ওমিক্রনের লক্ষণগুলি কী কী ? (What are the symptoms of omicron)
2020 সালে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে করোনা ভাইরাসের প্রথম ও আলফা ভ্যারিয়্যান্টের মধ্যে তিনটি একই লক্ষণ ছিল ৷ সেগুলি হল- কাশি, জ্বর ও গন্ধ না পাওয়া ৷ এছাড়া আরও 20টি লক্ষণ ছিল ৷ এর মধ্যে ছিল ক্লান্তি ভাব আসা, মাথা ধরা, শ্বাসকষ্ট, পেশিতে ব্যথা এবং গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল সমস্যা ৷ তাছাড়া ত্বকে ব়্যাশ বের হওয়া বা জিভে সমস্যার মতো লক্ষণ দেখা গিয়েছে ৷ কিন্তু তা অনেকটাই কম ছিল ৷
যখন ডেল্টা এল, তখন লক্ষণে অনেক পরিবর্তন দেখা গেল ৷ আগে পরিচিত লক্ষণগুলির মধ্যে ছিল শ্বাসকষ্ট, জ্বর, গন্ধ না পাওয়া ৷ তাছাড়া সর্দি, নাক দিয়ে জল পড়া, গলায় ব্যথাও খুবই পরিচিত লক্ষণ হয়ে উঠেছিল ৷ এর সঙ্গে ছিল মাথা ধরা, কাশি ৷ আর এই দু’টি লক্ষণ বেশি দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে যাঁরা করোনার টিকা নিয়েছিলেন ৷
ডেল্টা যে নজির তৈরি করেছে, ওমিক্রন সেই পথে এগোচ্ছে ৷ এর লক্ষণগুলিও পরিচিত৷ ওই অনেকটা জ্বর যেমন হয়, তেমনই ৷ বিশেষ করে যাঁরা করোনার টিকা নিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এমনটাই দেখা যাচ্ছে ৷ এছাড়াও বমি বমি ভাব, পেশিতে ব্যথা, ডায়েরিয়া ও ত্বকে ব়্যাশ বের হচ্ছে অনেকের ৷
ডিসেম্বরে ব্রিটেনে ওমিক্রন ভ্যারিয়্যান্ট ছড়িয়ে পড়েছিল ৷ তার আগে অক্টোবরে অবশ্য ডেল্টারই সংক্রমণ হচ্ছিল ৷ আমরা ডিসেম্বরে যাঁদের কোভিড হয়েছিল, তাঁদের রিপোর্টের সঙ্গে অক্টোবরের রিপোর্ট মিলিয়ে দেখলাম (covid19 study) ৷ তাছাড়া সরকারি তরফে জানানো কিছু রোগীর রিপোর্টও বিশ্লেষণ করা হল ৷ ওই রোগীদের পিসিআর রিপোর্টে হয় ওমিক্রনের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল অথবা সরাসরি ওমিক্রনের বিষয়টি জানানো হয় ৷
আমাদের বিশ্লেষণ বলছে যে, সামগ্রিক লক্ষণের দিক থেকে ডেল্টা ও ওমিক্রনের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই ৷ সবচেয়ে বেশি যে পাঁচটি লক্ষণ দেখা গিয়েছে, তা হল- নাক দিয়ে জল পড়া, মাথা ধরা, ক্লান্তি ভাব, হাঁচি ও গলায় ব্যথা ৷ কিন্তু যখন লক্ষণগুলিকে আরও ব্যাপকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়, তখন অনেক পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় ৷
উদাহরণ হিসেবে অনোসমিয়া বা স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়ার বিষয়টিকে উল্লেখ করা যেতে পারে ৷ যদি লক্ষণের তালিকা তৈরি করা হয় ৷ তাহলে ক্রমপর্যায়ে অনোসমিয়ার স্থান অক্টোবর পর্যন্ত দশমে ছিল ৷ এখন তা 17তম স্থানে পৌঁছে গিয়েছে ৷ এক সময় যা কোভিডের মূল লক্ষণ বলে ধরা হত, তা এখন আক্রান্তদের পাঁচজনের মধ্যে একজনের শরীরে দেখা যাচ্ছে ৷ আমাদের তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্তের এক তৃতীয়াংশের (29 শতাংশ) জ্বর হচ্ছেই না ৷ যা খুবই সাধারণ বিষয় ছিল আগের ক্ষেত্রগুলিতে ৷
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের অর্ধেকের জ্বর, কাশি অথবা স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়ার লক্ষণ দেখাই যাচ্ছে না ৷ ফলে এটা বলা যায় যে সরকারি ভাবে যে পিসিআর পরীক্ষা করা হচ্ছে, তা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে ৷ কারণ, ওই তিনটি লক্ষণ থাকলেই এই পরীক্ষা করতে বলা হচ্ছিল ৷
ওমিক্রন কতটা খারাপ ?
