পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিসিওএস হচ্ছে একটি অতি পরিচিত সমস্যা, পরিণতবয়স্ক মহিলাদের যার মুখোমুখি হতে হয়। এই সমস্যা ঋতুচক্র সম্পর্কিত, যার ফলে অনিয়মিত বা দীর্ঘায়িত ঋতুচক্র, এমনকী শরীরে পুরুষ হরমোনের আধিক্যও ঘটতে পারে। সিস্ট (যা তরল জমে তৈরি হয়) তৈরি হতে পারে জরায়ুতে, যার ফলে ডিম্বাণু তৈরিতে বাধা হতে পারে। এই সমস্ত উপসর্গ থাকলে একজন মহিলার পিসিওএস হয়েছে বলে মনে করা হয়। পিসিওএস হওয়ার সঠিক কারণ এখনও অজানা, কিন্তু দ্রুত রোগনির্ণয়, চিকিৎসা ও সঠিক ওজন বজায় রাখলে সুফল পাওয়া যায়। এই অসুখ থেকে ডায়াবিটিস বা হৃদরোগও বাড়তে পারে।
পিসিওএস-এর উপসর্গ
ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) তালিকা অনুযায়ী, পিসিওএস-এর কয়েকটি লক্ষণ ও উপসর্গ নিচে দেওয়া হল। সংস্থার তরফে বলা হয়েছে যে এই উপসর্গগুলি সাধারণত টিনএজের শেষের দিকে এবং কুড়ির কোঠার পৌঁছনোর পরেই দেখা যায়।
এর মধ্যে রয়েছে:
- অনিয়মিত ঋতুচক্র, অথবা ঋতুচক্র না হওয়া।
- অনিয়মিত ওভুলেশন বা ওভুলেশন না হওয়ার জন্য সন্তানধারণে সমস্যা।
- রোমের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, বিশেষ করে মুখে, বুকে, পিঠে ও নিতম্বে।
- ওজন বেড়ে যাওয়া
- মাথার চুল ক্রমশ পাতলা হওয়া এবং চুল পড়া।
- তৈলাক্ত ত্বক বা ব্রণ।
অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত রক্তপাত, ত্বকে, বিশেষ করে শরীরের ভাঁজে কালো ছোপ, মাথার যন্ত্রণা, কোমরে ব্যাথা এবং বন্ধ্যাত্ব।
আরও পড়ুন : কামশক্তি হ্রাস পাচ্ছে, আপনার কি চিন্তিত হওয়া উচিত?
কী থেকে হয়?
আগেই বলা হয়েছে, পিসিওএস-এর সঠিক কারণ এখনও অজানা। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা একে বংশানুক্রমিক মনে করেন। শরীরে অস্বাভাবিক হরমোনের জন্য, যেমন অ্যান্ড্রোজেন বা পুং হরমোন বা অত্যধিক ইনসুলিনের জন্য এটা হতে পারে। ওজন বেশি থাকলে বা ওবেসিটি হলে এই সমস্যা আরও বাড়ে। পিসিওএস ও অন্যান্য সমস্যা পিসিওএস নির্দিষ্ট আরও কিছু সমস্যার সঙ্গে যুক্ত, যার মধ্যে কয়েকটি
দীর্ঘমেয়াদী:
- টাইপ-টু ডায়াবিটিস বা প্রি ডায়াবিটিস
- জেস্টেশনাল ডায়াবিটিস
- উচ্চ রক্তচাপ
- বন্ধ্যাত্ব
- স্লিপ অ্যাপনিয়া
- দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন
- খাওয়ায় অনীহা
- এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার (জরায়ুর প্রান্ত বরাবর ক্যান্সার)
- অস্বাভাবিক কলেস্টেরল
- ওবেসিটি
আরও পড়ুন : ডিম্বাণু সংরক্ষণ তথা এগ ফ্রিজিং সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার নিরসন
পিসিওএস-এর চিকিৎসা
পিসিওএস সারিয়ে তোলার মতো কোনও চিকিৎসা নেই, কিন্তু বিভিন্নভাবে উপসর্গগুলোকে সামাল দেওয়া যেতে পারে। চিকিৎসক প্রথমেই আপনার জীবনযাত্রা বদলের পরামর্শ দেবেন। এর মধ্যে আপনার খাওয়াদাওয়া অভ্যাস বদল থেকে রুটিনে ব্যায়াম যোগ করা – সবই থাকবে। স্বাস্থ্যকর ও সুষম আহার করতেই হবে। অতিরিক্ত চিনি বা ফ্যাটসর্বস্ব জাঙ্কফুড এড়িয়ে চলুন এবং রোজ অন্তত 30-45 মিনিট ব্যায়াম করুন। আপনার যদি ওজন বেশি থাকে, বা ওবেসিটিতে ভোগেন, তাহলে এই নতুন লাইফস্টাইল আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও, বন্ধ্যাত্ব, রোমের অতিরিক্ত বৃদ্ধি এবং অনিয়মিত ঋতুচক্র আটকানোর ওষুধ পাওয়া যায়। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিও হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে পিল, ভ্যাজাইনাল রিং বা প্যাচ। এনএইচএস আরও জানিয়েছে, ‘যদি বন্ধ্যাত্বের ওষুধ কাজ না করে, তাহলে ল্যাপরোস্কোপিক ওভারিয়ান ড্রিলিং (এলওডি)-এর মতো সহজ অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। এর মাধ্যমে তাপ দিয়ে বা লেজার প্রয়োগ করে ডিম্বাশয়ের সেইসব টিস্যুগুলোকে নষ্ট করে দেওয়া হয়, যারা টেস্টোস্টেরনের মতো অ্যান্ড্রোজেন তৈরি করছে। চিকিৎসার মাধ্যমে পিসিওএস আক্রান্ত বেশিরভাগ মহিলাই সন্তানধারণে সক্ষম হতে পারেন।’
সুতরাং, যদি আপনি উপরোক্ত উপসর্গগুলো দেখতে পান, বিশেষ করে যদি অনিয়মিত ঋতুচক্র থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শারীরিক পরীক্ষা, পেলভিক পরীক্ষা, পেলভিক আলট্রাসাউন্ড এবং রক্তপরীক্ষা – নানাভাবে পিসিওএস নির্ণয় করা যেতে পারে। চিকিৎসকই আপনাকে পরামর্শ দেবেন, যাতে উপসর্গগুলি সামাল দিয়ে ভবিষ্যতে আরও জটিলতা এড়ানো যায়।