হায়দরাবাদ, 17 মার্চ : অনেকেই একলা ঘরে আলো বন্ধ করে ঘুমোতে চান না ৷ আবার অনেকের অভ্যাস, হালকা আলো জ্বেলে ঘুমোনোর ৷ কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাসগুলি শরীরের ক্ষেত্রে বিপদ ডেকে আনতে পারে ৷ গবেষণা বলছে, দিনের পর দিন ঘরে আলো জ্বেলে ঘুমোলে শরীরে একাধিক প্রভাব পড়ে ৷ বেড়ে যায় স্থুলতা, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৷ ঘরের মাঝারি মানের আলোও আপনার কার্ডিওভাসকুলার ফাংশানের বড় ক্ষতি করতে পারে ৷ এবং পরের দিন সকালে আপনার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সও বাড়িয়ে দেয় ৷ এমনটাই বলছে সাম্প্রতিক গবেষণা ৷
এই গবেষণার প্রধান লেখক তথা নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফেইনবার্গ স্কুল অফ মেডিসিনের স্লিপ মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডঃ ফিলিস জি বলেন, "গবেষণার ফলাফলে দেখা গিয়েছে, ঘুমের সময় মাঝারি আলো জ্বালিয়ে রাখা শুধুমাত্র একরাতেই গ্লুকোজ এবং কার্ডিওভাসকুলার রেগুলেশনকে এতখানি ব্যাহত করে যে তা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং বিপাকীয় সিন্ড্রোমের ঝুঁকি অনেকখানি বাড়িয়ে দেয় ৷ তাই ঘুমোনোর আগে আলোর পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া বা আলো নিভিয়ে দেওয়া একান্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷"
ইতিমধ্যেই গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, দিনের আলো সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এবং তার জেরে হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয় ৷ জি বলেন, "আমাদের গবেষণা দেখায় রাতের আলোর সংস্পর্শে এলেও একই ঘটনা ঘটে ৷(Heart rate increases in a lit room)" এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস (পিএনএএস) জার্নালে।
আলোকিত ঘরে শরীর ঠিকমত বিশ্রাম নিতে পারে না :
নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং গবেষণার অন্যতম লেখক ড্যানিয়েলা গ্রিমাল্ডি বলেন, "একটি মাঝারি ঘর আলোকিত ঘরে ঘুমােলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় ৷ ফলে ঘুমিয়ে থাকলেও স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র সক্রিয় থাকে ৷ এটি অত্যন্ত খারাপ ৷ কারণ সাধারণ কার্ডিওভাসকুলার প্যারামিটার অনুযায়ী আপনার হৃদস্পন্দন রাতে কম এবং দিনে বেশি হয় ৷"
দিনে এবং রাতে আমাদের শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপগুলি নিয়ন্ত্রণের জন্য সিমপ্য়াথেটিক এবং প্যারাসিমপ্য়াথেটিক এই দু'ধরনের স্নায়ুতন্ত্র রয়েছে ৷ দিনের দায়িত্ব থাকে সিমপ্য়াথেটিক স্নায়ুতন্ত্রের উপর আর রাতের দায়িত্ব থাকে প্য়ারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রের উপর ৷ যা শরীরের রেস্টোরেশনের দায়িত্ব পালন করে ৷
আলোকিত ঘরে ঘুমোনো কীভাবে ডায়াবেটিস এবং স্থুলতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় :
গবেষকরা দেখেছেন, আলোকিত ঘরে ঘুমোনোর ফলে একাধিক ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের ঘটনা ঘটেছে ৷ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হল সেই পরিস্থিতি পেশি, চর্বি এবং লিভারের কোষগুলি ইনসুলিনের প্রতি সঠিকভাবে সাড়া দেয় না এবং শক্তি সংগ্রহের জন্য রক্ত থেকে গ্লুকোজকে ব্যবহার করতে পারে না ৷ ফলত আপনার অগ্ন্যাশয় আরও বেশি গ্লুকোজ তৈরি করতে শুরু করে যা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় ৷
শুধু তাই নয় জি জানিয়েছেন, আগেই দেখা গিয়েছে যাঁরা সাধারণত আলোকিত ঘরে ঘুমান তাঁদের ক্ষেত্রে স্থুলতার সমস্যাও অনেক বেড়ে গিয়েছে ৷
আরও পড়ুন : রোগা হওয়া কি আদৌ কমায় বন্ধাত্ব্যের সমস্যা ?
রাতে ভাল ঘুমের জন্য জি-এর কিছু পরামর্শ :
- রাতে শোবার ঘরে আলো জ্বেলে রাখবেন না, একান্ত দরকার হলে মেঝের কাছাকাছি একটি 'ডিম লাইট' জ্বেলে রাখতে পারেন ৷
- রাতে যদি একান্ত আলো জ্বালিয়ে রাখতেই হয় তাহলে রঙের বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷ সাদা বা নীল আলো ব্যবহার করবেন না প্রয়োজনে লাল বা কমলা আলো ব্যবহার করতে পারেন কারণ এটি মস্তিস্কের জন্য কম উদ্দীপক ৷
- ব্লাকআউট শেড বা আইমাস্ক ঘুমের জন্য খুবই ভাল ৷ বিছানা এমনদিকে রাখুন যাতে বাইরের আলো আপনার মুখে না পড়ে ৷