নতুন এই ভ্যারিয়্যান্ট আগের ভ্যারিয়্যান্টগুলির থেকে অনেক বেশি সংক্রামক (what are the new symptoms of omicron) ৷ এর জন্যই ব্রিটেন ও অন্যান্য দেশে সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছে ৷ পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট নয় যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা আগামিদিনে হু হু করে বাড়বে কি না ! এটা মনে রাখতে হবে যে ওমিক্রন ও ডেল্টা অনেকের কাছে ঠান্ডা লাগার মতো হতে পারে ৷ এটা মারণও হতে পারে ৷ আবার দীর্ঘমেয়াদী কিছু লক্ষণ তৈরি হতে পারে যা দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে ৷ বিশেষ করে তাঁদের জন্য, যাঁরা এখনও করোনার টিকা পাননি অথবা যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ কম ৷
এতদিন আমরা দেখেছি যে তরুণদের মধ্যেই সংক্রমণ বেশি হয়েছে ৷ কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সামগ্রিক সংক্রমণ বয়স্কদের মধ্যেই বেশি ৷ 75 বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া খুবই চিন্তার ৷ কিন্তু আমাদের আশা যে ব্রিটেনে যেহেতু বয়স্ক ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকি আছে, এমন ব্যক্তিদের করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে, তাই লক্ষণ কম দেখা যাবে এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনাও কম ঘটবে ৷ ওমিক্রনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল অসুস্থতার দরুণ স্বাস্থ্যকর্মীদের অনুপস্থিতি ৷
ওমিক্রন নাকি সর্দি ?
ব্রিটেনে ভয়ঙ্কর শীত পড়তে শুরু করেছে ৷ তাই অনেকেরই সর্দি হচ্ছে ৷ পাশাপাশি সাধারণ জ্বরও হচ্ছে ৷ জো কোভিড স্টাডি অ্যাপ বলছে যে বর্তমান কোভিড ভ্যারিয়্যান্টের লক্ষণগুলির সঙ্গে এই জ্বরের লক্ষণের মিল রয়েছে ৷ এর অর্থ হল শুধু লক্ষণ থেকে কোনও কিছুই বোঝা সম্ভব নয় ৷ যখন করোনার সংক্রমণ মারাত্মক, তখন গলা ব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া বা অস্বাভাবিক ক্লান্তিকে করোনা হিসেবেই ধরা উচিত, যতক্ষণ না পরীক্ষা করা হচ্ছে ৷
এর কারণ হল জো কোভিড স্টাডি অ্যাপ সমস্ত লক্ষণেরই তথ্য নিয়েছে ৷ সমস্ত কোভিড পরীক্ষার ফল সংগ্রহ করেছে ৷ আমরা খতিয়ে দেখেছি কোভিড হয়নি এমন সংক্রমণের ব্যাপকতাকেও ৷ তিন মাস আগেও করোনা আক্রান্ত 12 জনের মধ্যে অন্তত একজনের শ্বাসকষ্ট সংক্রান্ত নতুন লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল ৷ তবে এখন যাঁদের সর্দি হচ্ছে, তাঁদের 50 শতাংশেরই করোনার সঙ্গে ওমিক্রমনের সংক্রমণ হচ্ছে ৷
সুতরাং আপনি বা আপনার পরিবারের কোনও সদস্য যদি অসুস্থতা বোধ করেন, তাহলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থেকে যায় ৷ আর যদি আপনাদের মধ্যে হাঁচি ও ঠান্ডা লাগার ভাব দেখা যায়, তাহলে সেই সম্ভাবনা আরও বাড়ে ৷ তখন বাড়িতে থাকাই জরুরি ৷ আর দরকার পরীক্ষা করে নেওয়া ৷ মনে রাখবেন ল্যাটারাল ফ্লো পরীক্ষা করানো খুব ভালো ৷ যদি গলা ও নাকের সোয়াব পরীক্ষা করান, তাহলে তা পিসিআর পরীক্ষার তুলনায় সংবেদনশীল হবে ৷ যদি একটি পরীক্ষা করান, তাহলে রোজ করতে থাকুন ৷ কারণ, একদিন নেগেটিভ রিপোর্টে বলা সম্ভব নয় যে সংক্রমণ হয়নি ৷
আর সরকারের নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে ৷ করোনা সংক্রমণ হোক বা না হোক, অসুস্থ হলে বাড়িতে থাকাই ভালো ৷ আর সর্দির মতো কোনও লক্ষণ দেখা দিলে মাস্ক পড়ে থাকতে হবে ৷ বাইরে বের হলে চেষ্টা করতে হবে যাতে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ না ছড়িয়ে যায় (what precautions to take amidst covid spread) ৷
( লন্ডনের কিংস কলেজের টিম স্পেক্টর আলোচনায় উঠে আসা অংশ থেকে লেখা হয়েছে এই প্রতিবেদন )