এর গাইনো বিভাগের অধ্যাপক ডঃ নীতা সিং জানান যে শহুরে এলাকায় ফার্টিলিটির হার 1.6-এ পৌঁছেছে যা একটি বড় উদ্বেগের বিষয় ৷ তবে, গ্রামীণ এলাকায় ফার্টিলিটির হার 2.0 এবং যার জেরে সামগ্রিক ফার্টিলিটির হার 2.0 । তাঁর মতে একটি উন্নয়নশীল দেশে নবজাতক এবং মৃত্যুর অনুপাতে ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে ফার্টিলিটির হার 2.3 হওয়া একান্ত প্রয়োজন ৷
এর কারণ ব্যাখ্য়া করতে গিয়ে শহুরে এলাকায় দেরিতে বিয়ের প্রবণতাকে একটি প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, "একজন মহিলার সাধারণত 27-28 বছরে বিয়ে হয়, তারপর জীবনে স্থির হওয়ার জন্য তাঁর সময় লাগে এবং তারপরে সন্তানের জন্য চেষ্টা করার এক বা দুই বছর পরে যদি সে গর্ভধারণ না করতে পারে তবেই তারা ডাক্তারের কাছে যান ৷" ডঃ নীতার মতে একজন মহিলার ফার্টিলিটির শিখর পর্যায় হল 20-25 বছর বয়স এরপর 30 বছর বয়স অবধি তা মালভূমির মত অবস্থায় থাকে বলা যায়, কিন্তু 35 বছরের পর থেকে তা নিন্মগামী হতে শুরু করে ৷ হু-এর মতে বন্ধ্যাত্ব হল "জননতন্ত্রের এমন একটি রোগ যেক্ষেত্রে 12 মাস বা তার বেশি নিয়মিত যৌন মিলনের পরেও গর্ভাবস্থা অর্জিত হয় না ৷"
কিন্তু বন্ধ্যাত্বের দুটি প্রকার রয়েছে প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি ৷ যখন কোন দম্পতি একবার সন্তান গ্রহণের পর পর গর্ভধারণে ব্যর্থ হন তাকে বলে সেকেন্ডারি পর্যায় ৷ আর যে সমস্ত প্রথম পর্যায়েই সন্তান গ্রহণে ব্যার্থ হন তাকে বলে প্রাইমারি পর্যায় ৷ সাধারণত বেশিরভাগ দম্পতিরা এই সমস্য়ায় ভোগেন ৷ শুধু মহিলারাই নয় পুরুষের ফার্টিলিটি হারও 40 বছরের পর থেকে ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে শুরু করে ৷
বেশিরভাগ দম্পতিই যখন ডাক্তারের কাছে যান তখন তাদের প্রজনন হার কমতে শুরু করেছে । তিনি বলেন,"গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের তুলনায় ভারতীয় মহিলাদের ডিম্বাশয়ের বার্ধক্য প্রায় 5 বছর এগিয়ে যা একটি বড় উদ্বেগের বিষয় । এর মানে হল যে যদি একজন মহিলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 40 বছর বয়সে একটি সন্তানের জন্ম দিতে পারেন এবং যুক্তরাজ্য তথা ভারতে সেই বয়স হবে মাত্র ৩৫ বছর । তবে জনসংখ্যাগত অবস্থা বা জলবায়ু বা জাতি এর জন্য দায়ী কি না, তা এখনও জানা যায়নি ৷"
পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ড. সিং বলেন, "ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, অনিয়মিত কাজের ধরন এবং অন্যান্য কারণেও এই রোগ দ্রুতগতিতে বাড়ছে । প্রতি তিন জনের দু'জন পুরুষ ভারতে অনুর্বর বা উপ-উর্বর । আমরা খুব কমই কোনও পুরুষের মধ্যে 20 মিলিয়ন শুক্রাণুর সংখ্যা খুঁজে পাই, যা আগে প্রায় 50 থেকে 100 মিলিয়ন ছিল । যদি আমরা একজন পুরুষের মধ্যে 15 মিলিয়ন শুক্রাণুর সংখ্যাও খুঁজে পাই, তাহলেও তিনি সুস্থ আছেন বলে বিবেচনা করতে পারি আমরা ৷ শুক্রাণু মারা যাওয়া পুরুষ বন্ধ্যাত্বের প্রধান কারণ ৷"
আরও পড়ুন: কিডনির সমস্য়ার ঝুঁকি অনেক বেশি মহিলাদের! দেখুন কী করবেন, কী করবেন না
আইভিএফ এই ক্রমবর্ধমান বন্ধ্যাত্বের সমাধান কি না জানতে চাইলে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি ডিম তৈরি না হয় তবে আইভিএফ কীভাবে কাজ করবে ৷ তবে আইভিএফ বিশেষজ্ঞ ডঃ অর্চনা ধাওয়ান বাজাজ বলছেন যে আইভিএফের জন্য ক্রমবর্ধমান সাফল্যের হার প্রায় 45 শতাংশ। বন্ধ্যাত্বের কারণ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ড. বাজাজ বলেন যে প্রায় 40 শতাংশ ক্ষেত্রে পুরুষ, 40 শতাংশ মহিলা এবং 20 শতাংশ দম্পতি উভয়েই বন্ধ্যাত্বে অবদান রাখে ।