কোভিড-১৯ মহামারি বহু চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে, বিশেষ করে দীর্ঘ স্ক্রিন টাইমের জন্য আমাদের দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া । গত ছ’মাস ধরে, সারাদিন আমরা টিভি থেকে মোবাইল, মোবাইল থেকে ল্যাপটপে ঘুরে চলেছি । এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে অনলাইন ক্লাস আর বাচ্চাদের চোখের নানা ধরণের সমস্যা দেখা যাচ্ছে ।
সঠিক স্ক্রিন টাইম কোনটাকে বলা হয়
হায়দরাবাদের এলভি প্রসাদ আই ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক, MBBS DNB (অপথ্যালমোলজি) মঞ্জু ভাটে বলেন, “এটা নির্ভর করছে বাচ্চার বয়সের উপর, এবং তাদের মায়োপিয়ার মতো সমস্যা আছে কি না, তার উপরে । কোভিড 19 মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অনলাইন ক্লাস করাতে হচ্ছে । এলভি প্রসাদ আই ইনস্টিটিউটে অনলাইন ক্লাসের যে গাইডলাইন সুপারিশ করা হয়, তা হল:
- 4 থেকে 6 বছরের বাচ্চাদের জন্য 90 মিনিট, যাতে অন্তত একটা ব্রেক থাকবে ।
- 7 থেকে 12 বছরের জন্য সর্বাধিক 3-4 ঘণ্টা, যার মধ্যে দু-তিনটে বিরতি
থাকবে।
- 12 থেকে 16 বছরের জন্য 6 থেকে 8 ঘণ্টা, মাঝখানে 5-6টা ব্রেক থাকবে। এরমধ্যে একটা ব্রেক এক ঘণ্টা বা তার বেশি হবে।
এছাড়াও বাচ্চা স্ক্রিন থেকে অন্তত একহাত দূরে বসবে, এবং ঘরে যথেষ্ট আলো থাকতে হবে ।
কিন্তু স্ক্রিন টাইম বেঁধে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কেন?
ডক্টর মঞ্জু জানালেন যে এর ফলে:
- বাচ্চাদের মধ্যে দৃষ্টিক্ষীণতা বা মায়োপিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে
- মায়োপিয়া বৃদ্ধি পেতে পারে (চশমার পাওয়ার দ্রুত বেড়ে যাওয়া)
- অবসাদ ও উদ্বেগ
- আচরণগত সমস্যা
- সামাজিক সক্ষমতা হ্রাস
- ঘুমের অসুবিধা
ডক্টর মঞ্জুর কয়েকটি টিপস :
1. যে বাচ্চাদের চশমা পরতে বলা হয়েছে, তারা যেন নিয়মিত তা পরে ।
2. বাবা-মা ও শিক্ষকদের উচিত বার বার বিরতি নেওয়া। আমরা 20-20-20 পদ্ধতির সুপারিশ করি ৷ অর্থাৎ 20 মিনিট পর 20 সেকেন্ডের ব্রেক নিয়ে 20 ফুট দূরের কোনও জিনিসের দিকে তাকিয়ে থাকা ।
3. প্রয়োজন ছাড়া বার বার মোবাইল ব্যবহার না করে বাবা-মারা বাচ্চাদের সামনে রোল মডেল হতে পারেন ।
4. তাঁরা কোনও বোর্ড গেম বা বাড়িতে অন্যান্য কাজের মধ্যে সন্তানকে ব্যস্ত রাখতে পারেন ।
5. বর্তমানে স্কুল বা শিক্ষার প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য কারণে স্ক্রিনটাইম সীমিত করা যেতে পারে ।
6. এছাড়াও উজ্জ্বলতা নিয়ন্ত্রণ করতে স্ক্রিন প্রোটেক্টর ব্যবহার করা যেতে পারে ।
7. যদি সম্ভব হয়, তাহলে দুটো ক্লাসের ফাঁকে ব্যায়াম বা নড়াচড়া করা ভালো ।
8. নিশ্চিত করুন যাতে বাচ্চা প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার খায় ।
বাবা-মা আরও কঠোর হয়ে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে সন্তান যেন সবসময় মোবাইল ফোনো মগ্ন হয়ে না থাকে । অন্যান্য কাজকর্মে তাদের উৎসাহ দিন এবং বাড়ির কাজেও তাদের যুক্ত করুন । এই সমস্ত পরামর্শ এবং সঠিক রুটিনই চোখের ভালো থাকা নিশ্চিত করবে ।