হায়দরাবাদ: মেনোপজ, অর্থাৎ নারীদের একটি বয়সের পর পুরোপুরি মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া । কিন্তু ঋতুচক্র শেষ হওয়ার পরেও কোনও মহিলার যোনি থেকে হালকা বা অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া কখনও কখনও কোনও গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে । এই অবস্থা, পোস্টমেনোপজাল রক্তপাত হিসাবে পরিচিত । এছাড়াও এটি এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারের একটি বিশেষ লক্ষণ হিসাবে বিবেচিত হয় । কিন্তু কোনও নারীর যদি এই সমস্যা হয়, তাহলে তাঁর ক্যানসার হওয়ার কথা নয়, কারণ অনেকসময় হরমোনের পরিবর্তন বা অন্য কোনও সাধারণ ও জটিল সমস্যার কারণেও নারীদের মেনোপজের পরও যোনিপথে রক্তপাতের সমস্যা হতে পারে ।
মেনোপজ এবং প্রি-মেনোপজ: উত্তরাখণ্ডের গাইনোকোলজিস্ট ডাঃ বিজয় লক্ষ্মী (Dr Vijay Lakshmi gynecologist) বলেছেন, "সাধারণত 45 বছর বয়সের পরে, মহিলাদের মেনোপজ হয় । ঋতুস্রাব বা মাসিক বন্ধ হওয়াকে সাধারণ ভাষায় মনোপজ বলা হয় । মেনোপজের আগে, মহিলারা সাধারণত একটি প্রি-মেনোপজাল পর্যায়ে যায় । যেখানে তাঁদের শরীরে অনেক হরমোনের পরিবর্তন হয় । এই সময়কালে, অনেক মহিলা অনেক সমস্যা অনুভব করেন । যেমন অনিয়মিত পিরিয়ড এবং দীর্ঘস্থায়ী পিরিয়ড, কমবেশি রক্তপাত এবং পিরিয়ড চক্রের ঘন ঘন পরিবর্তন । একই সময়ে, যদি কোনও মহিলার বয়সের পরে প্রায় এক বছর মাসিক না হয় তবে এটি মেনোপজ হিসাবে বিবেচিত হয় (Postmenopausal bleeding sign of serious diseases in women) ।
মেনোপজ পরবর্তী রক্তপাতের কারণ: ডাঃ বিজয়লক্ষ্মী ব্যাখ্যা করেছেন যে, কখনও কখনও মেনোপজের পরেও, নির্দিষ্ট পর্যায়ে মহিলাদের কিছু সময়ের জন্য যোনিপথে রক্তপাত হতে পারে । বিশেষ করে যে মহিলারা হরমোন থেরাপি নিচ্ছেন বা ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টোজেন হরমোনের ওষুধ বা সাইক্লিক হরমোন থেরাপি নিচ্ছেন তাঁদের মাঝে মাঝে হালকা রক্তপাত হতে পারে ।
- নীচে কয়েকটি সমস্যার কথা দেওয়া হল
অ্যাট্রোপিক ভ্যাজিনাইটিস (Atrophic vaginitis): মেনোপজের সময় বা পরে হরমোনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে । এটি কখনও কখনও যোনি এবং জরায়ুর টিস্যুতে শুষ্কতা এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে । এটি যৌন মিলনের পরে বা এমনকি সাধারণভাবে যোনি থেকে রক্তপাত হতে পারে ।
এন্ডোমেট্রিয়াল পলিপস (Endometrial polyps): এন্ডোমেট্রিয়াল পলিপ যা জরায়ু পলিপ নামেও পরিচিত ৷ এটি একধরনের টিউমার যা এন্ডোমেট্রিয়ামে অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে হয় । তবে জরায়ুতে একাধিক থাকলে বা বড় হলে মেনোপজের পর রক্তক্ষরণ হতে পারে ।
এন্ডোমেট্রিয়াল অ্যাট্রোফি (Endometrial atrophy): এন্ডোমেট্রিয়াল অ্যাট্রোফিতে শরীরে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মতো হরমোনের কম মাত্রার কারণে মেনোপজের পরে একজন মহিলার জরায়ুর রেখা পাতলা হতে শুরু করে । জরায়ুর আস্তরণ খুব পাতলা হলে যোনিপথে রক্তপাত হতে পারে ।
জরায়ু ফাইব্রয়েড (Uterus fibroids): জরায়ু ফাইব্রয়েড আসলে একধরনর পেশী এবং কোষের ভর । যা একধরনের টিউমার হিসেবে বিবেচিত হয় । এটি সংখ্যায় এক বা একাধিক হতে পারে । একে লিয়ানোমা বা মায়োমাও বলা হয় । এই সমস্যা পোস্টমেনোপজাল মহিলাদের মধ্যে হঠাৎ রক্তপাত হতে পারে ৷
এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়া (Endometrial hyperplasia): এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়া কখনও কখনও মেনোপজের পরে রক্তপাত ঘটাতে পারে ।
এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার (Endometrial Cancer) : এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার বা জরায়ু ক্যানসারের কারণেও মেনোপজের পর যোনিপথে অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে । এটি জরায়ু ক্যানসারের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হিসেবেও বিবেচিত হয় । পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এইধরণের ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় 90% পোস্টমেনোপজাল মহিলাদের যোনিপথে রক্তপাত হয় ।
- উপসর্গগুলি উপেক্ষা করবেন না
ডাঃ বিজয় লক্ষ্মী বলেছেন, "মহিলারা যদি মেনোপজের পরে হালকা রক্তপাত অনুভব করেন তবে তাঁদের অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা এবং তাঁদের স্বাস্থ্যের একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ ক্লিনিকাল পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু নারীর দীর্ঘসময় ধরে পিরিয়ড হয় না, যাকে অনেকসময় মেনোপজ বলে মনে করেন ।"
ডাঃ বিজয় লক্ষ্মী পরামর্শ দেন যে, কারণ যাই হোক না কেন, মেনোপজের পরে জরায়ুর দাগ বা অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যাকে একেবারেই উপেক্ষা করা উচিত নয় এবং অবিলম্বে একজন ডাক্তারের দ্বারা পরীক্ষা করা উচিত এবং চিকিত্সা করা উচিত । এছাড়াও, মহিলাদের জন্য বার্ষিক প্যাপ স্মিয়ার বা অন্যান্য পরীক্ষা করানো বা তাঁদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সহায়ক হতে পারে । কারণ সমস্যার প্রথম লক্ষণ দেখা মাত্রই চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে ।