টোরেন্টো, 22 জুলাই: দিনের 24 ঘণ্টার মধ্যে প্রায় 10 ঘণ্টা আমরা অফিসে কাটাই ৷ তাই অফিসে বা কাজের জায়গায় সকলের সঙ্গে কমবেশি সময় সম্পর্ক তৈরি হয় ৷ ব্যক্তিগতভাবে কোনও কোনও সহকর্মীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে ৷ আবার কিছু সহকর্মীর সঙ্গে শুধু কাজের সম্পর্ক থাকে ৷ কিন্তু জানেন কি কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে আপনার বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ আপনার কাজের মান আরও বাড়িয়ে দেয় ৷ সম্প্রতি স্টিফেন ফ্রিডম্যান, যিনি ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অর্ন্তগত সচুলিচ বিজনেস স্কুলের (Schulich School of Business) অর্গানাইজেশলান স্টাডিজের অস্থায়ী অধ্যাপক এক সমীক্ষায় এইরকমই তথ্য প্রকাশ করছেন ৷
ওই প্রফেসর জনান, তিনি কিশোর বয়সে চাকরি করতেন সেই সময় কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে অত চিন্তা করতেন না ৷ ওই প্রফেসর তাঁর জীবনের প্রথম কাজের অভিজ্ঞতার কথাও শেয়ার করেছেন তাঁর সমীক্ষা রিপোর্টে ৷ তিনি উল্লেখ করেন, আমি একটি রেস্তোয়াঁর ওয়েটার হিসাবে কাজ করতাম ৷ সেখানে সহকর্মীদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল ৷ সেসময়ে ওই সম্পর্কের গুরুত্ব না-বুঝলেও, বর্তমানে শিক্ষাবিদ হিসাবে সেই গুরুত্ব তিনি বুঝতে পেরেছেন ৷ ওই অধ্যাপক উল্লেখ করেন, 20 বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি চাকরি করছেন ৷ তাই সেখানে সহকর্মীদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ গড়ে উঠেছে ৷ যা কাজের মান আরও উন্নত করেছে ৷ ওই অধ্যাপকের কথায়, অনেকেই আছেন যাঁরা মনে করেন কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা উচিত নয় ৷ এই চিন্তা ভাবনা কখনওই কাম্য নয় ৷ তিনি বেশ কয়েকধরনের বন্ধুত্বের কথাও উল্লেখ করেন ৷
কর্মক্ষেত্রে বন্ধুত্বের ধরন:
উত্তর আমেরিকানদের প্রায় 30 শতাংশ নাগরিক দাবি করেন, যে কর্মক্ষেত্রে তাঁরা সেরা বন্ধু পেয়েছেন । তবে বন্ধুত্বের রকম ভেদ আছেন ৷ সম্পর্কের নাম 'বন্ধু' হলেও, সবসময় একই সুবিধা পাওয়া যায় না ৷ বিভিন্ন মানুষের উপর সমীক্ষা করে কর্মক্ষেত্রে বন্ধুত্বের ধরণকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে ৷
- কর্মস্থলে কাছের বন্ধু: দীর্ঘ সময় এক সঙ্গে কর্মস্থলে কাটানোর ফলে অনেক সময় দেখা য়ায় সেখানে কোনও সহকর্মীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয় ৷ যারা একে অপরের 'বেস্ট ফ্রেন্ড' হয়ে ওঠেন ৷ ভবিষ্য়তে তাদের মধ্যে কেউ এক জন কর্মস্থল পরিবর্তন করলেও সেই সম্পর্ক থেকে যায় ৷ তাছাড়া একে অপরের কাছের বন্ধু তৈরি হওয়ায় তাদের মধ্যে বিশ্বাস ও ভরসা গড়ে ওঠে ৷ কর্মস্থলের এই বন্ধুত্ব ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেও পৌঁছয় ৷
- কর্মস্থলে ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব: এটিও এক ধরনের বন্ধুত্ব ৷ তবে এটি কাছের বন্ধুর মতো নয় ৷ সহকর্মীরা একে অপরের ঘনিষ্ট বন্ধু হন ৷ কর্মস্থল ছেড়ে দেওয়ার পরেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে ৷
- কাজের জায়গার বন্ধু: এই বন্ধুত্ব শুধুমাত্র অফিস পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকে ৷ তাছাড়া অফিসে আপনি যখন সহকর্মীদের সঙ্গে কফি বা চা-খান তাদের সঙ্গে একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয় ৷
- সহকর্মী পরিচিতি (Co-worker acquaintance): যখন কোনও সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক শধুমাত্র অল্প কথাবার্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে ৷ কখনও কখনও দেখা যায় একে অপরের প্রতি হাসির মাধ্যমে সৌজন্য বিনিময় করেন ৷ এইটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকে সম্পর্ক ৷
- কর্মস্থলে বন্ধুত্বের সুবিধা: অফিসে বা কর্মস্থলে বন্ধুত্ব নিরাপত্তা বোধের সৃষ্টি করে ৷ সহকর্মীদের মধ্যে সুমধুর ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠানের উন্নতিতে প্রভাব ফেলে ৷ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা যদি একে অপরের প্রতি সহানুভুতিশীল হন তবে কর্মস্থলের পরিবেশ ভালো থাকে ৷
- কোনও সম্পর্ক সার্থক: অতিমারির সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হাইব্রিড ও রিমোট মোডে কাজ চালু করায় কর্মীদের মধ্যে সহকর্মীদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি অত্যন্ত জরুরি ৷ যাতে প্রয়োজনে কর্মীরা প্রয়োজনে একে অপরের পাশে থাকতে পারেন ৷ তাকে সাহায্য় করতে পারেন ৷ তবে এক্ষেত্রে কর্মীদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি বাঞ্চনীয় নয় ৷
আরও পড়ুন: মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে ডায়েটে রাখুন এই খাবারগুলি
এই সবই কেবল বন্ধুত্বের ব্যখ্য়া ৷ তবে অনেক সময়েই দেখা যায় কোনও কোনও সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ গড়ে ওঠে না ৷ তবে কখন তা ক্ষতি করা উচিত নয় ৷ এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির থেকে দূরত্ব বজায় রাখার কথা উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক স্টিফেন ফ্রিডম্যান ৷ অনেক সময় দেখা যায়, কর্মস্থলে অপছন্দের মানুষ বা সরহকর্মীকে আমরা গুরুত্ব দিই না ৷ সেইরকম ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক স্টিফেন ৷ তিনি জানান, সেক্ষেত্রে ওই সহকর্মীর যে ব্যবহার ভালো লাগে না সেগুলি এড়িয়ে চলার ৷ একটা বইয়ের উদাহরণ উল্লেখ করে জানান, বই পড়ার সময় যে অংশ ভালো লাগে না তা যেমন এড়িয়ে যাই ৷ সেইকরমই ব্যবহার করুন ওই সহকর্মীর সঙ্গে ৷ যাতে অফিসের পরিবেশ ভালো থাকে ৷